লক্ষ্য: বৈচিত্র বাড়িয়ে সীমিত ওভারে ফিরতে চান অশ্বিন।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যে এখন রিস্ট-স্পিনারদের রমরমা— কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চহাল-রাই তার প্রমাণ। এই দুই তরুণ স্পিনারের ধাক্কায় ভারতের ওয়ান ডে ও টি-টোয়েন্টি দল থেকে ছিটকে গিয়েছেন আর অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাডেজা। এক সময় যে দু’জন সব ফর্ম্যাটেই ভারতীয় দলে অপরিহার্য ছিলেন, সে দু’জনের আপাতত টেস্ট ক্রিকেটের বাইরে সুযোগ নেই।
রিস্ট-স্পিনারদের এই বাড়বাড়ন্তই এখন অশ্বিনের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। সাদা বলের ক্রিকেটে ফেরার পণ করে বসে আছেন তিনি। তাই নিজের অস্ত্র ভাণ্ডারে অস্ত্রের সংখ্যা বাড়াতে চান। দক্ষিণী স্পিন তারকা অফস্পিন ছেড়ে এ বার লেগস্পিন ধরেছেন সে জন্যই। ঘরোয়া ক্রিকেটে শুরু হয়েছে এই পরীক্ষা। চলবে আইপিএলেও, বলছেন অশ্বিন।
৩১ বছর বয়সি অফস্পিনার মনে করেন, ভারতীয় দলে ফেরার মঞ্চ নয় আইপিএল। তবু নিজেকে নির্বাচকদের নজরে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্য নিয়ে যে তিনি বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি লিগে নামবেন, তা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই স্পিন তারকার।
ক্রিকেটের আধুনিক ফর্ম্যাটে কব্জির ব্যবহারে করা স্পিনারদের চেয়ে যে পিছিয়ে যাচ্ছেন আঙুল ব্যবহার করা স্পিনাররা, তা স্বীকার করে নিয়ে অশ্বিন বলেন, ‘‘ফিঙ্গার স্পিনারদের ভবিষ্যৎ কী, তা সবার চিন্তা-ভাবনার ওপর নির্ভর করছে। আমার তো মনে হয় দিন বদলাবে। একটা সময়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে লেগস্পিনারদের জায়গা হতো না। এখন হয়। এখন হয়তো ফিঙ্গার-স্পিনারদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতি নিশ্চয়ই পাল্টাবে।’’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ‘রিস্ট-স্পিনার’-দের কেমন জয়জয়কার চলছে, তা এই ফর্ম্যাটের বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম তিনেই রয়েছেন তিন কব্জির শিল্পী আফগানিস্তানের রশিদ খান, নিউজিল্যান্ডের ইশ সোধি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যামুয়েল বদ্রি। কিন্তু সুযোগ ও সবার সমর্থন পেলে যে অফস্পিনাররাও ওঁদের মতোই কেরামতি দেখাতে পারে, সেই দাবিই করছেন অশ্বিন। বলেন, ‘‘একজন লেগস্পিনার দশ ওভারে ৬৪ রান দিয়ে দু’উইকেট নেওয়ার পরেও লোকে তাকে সমর্থন করছে। সেই একই সমর্থন পেলে কিন্তু একজন অফস্পিনারও তা করে দেখাতে পারে। আসলে যখন যে ধারণাটা চলে, তখন সেটাই চলতে থাকে। এখন রিস্ট-স্পিনারদের ধারণাটাই চলছে বেশি, তাই ওদের রমরমা।’’
প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতেই অশ্বিনের এই লেগস্পিনের চেষ্টা, যা তিনি গত মাসে বিজয় হাজারে ট্রফি থেকেই শুরু করেছিলেন। তাঁর প্রিয় স্পিনার অনিল কুম্বলের মতো অ্যাকশনে তাঁকে লেগস্পিন করতে দেখে অনেকে অবাক হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার লক্ষ্মণ শিবরামকৃষ্ণনও। টিভিতে বক্সে বসে তিনি অশ্বিনের কব্জির অবস্থান নিয়ে প্রশ্নও তোলেন। কিন্তু অশ্বিনের বক্তব্য, ‘‘আমি নতুন কিছু করতে চাই। এটা আমার বরাবরের প্রবণতা। সব সময়ই কিছু না কিছু নতুন করতে চাই আমি। সময়ের চাহিদা পূরণ করতেই হয় সবাইকে। সে জন্য নিজেদের পাল্টাতেও হয় কখনও কখনও।’’
নাগপুরের পাটা উইকেটে অবশ্য নতুন অশ্বিনের প্রভাব তেমন দেখা যায়নি। টেস্টে তিনশোর ওপর উইকেট পাওয়া স্পিনার দু’দিনে ৪৩ ওভার বল করে একটি মাত্র উইকেটে পেয়েছেন, ১২৩ রান দিয়ে। অনেকের আশঙ্কা, অশ্বিনের এই নতুন কিছু করার নেশা না আদতে তাঁর ক্ষতি করে বসে। কিন্তু এই ঝুঁকির প্রসঙ্গে তাঁর কোনও হেলদোল নেই। অশ্বিন বলছেন, ‘‘আমার ক্রিকেটে আসাটাই তো একটা বড় ঝুঁকি। নিজেকে দাঁড় করাতে পারব কি না, সেটাই তো জানা ছিল না। জীবনে অনেক কিছুই করেছি ঝুঁকি নিয়ে। ঝুঁকি নিতে আমার ভালই লাগে। নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই, যেখানে টি-টোয়েন্টিতে চার ওভার হোক বা ওয়ান ডে-তে দশ ওভার, প্রতি ওভারেই সামলানো মুশকিল হবে অশ্বিনকে। এটাই আমার মোটিভেশন।’’