রহিমের বাড়িতে ফিরল বিচ্ছিন্ন কেবল লাইন

রহিমের ফুটবল খেলার অনুপ্রেরণা তার দাদা আকবর আলির থেকে পাওয়া। ছোটবেলায় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন মোটেই ছিল না। দাদা এরিয়ান্স ক্লাবে খেলতেন। দাদাকেই ছোট্ট রহিম একদিন কলকাতা ঘোরাতে নিয়ে যেতে অনুরোধ করে।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

অপেক্ষা: রহিমের বাড়িতে মা, বাবার সঙ্গে দাদা। —নিজস্ব চিত্র।

ভারতীয় ফুটবল দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখা এতদিন অলীক বলেই ভাবা হতো। সেই স্বপ্নই পূরণ করতে চলেছে বাংলার এক ফুটবলার। ইছাপুর বিবেকনগরের হাঁটু পর্যন্ত জলে ডোবা রাস্তা পেরিয়ে দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের বিরুদ্ধে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলতে নামবে রহিম আলি।

Advertisement

রহিমের ফুটবল খেলার অনুপ্রেরণা তার দাদা আকবর আলির থেকে পাওয়া। ছোটবেলায় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন মোটেই ছিল না। দাদা এরিয়ান্স ক্লাবে খেলতেন। দাদাকেই ছোট্ট রহিম একদিন কলকাতা ঘোরাতে নিয়ে যেতে অনুরোধ করে। দাদা তাকে ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের প্র্যাকটিস দেখায়। সেই থেকেই ফুটবলের প্রেমে পড়ে যায় রহিম। তারপর দাদাই তাকে ইছাপুর বাপুজি কলোনির মাঠে নিয়ে যান। নর্থল্যান্ড নির্ভিক সংঘ ক্লাবের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন তিনি। সেখান থেকে এরিয়ান্স ক্লাবের যুব দলে সুযোগ। এরিয়ান্সে ৩ থেকে ৪ মাস খেলার পরে মোহনবাগানে ডাক পায়। সেখানেই কোচ অমিয় ঘোষের সঙ্গে সাক্ষাৎ। ব্যাস, তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। মোহনবাগান থেকেই সুযোগ অনুর্ধ্ব-১৪ ভারতীয় শিবিরে। সেখান থেকে অনুর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের উড়ানে।

রহিমের বাবা গাড়ি চালান। মহম্মদ রফিক প্রচণ্ড অভাবের মধ্যে তাঁর দুই ছেলেকে বড় করছেন। রহিমের মা সীমা বেগমের শাড়ির ব্যবসা। এর আগে তিনি লোকের বাড়িতে কাজ করতেন। তাঁদের একটি ছোট জলখাবারের দোকানও ছিল, যা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে পাকা ঘর একটিই। একটি ছোট্ট টিভি, টেবল ফ্যান আর দুই ভাইয়ের ফুটবল খেলে জেতা পুরস্কার ছাড়া আর কিছুই নেই।

Advertisement

সংগ্রামী: লড়াই করে বিশ্বকাপে রহিম আলি।

অভাবের সংসারে ফুটবল যেন সত্যিই আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিয়েছে। কেমন? না, পয়সা পাচ্ছে না বলে টিভি-র লাইন কেটে দিয়েছিল কেবল অপারেটর-রা। রহিম ভারতের অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাওয়ার পরে আবার সেটি জুড়ে দিয়ে গিয়েছে কেবল সংস্থা। রহিম বিশ্বকাপ অভিযানে নামছে শুক্রবার। তার আগের দিন ছোট্ট ঘরটায় বসে তার মা সীমা দেবী আবেগতাড়িত ভাবে বলছিলেন, ‘‘ওর প্রথম বুট কাজের বাড়ি থেকে অ্যাডভান্স পেয়ে কিনে দিয়েছিলাম। দাম নিয়েছিল ৭০০ টাকা।’’

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ভক্ত রহিম নবম শ্রেণির বেশি পড়তে পারেনি। কিন্তু পাড়ায় তাকে নিয়ে প্রার্থনা আর স্বপ্ন দেখা চলছে। বাবা মহম্মদ রফিকও গিয়েছিলেন প্রার্থনা সারতে। বুধিরাম টুডু, বিশ্বজিৎ সর্দারের পাড়ার ছেলে রহিম কি বিশ্বকাপে গোল পাবে? দাদা আকবর বলে উঠলেন, ‘‘আমি দলের তিন পয়েন্টের অপেক্ষায় আছি। ভাই গোল করলে ভাল, না হলে দেশ জিতলেই হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন