সেমিফাইনালে উঠে সেরিনা। ছবি: এএফপি
আরও একটা উইম্বলডন ফাইনাল উইলিয়ামস বোনেদের ঘরোয়া অনুষ্ঠান হয়ে ওঠা থেকে সেরিনা এবং ভেনাস মাত্র এক ম্যাচ দূরে। এর আগে যেটা চার বার ঘটেছে। শেষটা সাত বছর আগে ২০০৯-এ। মঙ্গলবার দুই বোনই কোয়ার্টার ফাইনাল জিতলেন স্ট্রেট সেটে। ভেনাসের জয়ের তাৎপর্য অবশ্যই বেশি। ২০০৯ উইম্বলডন আর সব মিলিয়ে গ্র্যান্ড স্ল্যামে ২০১০-এর পরে (যুক্তরাষ্ট্র ওপেন) এই প্রথম শেষ চারে উইলিয়ামসদের বড় বোন। কী আশ্চর্য! রিচার্ড উইলিয়ামসের এক মেয়ের বয়স চৌত্রিশ, অন্য জনের ছত্রিশ। কোথায় গ্র্যান্ড স্ল্যামে মেয়েদের টেনিসের নতুন প্রজন্ম?
কেন? এলিনা ভেসনিনা!
সানিয়া মির্জার প্রাক্তন রুশ ডাবলস পার্টনার জীবনের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলস সেমিফাইনালে উঠলেন এগারো বছরের চেষ্টায়। উইম্বলডনে। মঙ্গলবারের আগে কোনও মেজরেই যাঁর চতুর্থ রাউন্ডের বেশি টপকানোর নজির ছিল না। সিঙ্গলস থেকে প্রায় হারিয়ে গিয়েছিলেন। আপাতত র্যাঙ্কিং ৫০। মূলত ডাবলস স্পেশ্যালিস্ট হিসেবে পেশাদার ট্যুরে বরাবরের পরিচিত। গোটা দুয়েক গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেতাব জেতা ছাড়াও গত বারই উইম্বলডন ডাবলস ফাইনাল খেলেছেন। এ বারও ডাবলস-মিক্স়ড ডাবলসে যথেষ্ট উঁচুর দিকে বাছাই ভেসনিনা।
কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে সিঙ্গলস সেমিফাইনালে ২৯ বছরের মেয়ে একেবারে সেরিনার সামনে! অন্য সেমিফাইনালে ভেনাস মুখোমুখি অস্ট্রেলীয় ওপেন চ্যাম্পিয়ন কের্বারের। সেমিফাইনালে ওঠার পথে ভেসনিনা তাঁর ডাবলস পার্টনার মাকারোভাকে যেমন হারিয়েছেন, তেমন এ দিন স্ট্রেট সেটে ছিটকে দিলেন আগের ম্যাচে তৃতীয় বাছাই রাডওয়ানস্কা বধ করা সিবুলকোভার মতো হেভিওয়েটকে। সোচির পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি, ৬৫ কেজির গড়পড়তা চেহারার টেনিস কন্যা হঠাৎ-ই ঐতিহ্যশালী গ্র্যান্ড স্ল্যামের শিরোনামে!
উইম্বলডন অবশ্য কোর্টের বাইরের নানা ঘটনাতেও মঙ্গলবার ঘটনাবহুল। লন্ডনের মুষলধার বৃষ্টির ধাক্কায় নতুন সূচিতে পরপর তিন দিন খেলতে বাধ্য হওয়া সেরিনা গতকাল ভেজা সেন্টার কোর্টে প্রি-কোয়ার্টার ম্যাচে পা পিছলে পড়ে যাওয়ায় এ দিন অল ইংল্যান্ড ক্লাবকে মামলা করার হুমকি দেন। ‘‘গতকাল পা পিছলে যদি চোট পেতাম তা হলে এতক্ষণে উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে মামলাটা করেই দিতাম,’’ কোয়ার্টার ফাইনাল জয়ের প্রসঙ্গ ছেড়ে এটাই আজ প্রথমে বলেন সেরিনা।
সেরিনার মতোই এ বার খেতাবের হটফেভারিট পুরুষ তারকা অ্যান্ডি মারে আবার বুধবার জো সঙ্গার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল যুদ্ধের চব্বিশ ঘণ্টা আগে এ দিন আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন তাঁর ফিটনেস ট্রেনিং আর ডায়েটের কথা ফাঁস করে।
বিলেতের বিখ্যাত দৈনিকে বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন উইম্বল়ডন চ্যাম্পিয়ন বলেছেন, ‘‘পিঠে অস্ত্রোপচারের পরেও আমার এই একশো ভাগ ফিটনেসের পিছনে জাইরোটনিক যোগাভ্যাস। এটাকে সাধারণত ডান্সারদের যোগাভ্যাস বলা হয়ে থাকে। প্রাচীন কালে এক রোমানিয়ান-জাত হাঙ্গেরিয়ান ডান্সার এটার আবিষ্কর্তা। পাহাড়ি মেলায় তিনি অক্টোপাস, বিড়ালের সাজ করে এই যোগাভ্যাসে নাচতেন।’’
আর মারের নতুন ডায়েট? ‘‘ব্রেকফাস্টে ঝুরো ডিম আর পিনাট বাটারের সঙ্গে একটা আস্ত তরমুজ খাই। ম্যাচের আগে লাঞ্চে মেনু স্যালমন মাছ আর ভাত। ম্যাচের পরে ডিনারে পাস্তা আর সেদ্ধ চিকেন,’’ বলেছেন তিনি।
উইম্বলডনে হটফেভারিটের চাপ সামলাতে নাকি ম্যাচ না থাকার দিন মারে বাড়িতে স্ত্রী কিম সিয়ার্সকে রান্নাঘরে ডিশ ধুয়ে সাহায্য করছেন। গাড়িতে নিজেই পেট্রল ভরছেন ড্রাইভারকে ভরতে না দিয়ে। এমনকী ইউরোয় ওয়েলসকে ‘ফলো’ করছেন মন দিয়ে। ‘‘বুধবার আশা করি ওয়েলশ-পর্তুগাল সেমিফাইনালের আগেই আমার কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে বাড়ি ফিরতে পারব। যাতে টিভিতে পুরো ইউরো দেখতে পারি,’’ বলেন ব্রিটেনের টেনিস মহাতারকা। এ সবের মধ্যে আজ নিঃশব্দে মিক্স়ড ডাবলস থেকে প্রথম ম্যাচেই বিদায় নিয়েছেন শীর্য বাছাই সানিয়া মির্জা ও তাঁর ক্রোট সঙ্গী ডডিগ।