এক দিনে ২৩ উইকেটে পিচ নিয়ে ধুন্ধুমার

বোর্ডের ভাবনাটা ভাল কিন্তু চাই পিচ নিয়ে কড়া নজরদারি

নিজেদের খেলোয়াড় জীবন থেকেই একটা কথা শুনে আসছি। তা হল— ভারতীয় ক্রিকেটাররা দেশের মাটিতে বাঘ। কিন্তু বিদেশে খেলতে গেলেই বিড়াল! এই ধারণাটা মুছে দেওয়ার জন্যই এ বছর রঞ্জি ট্রফি নিরপেক্ষ মাঠে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বোর্ড। উদ্দেশ্যটা খুব পরিষ্কার।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪২
Share:

নিজেদের খেলোয়াড় জীবন থেকেই একটা কথা শুনে আসছি। তা হল— ভারতীয় ক্রিকেটাররা দেশের মাটিতে বাঘ। কিন্তু বিদেশে খেলতে গেলেই বিড়াল!

Advertisement

এই ধারণাটা মুছে দেওয়ার জন্যই এ বছর রঞ্জি ট্রফি নিরপেক্ষ মাঠে খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বোর্ড। উদ্দেশ্যটা খুব পরিষ্কার। বিদেশে খেলতে গিয়ে প্রতিকূল পরিবেশ এবং পিচ— সব কিছুর সঙ্গেই যাতে মানিয়ে নিতে পারে ক্রিকেটাররা।

কিন্তু সোমবার লাহলিতে বাংলা-বরোদা ম্যাচে যা হতে দেখলাম তাতে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। গোটা দিনে দু’দল মিলিয়ে উইকেট পড়ল ২৩টা। ম্যাচের প্রথম দিনেই বরোদার দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হয়ে পড়েও গেল তিন উইকেট! সকাল থেকেই খবর পাচ্ছিলাম লাহলিতে বরোদার বিরুদ্ধে বল হাতে আগুন ঝরাচ্ছে দিন্দা। তখনই মনে হচ্ছিল, বাংলার ব্যাটিংয়ের সময়ও অঘটন না ঘটে। লাহলির তো কুখ্যাতি আছেই।

Advertisement

সব কিছু দেখার পর মনে হচ্ছে, বোর্ড যে উদ্দেশ নিয়ে নিরপেক্ষ মাঠে রঞ্জি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তার হয়তো ঠিকঠাক প্রয়োগ হচ্ছে না। এটাই বুঝে পাচ্ছি না লাহলিতে রঞ্জি ম্যাচ দেওয়ার কী দরকার ছিল! গোটা ভারতের ক্রিকেট মহল জানে লাহলির উইকেটে যে কোনও ম্যাচ তিন দিনে শেষ হয়ে যায়। হরিয়ানা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের এই স্টেডিয়ামের পিচ শুধু যে সবুজ তা নয়, ওখানকার আর্দ্রতাও একটা বড় ফ্যাক্টর। খোঁজখবর নিয়ে এটাও জানতে পারছি যে বাংলা-বরোদা ম্যাচ যে পিচে খেলা হচ্ছে, তাতে ইঞ্চি ছ’য়েক ঘাস রয়ে গিয়েছিল। যার ফলে বল অদ্ভুত ভাবে মুভ করতে শুরু করে প্রথম দিন থেকেই। নিট ফল— এক দিনে ২৩ উইকেট।

লাহলির উইকেটের এই চরিত্র একমাত্র বুঝতে পারে হরিয়ানা রঞ্জি টিমের ব্যাটসম্যানরা। আর কেউ নয়। আমি নিশ্চিত হরিয়ানা খেললে এ রকম খারাপ পিচ বানাতেন না সংগঠকরা। একটা ভাল ম্যাচ এই পিচে হওয়া প্রায় অসম্ভব। অথচ সেখানেই ম্যাচ দেওয়া হচ্ছে। লাহলির ম্যাচগুলোকে কি ধর্মশালা বা বিলাসপুরে সরিয়ে দেওয়া যায় না?

আমার মতে একটা ভাল সিদ্ধান্ত স্রেফ সমালোচনার মুখে পড়ছে সঠিক প্রয়োগের অভাবে। বিষয়টা নিয়ে বোর্ডের এখনই ভাবা দরকার বলে আমি অন্তত মনে করি। যেখানে যেখানে ম্যাচ হচ্ছে, সেখানে চাই বোর্ডের পিচ নিয়ে কড়া নজরদারি।

কারণ, লাহলির মতো পিচে খেলা হলে ক্রিকেটারদের কোনও উন্নতিই হবে না। রঞ্জি ট্রফিতে সব প্লেয়ার চায়, ভাল কিছু পারফর্ম করে নির্বাচকদের চোখে পড়তে। এই যে সোমবার দু’ইনিংস মিলিয়ে দিন্দা সাত উইকেট নিল, বাংলার ব্যাটিংয়ের সময় বরোদার অতীত শেঠ নামের পেসার ৩৬ রানে ৭ উইকেট নিয়ে হইচই ফেলে দিল— এতে ওদের কী লাভ হবে। না উঠবে নির্বাচকদের খাতায় নাম। না ভাল উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা বাড়বে। ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ওরাও ভাল উইকেটে খেলার জন্য তৈরি হতে গিয়ে উল্টে হোঁচট খাচ্ছে।

আরও একটা কারণে বোর্ড নিরপেক্ষ মাঠে রঞ্জি করার সিদ্ধান্ত নেয়। কোনও টিম যাতে হোম অ্যাডভান্টেজের সুবিধা নিয়ে পছন্দ মতো উইকেট না বানাতে পারে। কিন্তু লাহলির মতো ভেনু যদি বাছা হয়, তা হলে কাজের কাজ কিছুই হবে বলে মনে হয় না। এই সব মাঠে খেলা আর লটারি পাওয়া একই কথা। বোর্ডকে এ দিকে নজর দিতেই হবে।

ব্যক্তিগত ভাবে আমার একটা প্রস্তাব আছে। যদি বোর্ডের উদ্দেশ্য হয় সব রকমের পিচে ক্রিকেটারদের তৈরি রাখা, তা হলে হোম-অ্যাওয়ে লিগ হোক। এক জন পিচ অবজার্ভার থাকুক। যে ঠিক করে দেবে, কী ধরনের উইকেট হবে। সেটা হোম টিম না মানলে কড়া জরিমানা করা হোক। এতে করে ঘরোয়া ক্রিকেটে দর্শকটাও বাড়বে। যতদূর জানি, ঘরোয়া ক্রিকেটে আগে যা দর্শক হত, এখন কিছুই হচ্ছে না। হোম টিমের খেলা দেখতে অন্তত কিছু লোক তো আসে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন