সোজাসাপ্টা: সতীর্থদের ওপর আস্থা পাঠানের। —ফাইল চিত্র।
চোদ্দো বছর আগে অ্যাডিলেডে যখন সৌরভের টিম ইন্ডিয়ার হয়ে তিনি টেস্ট অভিষেক ঘটাচ্ছেন, স্টার্কের বয়স ১৩। সেই সময় ক্রিকেট বিশ্ব মনে করেছিল, দুনিয়া শাসন করা বাঁ হাতি পেসার পেয়ে গিয়েছে ভারত। ভাগ্য স্টার্ক-কে চলতি সিরিজ থেকে ছিটকে দিল। তারও অনেক আগে পাঠান-কে কক্ষচ্যূত করে দেয় স্টার্কদের মহাতারকার গ্রহ থেকে।
ইরফান ভারতের হয়ে শেষ টেস্ট খেলেছেন ২০০৮ সালে। নীল জার্সিতে শেষ এক দিনের ম্যাচ ২০১২-তে। এ বারে আইপিএল নিলামে বিক্রি হননি। তবু এখনও হাল ছাড়তে নারাজ। ‘‘বিজয় হজারেতে বল করে আমি খুশি। লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। সুইংটা ফেরত এসেছে বলে আমি আশাবাদী।’’ বিজয় হজারেতে তাঁকে দেখছেন এমন কয়েক জন সত্যিই বলছেন, ‘‘পাঠান আগের মতো সেই বড় বড় সুইং পাচ্ছে। গতিটা ঠিক করতে হবে।’’
এখনও খুব মন দিয়ে দেখেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। যে কারণে একটুও না ভেবে বলে দিতে পারছেন এই মুহূর্তে বিশ্বের দুই সেরা বাঁ হাতি পেসারের নাম। ‘‘অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ও নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্ট।’’ স্টার্কের না থাকাটা কতটা তফাত করে দিতে পারে? দিল্লিতে বিজয় হজারের নক-আউট পর্বের ম্যাচ শুরু হচ্ছে রবিবার থেকে। রাজধানী থেকেই ফোনে ইরফান শুক্রবার রাতে আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘প্রত্যেক দলেই এক জন বিস্ফোরক বোলার থাকে। যাকে নিয়ে প্রতিপক্ষ বেশি চিন্তা করে। স্মিথদের জন্য স্টার্ক ছিল সে রকম বোলার।’’ তবে স্টার্কের অনুপস্থিতিই সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণ করে দিল, এমন ভাবনায় আচ্ছন্ন হতে নারাজ তিনি। বললেন, ‘‘স্টিভ স্মিথদের জন্য এটা একটা বড় ধাক্কা, সন্দেহ নেই। তবে বেঙ্গালুরুতে চেতেশ্বর পূজারা আর অজিঙ্ক রাহানে দারুণ খেলে দিয়েছে স্টার্ককে। ওকে মোটেও ভয়ঙ্কর হতে দেয়নি। আমি তাই নিশ্চিত স্টার্ক থাকলেও আমাদের ব্যাটসম্যানরা ঠিক খেলে দিত।’’
স্টার্ক-কে এই প্রজন্মের অন্যতম সেরা মানলেও অস্ট্রেলিয়ার অন্য মিচেলের সঙ্গে তুলনা করতে নারাজ ইরফান। ‘‘মিচেল জনসন প্রতিপক্ষকে আতঙ্কিত করে তুলত। স্টার্ক এক্সপ্রেস গতিতে ফুল লেংথ বল করতে পারে বলে ভয়ঙ্কর। কিন্তু জনসনের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না এখনই।’’ তাঁর দেখা সর্বকালের সেরা বাঁ হাতি পেসার? একটুও ভাবতে হয় না ইরফান-কে। বলে দেন, ‘‘ওয়াসিম আক্রম।’’ অভিষেকের অস্ট্রেলিয়া সফরে ওয়াসিম নিজে তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা এখনও ভোলেননি।
বাঁ হাতিদের খেলতে গিয়ে কেন সমস্যা হয় ব্যাটসম্যানদের? ইরফানের ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা বিশেষ কোণ তৈরি করতে পারি। ব্যাটসম্যানদের চেস্ট ওপেন স্টান্স নিয়ে দাঁড়াতে হয়। অনেক তারতম্য ঘটাতে হয় টেকনিকে। এ সব কারণেই খেলা কঠিন হয়।’’ একটা সময় ছিল যখন তিনি, রুদ্রপ্রতাপ সিংহ এবং জাহির খান— তিন জনে এক সঙ্গে প্রথম একাদশে খেলেছেন। টিমে তিন জন পেসারের তিন জনই বাঁ হাতি। এখন ভারতীয় টেস্ট দলে এক জনও বাঁ হাতি নেই। এর কারণ কী?
ইরফানকে জিজ্ঞেস করায় বললেন, ‘‘কিছু কিছু ঘটনা ঘটে, যার কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না।’’ স্টার্ক নেই। হায়, জাহির-ইরফানদের দেশের হাতেও যে স্টার্কের উত্তর নেই!