উৎসব: গোলের পরে উচ্ছ্বাস এটিকে-র লানজ়ারোতের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এটিকে ২ • জামশেদপুর ১
বিরতিতে মাঠের মধ্যে পায়ে ও মাথায় বল নিয়ে নাচাচ্ছিলেন জনা চারেক শিল্পী। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন কাঁপিয়ে তখন গমগমে আওয়াজে বাজছিল, ‘‘ভোলে বাবা পার করেগা...।’’
মাঠে অবশ্য তার আগেই এটিকেকে সঙ্কট পার করিয়ে দিয়েছেন তাদের স্পেনীয় অধিনায়ক ম্যানুয়েল লানজ়ারোতে ব্রুনো।
শেষ পর্যন্ত এই জোড়া গোলের সুবাদেই ২-১ জিতে বাড়ি ফিরলেন প্রীতম কোটাল, অর্ণব মণ্ডলরা। তবে জামশেদপুরকে হারালেও ১৪ ম্যাচে ২০ পয়েন্ট নিয়ে আইএসএল টেবলের ছয় নম্বরেই থেকে গেল স্টিভ কপেলের দল। একই সঙ্গে জিইয়ে রাখল প্রথম চার দলে থাকার স্বপ্ন। অন্য দিকে, ১৪ ম্যাচে এটিকের সমান পয়েন্ট নিয়ে গোলপার্থক্যে কলকাতার দলটির এক ধাপ আগে রইল জামশেদপুর।
ম্যাচ শেষে জামশেদপুর এফসির কোচ সিজার ফের্নান্দো বলে গেলেন, ‘‘ওই জোড়া ফ্রি-কিক থেকে করা গোলই হারিয়ে দিয়ে গেল।’’ এটিকে কোচ স্টিভ কপেলের মুখে তখন চওড়া হাসি। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি লানজ়ারোতের প্রশংসা করে বলে গেলেন, ‘‘প্রথম চারে থাকার স্বপ্ন বেঁচে রইল। পরের দুই অ্যাওয়ে ম্যাচ জিততে হবে।’’
এটিকে কোচ এর আগে কাজ করেছেন কেরল ব্লাস্টার্স ও জামশেদপুর এফসি-তে। তাঁর সম্পর্কে ভারতীয় ফুটবল মহলে শোনা যায়, অতি আক্রমণাত্মক হওয়ার বদলে রক্ষণ গুছিয়ে দলকে খেলাতে ভালবাসেন। আর দ্বিতীয়ার্ধেই তাঁর দল এই আক্রমণের ঢেউ তুলে আনে। এ দিন অবশ্য সাধারণ ফুটবল সমর্থকদের সেই ধারণা বদলে শুরু থেকেই আক্রমণের ঝাঁঝ বজায় রেখেছিল এটিকের আক্রমণ ভাগ। আর দলনেতা লানজ়ারোতের জোড়া গোলও প্রথমার্ধেই। আর এই দুই গোলই বাঁ পায়ে নেওয়া ফ্রি-কিকে।
চার বছর আগে কলকাতা লিগে যুবভারতীতে এ রকমই বাঁ পায়ে বাঁক খাওয়ানো জোড়া ফ্রি-কিকে গোল করেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের দো দং। এ দিন লানজ়ারোতের বাঁ পায়ের ইনসুইঙ্গার ফ্রি-কিকে গোলের পরে সেই স্মৃতি ফিরে এসেছিল স্টেডিয়ামে।
প্রথম গোল তিন মিনিটে। নিজেদের মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে সোজা জামশেদপুর রক্ষণে উঠে এসেছিলেন এদু গার্সিয়া। কিন্তু বক্সের সামনে তাঁকে ফাউল করেন বিপক্ষের লেফ্ট ব্যাক ধনচন্দ্র সিংহ। রেফারি ফাউল দিলে সেখান থেকে প্রথম গোল এটিকে অধিনায়কের। ৩৩ মিনিটে জামশেদপুর বক্সের সামনে ফের এদু গার্সিয়াকে ফাউল করেন ধনচন্দ্র। রেফারি ফ্রি-কিকের নির্দেশ দিলে ফের গোল করেন লানজ়ারোতে। দু’টি গোলের ক্ষেত্রেই জামশেদপুরের গোলরক্ষক সুব্রত পালের কিছু করার ছিল না।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণে তীব্রতা বাড়ায় জামশেদপুর। এই সময় সুমিত পাসির শট বারে লেগে ফেরে। খেলা শেষ হওয়ার আট মিনিট আগে বাঁ দিক থেকে বিকাশ জাইরুর ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে জামশেদপুরের হয়ে ব্যবধান কমান মারিয়ো আর্কোয়েস। আইএসএলে জামশেদপুর এফসি খেলা শুরু করার পরে তাদের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম জয় এটিকের।
এ দিন গোটা স্টেডিয়ামে প্রণয় হালদার, অরিন্দম ভট্টাচার্যদের চাঙ্গা করতে বড় পোস্টারের দেখাও মিলেছে। যার মাথায় লেখা ‘লড়িয়ে জান, রাখব মান’। প্রথম চারে থাকতে এখন এটাই মূলমন্ত্র এটিকের।
এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল, জন জনসন, অর্ণব মণ্ডল, রিকি লাল্লামাওমা, প্রণয় হালদার, হীতেশ শর্মা, ম্যানুয়েল লানজ়ারোতে (জয়েশ রানে), গারসন ভিয়েরা, এভার্টন সান্তোস (আন্দ্রে বিকে), এদু গার্সিয়া (কালু উচে)।