অবিশ্বাস্য। অতুলনীয়। অনবদ্য।
এই তিনটে শব্দ গত মরসুমে বহু বার বসেছে বার্সেলোনার পাশে। তবে শুক্রবার রাতের পরে এই তিন বিশেষণ চলে গেল আটলেটিক বিলবাওর দুর্বল দলের পাশে। যারা অবিশ্বাস্য ভাবেই এফসি বার্সেলোনাকে বুঝিয়ে দিল, যতই মেসিরা ত্রিমুকুট জিতে থাকুন না কেন, সেগুলো ধরে রাখতে এখনও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।
সান মেমেসের লজ্জার রাতে স্প্যানিশ সুপার কাপের প্রথম পর্বে বার্সেলোনাকে ৪-০ হারাল অ্যাথলেটিক বিলবাও। নব্বই মিনিট শেষে সাধারণত বার্সেলোনার মেসিকে দেখা যায় উচ্ছ্বাস করতে। কিন্তু এ দিনের সেই বার্সার মেসির মাথা ছিল নিচু। হতে পারে এই টুর্নামেন্ট প্রাক্ মরসুম প্রস্তুতি ছাড়া কিছুই না। কিন্তু ঘটনা হল, মেসি কোনও পাড়ার টুর্নামেন্টে নামলেও সেটা জেতার মানসিকতা নিয়ে নামেন।
প্রথম ১৩ মিনিট থেকেই শুরু হয় বিলবাওর গোল উত্সব। প্রায় ৪৫ গজ দূর থেকে টের স্টেগেনের মাথার উপর দিয়ে বল ভাসিয়ে গোল। সেভিয়ার বিরুদ্ধে ৪-১ থেকে ৪-৪ হওয়ার পরেও ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি বার্সেলোনা। এ দিনও যত বার বিলবাও আক্রমণ তৈরি করে, বার্সা ডিফেন্সে ভারমেলেইন ও বাত্রা তত বার কেঁপে ওঠেন। মেসি দু’এক বার নিজের চেনা মেজাজে ড্রিবল করতে চাইলেও নিটফল শূন্য। বিরতির পরে ৫৩ থেকে ৬৮ মিনিটের মধ্যে হ্যাটট্রিক করেন আদুরিজ। আর তাতেই ম্যাচ পাল্টে যায় এক তরফা লড়াইয়ে। বার্সা আর কোনও জবাব খুঁজে পায়নি।
দ্বিতীয় পর্ব এখনও বাকি। ইউরোপীয় সুপার কাপ জিতে এখনও ছ’টা ট্রফি জেতার লড়াইয়ে টিকে বার্সা। তবে ম্যাচ শেষে গোটা ফুটবলবিশ্ব জুড়ে একটাই কথা শোনা যায়— পাঁচ ভুলে গিয়ে এখন বাকি চারটের জন্য খেলুক বার্সা। কয়েক জন যেমন বার্সা দলের ব্যাখ্যা দিতে বলেন— ‘‘বার্সার ফরোয়ার্ড লাইন ফেরারি হলেও রক্ষণ ভাগ ছ্যাকরা গাড়ি।’’
ফুটবল বিশেষজ্ঞরা আবার প্রশ্ন তুলে দেন লুই এনরিকের বিরুদ্ধে। যাঁদের অভিযোগ, ‘‘যখন একটা ট্রফি জেতার সুযোগ আছে, তখন কী করে প্রথম দলের অধিকাংশ তারকাদের রিজার্ভ বেঞ্চে রাখা হল।’’ তবে এনরিকে বলছেন, মঙ্গলবার রাতে ১২০ মিনিট খেলার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন তিনি। ‘‘আমি অনেক ভাল প্লেয়ারকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখি। কিন্তু সেটা চোট যাতে না পায় সেই জন্যই। কারণ ওরা সবাই সেভিয়ার বিরুদ্ধে ১২০ মিনিট খেলেছে,’’ বলছেন এনরিকে। হারের দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে এনরিকে যোগ করেন, ‘‘আমি দল বানিয়েছি। আজ যা যা হয়েছে সব কিছুর জন্য দোষী আমি। আমার ফুটবলাররা চেষ্টা করেছে।’’ কিন্তু ০-৪ হেরেও এখনও অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের আশায় রয়েছেন বার্সার স্প্যানিশ কোচ। ‘‘যদি কোনও দল এই টাইয়ের ভাগ্য পাল্টাতে পারে তাহলে সেটা হচ্ছে বার্সা। কিন্তু আমরা এখন খুব সহজে গোল খাচ্ছি। সেটা পাল্টাতে হবে,’’ বলছেন এনরিকে।
বিপক্ষ কোচ আর্নেস্তো ভ্যালভার্দ আবার বলেছেন বার্সাকে ৪-০ হারিয়ে আত্মতুষ্ট হয়ে পড়লে হবে না। ‘‘৪-০ জিতেছি বলে পরের ম্যাচে হাল্কা ভাবে নিলে হবে না। এটা সত্যিই, আমরা বার্সার মতো দলের বিরুদ্ধে ৪ গোল দিয়েছি। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি। কাম্প ন্যুতে ভাল খেলতে হবে।’’