‘‘...শনিবার রাতে অশ্বিনের বোলিং দেখলাম কিছুক্ষণ। গত কাল অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ ছিল, ব্যস্তও ছিলাম। তবু কিছুটা দেখেছি।
সত্যি বলতে, গত এক-দেড় বছর ধরে অশ্বিন যে বোলিংটা করে যাচ্ছে, তার তুলনা নেই। একজন ক্লাস অফস্পিনার বলতে যা বোঝায়, ও এখন তাই। আমাদের দেশে এল গত বছর। একা শেষ করে দিল। নিজের দেশে ফিরল। দক্ষিণ আফ্রিকাকে শেষ করে দিল। যে কোনও কারণেই হোক, মাঝে একটা সময় ওকে একটু অফ লেগেছিল আমার। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজে কী বলটাই না করছে! ভাবা যায়, সাবাইনা পার্কের প্রথম দিনের পিচে পাঁচ উইকেট নিয়ে চলে যাচ্ছে!
অশ্বিনের কোন জিনিসটা দেখে সবচেয়ে ভাল লাগে জানেন? নিজের অফস্পিনের উপর ভরসা রাখাটা। ক্রিকেট খেলতাম যখন, নিজেকে একটা কথা বরাবর বলতাম আমি। যে, তুমি অফস্পিনার। ব্যাটসম্যানকে বধ করার চেষ্টা করবে অফস্পিনে। একান্ত না হলে তখন ভেরিয়েশনে যাবে। আমার রেকর্ডটা ঘাঁটলে দেখা যাবে যে, আটশো উইকেটের নব্বই শতাংশ অফস্পিনে পাওয়া। দেখে ভাল লাগে যে, অশ্বিনও এখন ঠিক সেটাই করে। লাইন-লেংথ ঠিক রেখে শুধু অফস্পিন করায়। গতি পাল্টায়। এটা যদি কেউ ঠিকঠাক করতে পারে, ব্যাটসম্যানের পক্ষে তাকে সামলানো খুব কঠিন।
এক-এক সময় মনে হয়, আমার আটশো টেস্ট উইকেটের রেকর্ড যদি কেউ ভাঙতে পারে তা হলে অশ্বিনই পারবে। অনেকের বিশ্বাস না হলেও আমার কিছু করার নেই। কারণ ঠিক এটাই আমার মনে হয়।
একটা হিসেব দিই। ওর বয়স কত? উনত্রিশ-ত্রিশ? চৌত্রিশ নম্বর টেস্ট খেলছে সবে। যদি এ রকম ফর্ম আর ফিটনেস রাখতে পারে, অন্তত ছ’সাত বছর আরও খেলবে। চৌত্রিশ টেস্টে এখনই ওর একশো আশির উপর উইকেট। সে খেলবে না একশোর বেশি টেস্ট?
আমার তো মনে হয়, কিছু না হলেও অশ্বিন একশো কুড়িটা টেস্ট খেলবে। যে ভাবে ম্যাচের পর ম্যাচ পাঁচ উইকেট করে তুলে যাচ্ছে, তাতে উইকেটের সংখ্যাটা স্বাভাবিক ক্যালকুলেশনে ছ’শোর উপর চলে যাচ্ছে। এর পর ধরা যাক কুম্বলের ইমপ্যাক্ট। ওকে যে কোচ করে এনেছে ভারত, এতে সবচেয়ে বেশি লাভ হবে অশ্বিনের। ওকে আরও ধারালো করে দেবে কুম্বলে।
সবচেয়ে বড় কথা, ভাল স্পিন খেলার মতো ব্যাটসম্যান কোথায় এখন? হাতেগোনা তিন-চারটে নামের বাইরে কাউকে পাওয়া যাবে না। অশ্বিনকে খেলবে কে? এখনকার উইকেটের চরিত্রও তো আগের মতো নেই। নিজে খেলার সময় দেখতাম, উপমহাদেশে স্পিন আর ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় পেস সহায়ক উইকেট অপেক্ষা করছে। এখন আর সে সব হয় না। ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার উইকেট অনেক পাল্টে গিয়েছে। ওখানেও স্পিন হয়। অশ্বিন যেমন দেশের উইকেট থেকে সাহায্য পাবে, তেমন বিদেশেও পাবে। তা হলে? কথাটা আমি এমনি-এমনি বলছি না।...’’