অশ্বিনকে এর পর অলরাউন্ডার না বলা হলে আর কবে হবে

রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অ্যান্টিগা টেস্টের পারফরম্যান্স দেখার পর ওর সমালোচকদের আজ একটা কথা খুব বলতে ইচ্ছে করছে। তোমরা এর পরেও যদি ওকে টেস্ট অলরাউন্ডারের মর্যাদা না দাও, তা হলে আর কবে দেবে?

Advertisement

দীপ দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৭
Share:

অ্যান্টিগায় শেষ হাসি। ইনসেটে ম্যাচের সেরা অশ্বিন। ছবি: এএফপি

রবিচন্দ্রন অশ্বিনের অ্যান্টিগা টেস্টের পারফরম্যান্স দেখার পর ওর সমালোচকদের আজ একটা কথা খুব বলতে ইচ্ছে করছে। তোমরা এর পরেও যদি ওকে টেস্ট অলরাউন্ডারের মর্যাদা না দাও, তা হলে আর কবে দেবে?

Advertisement

বিরাট কোহালি পাঁচ বোলারের থিওরি নিয়ে প্রচুর লোককে বলতে শুনেছি, এটা কী হল? এ তো ব্যাটিংকে কমজোরি করে দিল। জানি না অশ্বিন থাকা স্বত্ত্বেও কী ভাবে কথাটা বলা হয়। কেনই বা ওকে শুধু বোলার হিসেবে ধরা হয়। ভাবা যায়, এক টেস্টে সেঞ্চুরি আর পাঁচ উইকেট ভারতীয়দের মধ্যে শুধু দু’জন নিয়েছে। বিনু মাঁকড় আর পলি উম্রিগড়। তা-ও এক বার করে। অশ্বিনের সেখানে দু’বার হল। এক বার দেশে, এক বার বিদেশে। ছেলেটা জাক কালিস, গ্যারি সোবার্সের মতো প্রবাদপ্রতিমদের পাশে বসে পড়ল! সোবার্সরাও দু’বার করে টেস্টে পাঁচ উইকেট আর সেঞ্চুরি করেছেন। তো সোবার্স-কালিসকে যদি অলরাউন্ডার বলি, অশ্বিনকেও বলতে অসুবিধে কোথায়?

টিমের উইকেট দরকার, অশ্বিন আছে। টিমের রান দরকার, প্রয়োজন পার্টনারশিপ— অশ্বিন আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসটা ধরুন না। ফলো অন করতে নেমে ১৩২-৮ হয়ে গিয়েছিল। অশ্বিনের পরপর উইকেটে জেসন হোল্ডারের টিম তখন কাঁপছে। ধরেই নেওয়া হচ্ছিল যে, যে কোনও মুহূর্তে টেস্ট শেষ হয়ে যাবে। আচমকা কার্লোস ব্রেথওয়েটের সঙ্গে ক্রিজে দাঁড়িয়ে গেল দেবেন্দ্র বিশু। ঠিক যখন মনে হচ্ছে টেস্ট পাঁচ দিনে চলে যাবে, সেই অশ্বিন। বিশু আর গ্যাব্রিয়েলকে তুলে নিয়ে টেস্ট চার দিনে শেষ করে দিল। সেঞ্চুরির পর সাত উইকেট নিয়ে!

Advertisement

বেশ কিছু দিন ধরেই দেখছি, অশ্বিন একদম অফস্পিনের ওল্ড স্কুলে নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। ক্যারম বলের দেখনদারিতে যাচ্ছে না। সোজা অফস্পিন করছে। আর সেটা অসাধারণ করছে। অ্যান্টিগায় ওর বোলিংয়ের যেটা সবচেয়ে ভাল লাগল তা হল, উইকেট না পেলেও অধৈর্য না হয়ে পড়া। লাইন-লেংথ ঠিক রেখে জায়গায় বল করে যাওয়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রথম ইনিংসে কোনও উইকেট পায়নি অশ্বিন। কিন্তু তাই বলে নিজের বোলিং নিয়ে কোনও পরীক্ষাতেও নামতে যায়নি।

আর দ্বিতীয় ইনিংসে যে বোলিং ও করল, ভোলা যাবে না। মানছি যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ক্রিকেটে বিশাল কোনও প্রতিপক্ষ নয়। অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ড নয়। কিন্তু একজন বোলারের শৃঙ্খলা কোন পর্যায়ে, সেটুকু অন্তত তো বোঝা যাবে। খেয়াল করলে দেখবেন, যে সাতটা উইকেট নিয়েছে তার একটাও কিন্তু ব্যাটসম্যানের সুইপ মারতে গিয়ে আকাশে তুলে দেওয়ায় আসেনি। কখনও ব্যাটসম্যান বোল্ড হয়েছে। কখনও ব্যাট-প্যাড হয়ে ফিল্ডারের হাতে। মার্লন স্যামুয়েলস আর জেসন হোল্ডারের ডেলিভারিটা আলাদা করে বলব। স্যামুয়েলসের ডেলিভারিটা অত টার্ন করেনি। কিন্তু ড্রিফট করে ওকে তুলে নিয়েছে। স্যামুয়েলস কিন্তু সেট ব্যাটসম্যান ছিল। আর হোল্ডারেরটা অবিশ্বাস্য। বলটা যে অত লম্বা টার্ন করে লেগ স্টাম্পের উপরে লাগবে, ভাবতে পারিনি।

জানি না, বোলার অশ্বিনের সাত উইকেটের পর ব্যাটসম্যান অশ্বিনের সেঞ্চুরি আবার লোকে ভুলে যাবে কী না। আমার কাছে ওর সেঞ্চুরিটার গুরুত্ব বেশি। টেস্টে সেঞ্চুরি করার পরেও তো কেউ ব্যাটসম্যান হিসেবে ওকে ধরত না। সবচেয়ে ভাল লেগেছে, ওকে নিয়ে ভারতীয় টিমের স্ট্র্যাটেজি। মানে, ঋদ্ধির আগে ওকে পাঠানো। ঋদ্ধিকে ছয়ের বদলে সাতে পাঠানোয় ওর আত্ববিশ্বাসে আঘাত করা হল, ভাবার কারণ নেই। বরং দু’টো কাজ এতে হয়েছে। এক, প্রথম ছয়ে থাকলে যে চাপটা থাকে, সাতে সেটা থাকে না। ঋদ্ধিকে সেই চাপটা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক খোলা মনে খেলতে দেওয়া হয়েছে। আর দুই, ব্যাটসম্যান অশ্বিনের উপর টিম ম্যানেজমেন্টের ভরসাটা সবার সামনে চলে এসেছে। যা ওকে সাহায্য করবে। পরিষ্কার বলছি, অশ্বিন ওই ইনিংসটা না খেললে বিরাটের ডাবল হত কি না কে জানে!

কী দাঁড়াল?

অ্যান্টিগা টেস্টে ভারতের মনে রাখার মতো অনেক কিছু থাকল। বিরাটের ডাবল সেঞ্চুরি। মহম্মদ শামির দুর্ধর্ষ প্রত্যাবর্তন। ঋদ্ধিমানের অসাধারণ কিপিং। এক ইনিংসে পাঁচ ক্যাচ ও এক স্টাম্পিংয়ে ধোনি-কিরমানিকে ছোঁয়া। উপমহাদেশের বাইরে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জেতার রেকর্ড। সব হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এই টেস্টের সেরা পারফর্মার হয়ে থাকল অশ্বিন। অলরাউন্ডার অশ্বিন। বিরাটের ডাবল সেঞ্চুরিটা মাথায় রেখেই বলছি।

আর ভুল যে বলছি না, ম্যাচ সেরা পুরস্কারের প্রাপকের নাম থেকেই তো পরিষ্কার!

সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত প্রথম ইনিংস ৫৬৬-৮ (ডি:)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস ২৪৩। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস (ফলো অন) ২৩১ (ব্রেথওয়েট ৫১ ন.আ., বিশু ৪৫, অশ্বিন ৭-৮৩)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন