চার নম্বর ব্যাটসম্যানের খোঁজও পেয়ে গেলেন কোহালিরা। ছবি: পিটিআই।
নয় বছর পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আবার এমন একটা মাঠে ফিরল, যাকে ভারতের প্রথম পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম বলা যায়। আর ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখলেন স্থানীয় এক ক্রিকেটার। তিনি— রোহিত শর্মা।
রোহিতের ব্যাটিং নিয়ে একটা কথা পরিষ্কার বলে দেওয়া যায়। রোহিত যে দিন খেলে, সে দিন আর কারও খেলা দেখতে ভাল লাগে না। খুব ভাল ছন্দে আছেন। অস্ট্রেলিয়াগামী টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়ার পরে ওর আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গিয়েছে। রোহিতের ১৩৭ বলে ১৬২ রানের ইনিংসে একটাই অক্রিকেটীয় শট আছে। দেড়শো পার হওয়ার পথে জেসন হোল্ডারকে মারা একটা স্কুপ শট।
অস্ট্রেলিয়া সফরে রোহিতকে টেস্ট দলে ফেরানোর পিছনে শুনলাম বলা হয়েছে, ওঁর ব্যাকফুটে খেলাটা খুব শক্তিশালী। অস্ট্রেলিয়ার পিচে যা কাজে আসবে। ঠিক কথা। রোহিতের মতো ব্যাকফুটে শক্তিশালী ব্যাটসম্যান খুব কমই আছে। সোমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেটা আবারও বোঝা গেল। ওঁর প্রিয় পুল শটটা খুব একটা মারেননি। কিন্তু ব্যাকফুটে ড্রাইভগুলো মুগ্ধ হয়ে দেখার মতো।
রোহিত এবং শিখর ধওয়নের জুটিটা ভাল শুরু দিল। যদিও প্রায় অবিশ্বাস্য ভাবে বিরাট কোহালি (১৬) রান পেলেন না। ডন ব্র্যাডম্যান রান না পাওয়ায় এক বার কাগজের শিরোনামে এসেছিলেন। কোহালিও এখন সেই জায়গায় পৌঁছে গিয়েছেন, যেখানে ভারত অধিনায়কের রান পাওয়াটা আর খবর নয়। রান না পাওয়াটাই খবর। কোহালিকে আউট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারেরা এমন লাফালাফি শুরু করেছিলেন, যে মনে হচ্ছিল ম্যাচ জিতে গিয়েছেন। ক্যারিবিয়ানদের হারিয়ে দিয়ে গেল রোহিতের হিট-শো। সঙ্গে অবশ্যই অম্বাতি রায়ডুর (৮১ বলে ১০০) ব্যাটিং। দু’জনের যুগলবন্দিতে ভারত এক বার পাঁচ উইকেটে ৩৭৭ রান তুলে দেওয়ার পরেই ম্যাচের ভাগ্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল।
আরও পড়ুন: আরব সাগরের তীরে রো-হিট ঝড়ে কুপোকাত ক্যারিবিয়ানরা
আরও পড়ুন: ‘সেঞ্চুরির কথা মাথাতেই ছিল না, দলকে ভাল জায়গায় এনে দেওয়ার পরিকল্পনাই ছিল’
এর পরে কুলদীপ যাদব এবং কোহালির দুটো দুর্দান্ত রান আউটের পরে ক্যারিবিয়ানদের আর কিছু করার ছিল না। শেষ হয়ে গেল ১৫৩ রানে। যা রোহিতের একার ইনিংসের চেয়েও কম। কোহালি রান পাননি ঠিকই, কিন্তু যে রান আউটটা করলেন, সেটা তাঁর ব্যাটিংয়ের মতোই সুন্দর। শর্ট এক্সট্রা কভারে দাঁড়িয়ে মার্লন স্যামুয়েলসের মারা শটটা ধরে, রিভার্স ফ্লিকে নন স্ট্রাইকার এন্ডে থাকা পাওয়েলকে রান আউট করলেন। যে বল উইকেটে লাগার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। কিন্তু কোহালি অতিমানবীয় কাজ করবেন না তো কে করবেন!
মুম্বইয়ে ভারত শুধু সিরিজে ২-১ এগিয়েই গেল না, খুব সম্ভবত বিশ্বকাপ নিয়ে কয়েকটা জরুরি প্রশ্নের জবাবও পেয়ে গেল। ধওয়ন আস্তে আস্তে ছন্দে ফেরায় ওপেনিং জুটি জমছে। সেই সৌরভ-সচিন, গম্ভীর-সহবাগের আমল থেকে আমাদের বাঁ হাতি-ডান হাতি জুটি ওয়ান ডে-তে সাফল্য পেয়ে আসছে। ধওয়ন-রোহিতকে নিয়েও আশাবাদী হওয়া যায়।
একই সঙ্গে চার নম্বর ব্যাটসম্যানের খোঁজও পেয়ে গেলেন কোহালিরা। চলতি সিরিজে খারাপ খেলছিলেন না রায়ডু। ব্রেবোর্নের এই সেঞ্চুরি খুব সম্ভবত তাঁর হাতে বিশ্বকাপের বোর্ডিং পাসটা তুলে দিয়ে গেল। পাশাপাশি এক জন বাঁ হাতি পেসারের খোঁজও বোধ হয় পেয়ে গেল ভারত। খলিল আহমেদ যা বলটা করলেন এ দিন, তাতে এই জায়গাটা নিজের দখলে রাখার দিকে অনেকটাই এগোলেন। এত দিন একটা ধারণা ছিল বাঁ হাতি খলিল বলটা ডান হাতি ব্যাটসম্যানদের বাইরের দিকেই বার করতে পারেন। এ দিন দেখা গেল, হঠাৎ হঠাৎ ভিতরেও নিয়ে আসছেন বলটা। যা সমস্যায় ফেলে দিল ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংকে।
স্কোরকার্ড
ভারত ৩৭৭-৫ (৫০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৫৩ (৩৬.২)
ভারত
রোহিত ক হেমরাজ বো নার্স ১৬২ • ১৩৭
ধওয়ন ক কে. পাওয়েল বো পল ৩৮• ৪০
কোহালি ক হোপ বো রোচ ১৬ • ১৭
রায়ডু রান আউট ১০০• ৮১ ধোনি ক হেমরাজ বো রোচ ২৩• ১৫
কেদার ন.আ ১৬• ৭
জাডেজা ন.আ ৭• ৪
অতিরিক্ত ১৫
মোট ৩৭৭-৫ (৫০)
পতন: ১-৭১ (ধওয়ন, ১১.৫), ২-১০১ (বিরাট, ১৬.৪), ৩-৩১২ (রোহিত, ৪৩.৫), ৪-৩৪৪ (রায়ডু, ৪৭.১), ৫-৩৫৫ (ধোনি, ৪৮.৩)।
বোলিং: কেমার রোচ ১০-০-৭৪-২, জেসন হোল্ডার ৯-০-৬২-০, অ্যাশলি নার্স ৮-০-৫৭-১, কিমো পল ১০-০-৮৮-১, রভম্যান পাওয়েল ৪-০-২৩-০, ফ্যাবিয়েন অ্যালেন ৮-০-৫২-০, মার্লন স্যামুয়েলস ১-০-১৪-০।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
হেমরাজ ক রায়ডু বো ভুবনেশ্বর ১৪ • ১৬ কে.পাওয়েল রান আউট ৪ • ১২
শেই হোপ রান আউট ০ • ২
স্যামুয়েলস ক রোহিত বো খলিল ১৮• ২৩
হেটমায়ার এলবিডব্লিউ খলিল ১৩• ১১
আর পাওয়েল বো আহমেদ ১• ৯
হোল্ডার ন.আ ৫৪• ৭০
অ্যালেন ক রোহিত বো কুলদীপ ১০• ১৭
অ্যাশলি নার্স ক রোহিত বো কুলদীপ ৮• ১৩
পল স্টা. ধোনি বো জাডেজা ১৯• ১৮ কেমার রোচ বো কুলদীপ যাদব ৬• ২৭
অতিরিক্ত ৬
মোট ১৫৩ (৩৬.২)
পতন: ১-২০ (হেমরাজ, ৪.২), ২-২০ (হোপ, ৪.৪), ৩-২০ (কে. পাওয়েল, ৫.২), ৪-৪৫ (হেটমায়ার, ৯.৩), ৫-৪৭ (আর. পাওয়েল, ১১.৩), ৬-৫৬ (স্যামুয়েলস, ১৩.৪), ৭-৭৭ (অ্যালেন, ১৮.৫), ৮-১০১ (নার্স, ২২.৪), ৯-১৩২ (পল, ২৭.৫), ১০-১৫৩ (রোচ, ৩৬.২)।
বোলিং: ভুবনেশ্বর কুমার ৫-১-৩০-১, যশপ্রীত বুমরা ৮-১-২৫-০, খলিল আহমেদ ৫-০-১৩-৩, রবীন্দ্র জাডেজা ১০-১-৩৯-১, কুলদীপ যাদব ৮.২-০-৪২-৩।
২২৪ রানে জয়ী ভারত
ম্যাচের সেরা রোহিত শর্মা