স্বপ্না এরকমই, বাবাকে রক্ত দিতে সাই থেকে এসেছিল

তখন থেকেই দেখেছি, স্বপ্নার জয়ের খিদে কতটা। স্কুলের প্রতিযোগিতায় জেতার জন্যও ঘণ্টার পর ঘণ্টা চড়া রোদে প্র্যাকটিস করত ও।

Advertisement

ভারতী বর্মণ (স্বপ্না বর্মণের বন্ধু)

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৮ ০৩:২০
Share:

ভারতী বর্মণ (স্বপ্না বর্মণের বন্ধু)

সেই ‘পাটকাঠি বেলার’ বন্ধু আমরা। আমি আর স্বপ্না। মানে, আপনাদের ‘এশিয়াডের সোনার মেয়ে’ স্বপ্না বর্মণ।

Advertisement

স্বপ্না আর আমি প্রাইমারি স্কুল থেকে এক সঙ্গে পড়েছি। বাড়িও এক পাড়ায়। ওদের বাড়ির পিছনে রয়েছে বড় একটা মাঠ। সেখানে চাষ হয়। ছোটদের স্কুলে যখন পড়তাম, ওই মাঠের কোপানো মাটিতে পাটকাঠি পুঁতে তার উপর দিয়ে হাইজাম্প দিতাম আমরা। তাই বলছিলাম ‘পাটকাঠি বেলা’। ওই সময়েও স্বপ্নার লাফের ধারে-কাছে পৌঁছতে পারতাম না আমরা। ও-ই জিতত প্রত্যেক বার। তখন থেকেই দেখেছি, স্বপ্নার জয়ের খিদে কতটা। স্কুলের প্রতিযোগিতায় জেতার জন্যও ঘণ্টার পর ঘণ্টা চড়া রোদে প্র্যাকটিস করত ও।

সত্যি বলছি, এশিয়ান গেমসে হেপ্টাথলনে স্বপ্না যদি সোনা না-ও জিতত, তাতেও আমার কিছু মনে হত না। আমাদের বাড়ির সবার কাছে ও এমনিতেই সোনার মেয়ে।

Advertisement

বছর দেড়েক আগের কথা। স্বপ্না তত দিনে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় রুপো পেয়ে গিয়েছে। তাতে অবশ্য আমাদের যোগাযোগে ছেদ পড়েনি। মাঝেমধ্যেই ফোন করত ও। জানত, আমার বাবার ক্যানসার। সে বার বাবাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করাতে হয়েছিল। রক্ত লাগবে। মনটা ভাল ছিল না। কথা-প্রসঙ্গে ফোনে বললাম ওকে। হঠাৎ দেখি, দু’দিন পরে স্বপ্না এসে হাজির। আমাকে বলল, “চল কাকুকে রক্ত দিয়ে আসি।”

এটাই স্বপ্না। ছোটবেলার বন্ধুর বাবাকে রক্ত দিতে কলকাতায় ‘সাই’-এর ক্যাম্প থেকে এক ছুটে উত্তরবঙ্গে চলে আসা মেয়েটা। সাফল্য কোনও দিনই মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারেনি আমার বন্ধুর।

সেভেনে পড়ার সময়েই সাই-এর কলকাতার ক্যাম্পে চলে গিয়েছিল স্বপ্না। ছুটিতে যখন আসত, কলকাতার, সাই-এর গল্প বলত আমাদের। বছর দুই আগে আমরা কয়েক জন গ্রাম থেকে কলকাতা গিয়েছিলাম। সেই এক বারই আমার কলকাতায় যাওয়া। স্বপ্না আমাদের সারা কলকাতা ঘুরিয়ে দেখিয়েছিল। আমার বান্ধবী এমনই। বেশি কথা না-বলা, শান্ত একটা মেয়ে। যার হৃদয়টা সোনার।

স্বপ্না আজ সেলেব্রিটি। ওকে ঘিরে কত ক্যামেরা। প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন। চারপাশে ভিভিআইপি-রা। কিন্তু জানি, আমরা বা গ্রামের যে কেউ যদি এখন ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াই, স্বপ্না তক্ষুনি জড়িয়ে ধরবে আমাদের!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন