তৈরি হচ্ছে হাবাস-বাহিনী। শুক্রবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার।
বদলা, না ফের ছন্দে ফেরার ম্যাচ?
হেমন্তের সন্ধেয় যুবভারতী ছাড়ার মুখে আটলেটিকো কলকাতা কোচের দিকে যখন প্রশ্নটা উড়ে গেল, স্টেডিয়ামের ভেতরে সাউন্ড সিস্টেমে তারস্বরে বাজছে ডিস্কো ডান্সারের গান— ‘ইয়াদ আ রহা হ্যায়...’।
হাবাস ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলেন প্রশ্নকর্তাকে। তার পর গাড়িতে ওঠার আগে বোধহয় নিজের দলের ভবিষ্যৎ ‘ইয়াদ’ করেই বললেন, ‘‘নো রিভেঞ্জ। তবে তিন পয়েন্ট চাই-ই। পরের কেরল ম্যাচে দু’জন ডিফেন্ডার পাব না (প্রাক-বিশ্বকাপের জন্য সেই ম্যাচে নেই অর্ণব-অগাস্টিন)। তাই নর্থ-ইস্ট ম্যাচ জেতা খুব জরুরি।’’
প্রথম ছ’ম্যাচ গোল-উপোসী ছিলেন গত বারের আইএসএল থেকে সোনার বল কানাডার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া ইয়ান হিউম। কিন্তু সাত নম্বর ম্যাচে একেবারে হ্যাটট্রিক করে এখন কলকাতার বিপদভঞ্জন তিনি। একদা বারি এফসিতে ভাইচুংয়ের সতীর্থ সেই হিউমের গলাতেও এক সুর। ‘‘আমার ফর্ম, বদলা সব ভুলে যান। কাল জেতাটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট।’’
নর্থ ইস্ট কোচ সিজার ফারিয়াস চার বছর আগে যুবভারতীতে আর্জেন্তিনা-ভেনেজুয়েলা ম্যাচে লিও মেসিকে গোল করে যেতে দেননি। নর্থ ইস্ট ফুটবলারদের অনেকের মতে, প্রাক্তন ভেনেজুয়েলা কোচ ‘এক সে বর কর এক’ রক্ষণাত্মক স্ট্র্যাটেজি পকেটে নিয়ে ঘোরেন। গুয়াহাটিতে কলকাতাকে হারিয়েছিলেন পাঁচ ডিফেন্ডার খেলিয়ে। তার উপর আটলেটিকো শনিবার পাচ্ছে না মাঝমাঠের সেরা অস্ত্র জাভি লারাকে। ফারিয়াসের সামনে এ সব ফ্যাক্টর তোলায় বলছেন, ‘‘অতীত বাদ দিন। বর্তমানে আমরা বেশ চাপে।’’
যুবভারতীর মাঠ নিয়ে অ্যাওয়ে-হোম টিম— সবাই এক রকম নাজেহাল। আগের ম্যাচেই কেরল ব্লাস্টার্স ফুটবলাররা অভিযোগ করে গিয়েছিলেন। ফারিয়াস সেখানে দু’দিন এই শহরে কাটিয়েও তাঁর দলকে সেই মাঠের সঙ্গে সড়গড় করালেন না কেন? এ বার চোয়াল শক্ত আইএসএল টু-তে সাত ম্যাচে সাত পয়েন্ট পাওয়া কোচের। ‘‘হোম টিম তো নিজের মাঠে সুবিধা পায়ই।’’ তার পর বলে ফেললেন হয়তো আসল কথাটা, ‘‘আপনাদের মাঠের সমস্যা তো বাউন্স নিয়ে। সেটা গত দু’দিনে আমরা ভালই প্র্যাকটিস করেছি। তা ছাড় ম্যাচটা বার করার জন্য বিশেষ প্ল্যান আছে আমাদের।’’
আটলেটিকো কোচ আবার এ দিন সাংবাদিক সম্মেলনে এলেন রফিককে বগলদাবা করে। বাতিল ফুটবলারকে জামাই আদর করে দলে ফিরিয়ে বললেন, ‘‘রফিক খুব ভাল মানুষ।’’ মধুরেণ সমাপয়েতের মতো রফিকও বললেন, ‘‘এ বার আমাকে ভাল খেলতে হবে।’’ শনিবারই তাঁকে নামাতে পারেন হাবাস।
কিন্তু অর্ণব? দিল্লি ম্যাচে সতীর্থ নাতোর সঙ্গে কথা কাটাকাটির পর রহস্যজনক ভাবে মুম্বই ম্যাচে প্রথম দলে বাদ পড়েন! হাবাস অবশ্য বললেন, ‘‘মণ্ডল আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার।’’ সেই ‘মণ্ডল’ দলে ফিরছেন হাবাসের ‘মোস্ট ক্রুশিয়াল’ ম্যাচে। ফিরছেন আরাতাও। সে ক্ষেত্রে লারার জায়গা ভরাট করবেন মুম্বইতে দুরন্ত খেলা গাভিলান। প্র্যাকটিসে তাঁর ফুটবলারদের দু’দলে ভাগ করে দাঁড় করিয়েছিলেন হাবাস। স্প্যানিশ কোচের নির্দেশে দুটো দলই তাড়া করছিল একে অপরকে। কিন্তু শনিবার সিমাওদের বিরুদ্ধে যদি ফের তাড়া করে গুয়াহাটি ম্যাচের ভূত?
হাবাসের ‘গোপন তাস’ ভালদো-ই হয়তো দিয়ে গেলেন উত্তরটা— ‘‘লিগে ফিরে আসতে পারার জোশে কলকাতাই কাল তাড়িয়ে বেড়াবে গুয়াহাটিকে।’’
নাটকীয় ড্র দিল্লির
রবিন সিংহের গোলে এক পয়েন্ট ছিনিয়ে নিল দিল্লি ডায়নামোস। শুক্রবার আইএসএলে মুখোমুখি হয়েছিল দিল্লি ডায়নামোস এবং মুম্বই সিটি এফসি। ঘরের মাঠে যে ম্যাচ ২-০ জিতেছিল মুম্বই। এ দিনও দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সেলিমের পাসে গোল করে মুম্বইকে এগিয়ে দেন ফ্রেডেরিক পিকিয়ন। তবে আটলেটিকো ম্যাচের মতো এ দিনও ইনজুরি টাইমে গোল করে দিল্লি। ফ্লোরেন্ট মালুদার পাসে ১-১ করে দিল্লিকে নিশ্চিত হারের মুখ থেকে বাঁচান রবিন। ড্র করে দুইয়ে থাকল দিল্লি। আটলেটিকো দে কলকাতাকে টপকে চার নম্বরে উঠল মুম্বই।