বেকসুর খালাস হলেও কিন্তু মাঠে ফেরা কঠিন শ্রীসন্তদের পক্ষে

শনিবার বিকেলে পাটিয়ালা কোর্টের রায়ের খবর শুনে মনে পড়ে গেল সেই দিনটার কথা। যে দিন রীতিমতো ঢাক ঢোল পিটিয়ে দিল্লি পুলিস সাংবাদিকদের ডেকে একের পর এক ভিডিও ক্লিপিংস দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল, কী ভয়ঙ্কর এক ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে শ্রীসন্ত, অজিত, অঙ্কিতরা। পাশাপাশি রাগও হয়েছিল এই ভেবে যে, কী করল ছেলেগুলো!

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৫
Share:

মুক্তির মেজাজ। আদালত চত্বরে চাণ্ডিলা ও অঙ্কিত। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়া

শনিবার বিকেলে পাটিয়ালা কোর্টের রায়ের খবর শুনে মনে পড়ে গেল সেই দিনটার কথা। যে দিন রীতিমতো ঢাক ঢোল পিটিয়ে দিল্লি পুলিস সাংবাদিকদের ডেকে একের পর এক ভিডিও ক্লিপিংস দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিল, কী ভয়ঙ্কর এক ফিক্সিং কাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে শ্রীসন্ত, অজিত, অঙ্কিতরা। পাশাপাশি রাগও হয়েছিল এই ভেবে যে, কী করল ছেলেগুলো!
দিল্লি পুলিশ যখন এত প্রমাণ জোগাড় করে আটঘাট বেঁধে ওদের বিরুদ্ধে নেমেছিল, মুখে কালো কাপড় জড়িয়ে অপরাধীর মতো শ্রীসন্তদের গ্রেফতার করে ধাক্কা মারতে মারতে নিয়ে গিয়েছিল, তখন তো তা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না! এমন এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা যখন ঘটল, তখন ধরে নিতে হবে এর মধ্যে কিছু না কিছু আছে। পরে দিল্লিতে গিয়ে শুনেছিলাম আরও অনেক গল্প। শ্রীসন্তকে নিয়ে আর কী কী ভিডিও, অডিও পুলিস খুঁজে বার করেছে, কী ভাবে সেগুলোকে নিয়ে কেস সাজানো হচ্ছে ইত্যাদি। সে সব শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।
কিন্তু শনিবার জানতে পারলাম আদালতে দিল্লি পুলিসের সেই সব অভিযোগ, প্রমাণ প্রায় উড়িয়েই দেওয়া হয়েছে! খোঁজ নিয়ে জানলাম, স্পট ফিক্সিং নিয়ে আমাদের দেশে কোনও নির্দিষ্ট আইন নেই। সে জন্যই বোধহয় আদালতে পুলিশের অভিযোগ ধোপে টিকল না। এখানে কয়েকটা প্রশ্ন উঠে আসছে।
এক, তা হলে দিল্লি পুলিশ এই ক’বছরে কীসের ভিত্তিতে এগোল?

Advertisement

দুই, আদালতে গ্রহণযোগ্য নয়, এমন প্রমাণ পেশ করেই বা তারা কেন বিচার চাইতে গেল?

তিন, পাটিয়ালা আদালতে শ্রীসন্তরা বেকসুর খালাস হওয়ায় কি প্রমাণিত হল, ওরা স্পট ফিক্সিংয়ে কোনও দিন জড়িত ছিল না?

Advertisement

সন্ধ্যায় জানতে পারলাম, বিসিসিআই সাফ জানিয়ে দিয়েছে, শ্রীসন্ত আর অঙ্কিতের উপর থেকে নির্বাসন তোলা হচ্ছে না। কী কারণে এই সিদ্ধান্ত, সেটাও বলেছে বিসিসিআই। শাস্তিটা বোর্ডের নিজস্ব আইন মেনে দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি মামলার সঙ্গে যে হেতু এর কোনও সম্পর্ক নেই, তাই আদালতের রায়ে বোর্ডের সিদ্ধান্তে কোনও প্রভাব পড়বে না। আসলে আদালত অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের বেকসুর খালাস করে দিয়েছে শুধুমাত্র প্রমাণের অভাবে। যে ধরনের প্রমাণ পেশ করলে ওদের দোষী সাব্যস্ত করা যেত, আদালতে গ্রহণযোগ্য সেই সব প্রমাণ পুলিশ পেশ করতে পারেনি বলেই মিডিয়ায় খবর।

আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, ওদের বেকসুর খালাস করা হচ্ছে, সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে, অন্য কোনও কারণে নয় কিন্তু। ওরা যে দোষী নয়, তা বোধহয় একবারও বলা হয়নি। তাই এটা ধরে নেওয়ার কোনও কারণ নেই যে, ওরা স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত ছিল না। সে জন্যই বোর্ড তাদের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে বলেই আমার ধারণা। যে মামলায় অভিযোগের সপক্ষে যথার্থ সাক্ষ্য প্রমাণ দেওয়া হয়নি, সেই মামলার রায়ের উপর ভিত্তি করে নির্বাসন তুলে নেওয়ার মতো এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবেই বা কেন? জানি একজন ক্রিকেটারের মাথায় নির্বাসিত-র তকমা লাগিয়ে দেওয়া সেই ক্রিকেটারের পক্ষে সবচেয়ে বড় শাস্তি। কিন্তু ওরা যা করেছে বলে অভিযোগ, সেটা তো প্রতারণা। বিসিসিআই নিশ্চয়ই মনে করে, এই অভিযোগটা সত্যি। তাই ওরা ওদের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে।

এই অবস্থায় এক জন ক্রিকেটার যদি ফিরে আসার সুযোগও পায়, তা হলে কতদূর কী করতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে। আর এখানে তো শ্রীসন্তদের সামনে সেই রাস্তাটাও খোলেনি। তাই যতই আদালতের রায় ওদের পক্ষে যাক না কেন, ক্রিকেট মাঠে শ্রীসন্তদের অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন