আটলেটিকোর হাত ধরে বিশ্বায়ন কলকাতার

আইএসএল শুধু ইতিহাসই তৈরি করল না, খুলে দিল এক নতুন দরজা। যা এত দিন বন্ধ ছিল ভারতীয় ফুটবলারদের কাছে। আইএসএলের হাত ধরে বিশ্বায়ন শুরু হয়ে গেল ভারতীয় তথা কলকাতা ফুটবলের। আটলেটিকো মাদ্রিদের ওয়েবসাইটেই শুধু নয়, স্পেনের নামী ক্রীড়াদৈনিক ‘মার্কা’, ফ্রান্সের ‘লেকিপ’ থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের ‘ডেইলি মেল’ বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে আটলেটিকো দে কলকাতার জয়ের খবর। সঙ্গে বোরাহ-ফিকরু-লুই গার্সিয়াদের ছবি। কলকাতা বা ভারতের কোনও ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে যা কখনও হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২১
Share:

স্পেনের ‘এ এস’ সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে কলকাতার আটলেটিকো।

আইএসএল শুধু ইতিহাসই তৈরি করল না, খুলে দিল এক নতুন দরজা। যা এত দিন বন্ধ ছিল ভারতীয় ফুটবলারদের কাছে। আইএসএলের হাত ধরে বিশ্বায়ন শুরু হয়ে গেল ভারতীয় তথা কলকাতা ফুটবলের।

Advertisement

আটলেটিকো মাদ্রিদের ওয়েবসাইটেই শুধু নয়, স্পেনের নামী ক্রীড়াদৈনিক ‘মার্কা’, ফ্রান্সের ‘লেকিপ’ থেকে শুরু করে ইংল্যান্ডের ‘ডেইলি মেল’ বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে আটলেটিকো দে কলকাতার জয়ের খবর। সঙ্গে বোরাহ-ফিকরু-লুই গার্সিয়াদের ছবি। কলকাতা বা ভারতের কোনও ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে যা কখনও হয়নি।

ভারতে যে ফুটবল-বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন ফুটবলপ্রেমীরা, রবিবার তার সূচনা হয় আইএসএলের হাত ধরে যুবভারতীতে। আর এই টুর্নামেন্ট উদ্বোধনের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে জায়গা করে নিল ভারত এবং কলকাতাও। এত দিন যে সব দেশের কাগজে লিওনেল মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তা কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মতো মহা-তারকারা ভেসে উঠতেন, সেই স্প্যানিশ-ইংরেজ-ফরাসি মিডিয়াতেও এখন গার্সিয়াদের পাশাপাশি অর্ণব মণ্ডল-সঞ্জু প্রধানদের নিয়ে আলোচনা হচ্ছে! আলোচনা হচ্ছে কলকাতার টিম নিয়েও।

Advertisement

দেশ-বিদেশের নামী খবরের কাগজ খুললেই মেসি-রোনাল্ডোদের নানা খবরের সঙ্গে এখন জ্বলজ্বল করছেন শুভাশিস-ডেঞ্জিল ফ্রাঙ্কোরা। কোথাও আটলেটিকো দে কলকাতার প্রথম গোলদাতা ফিকরুর সঙ্গে সঞ্জুর গোল-উত্‌সবের ছবি। কোথাও আবার মুম্বই সিটি-র আর্জেন্তাইন স্ট্রাইকার নাদায়াকে কড়া ট্যাকলের দৃশ্যে অর্ণব। তবে ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে যাঁকে নিয়ে বিদেশে সবচেয়ে বেশি লেখালেখি হয়েছে, তিনি হলেন আটলেটিকো কিপার শুভাশিস। তাঁর দুর্দান্ত সেভ দেখে স্পেনের পত্রিকায় লেখা হয়েছে, “আটলেটিকো দে কলকাতার গোলকিপার অসাধারণ।” যা শুনে রীতিমতো বাকরুদ্ধ শুভাশিস। সোমবার বিকেলে যখন টিম হোটেলে গিয়ে তাঁকে বিদেশি খবরের কাগজে লেখালেখি নিয়ে বলা হয়, তিনি প্রথমে অবাক হয়ে যান। পরে বললেন, “এই স্বপ্নই তো এত দিন দেখতাম। মেসি-রোনাল্ডোদের দেশে আমাদের নিয়েও কথা হচ্ছে, ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।” একবার চার দিকে চোখ বুলিয়ে ফের বলতে শুরু করলেন, “ভারতে যে ফুটবলও খেলা হয়, সেটাই অনেকে জানত না। ভাল লাগছে, আইএসএলের সৌজন্যে এ বার থেকে বিদেশেও আমাদের পরিচিতি হবে।”

শুভাশিসের মতো আপ্লুত অর্ণবও। তবে বেহালার ছেলের দৃষ্টিভঙ্গি একটু আলাদা। তাঁর কথায়, “এটা গর্ব করার মতোই ঘটনা। তবে এতে ভারতীয় ফুটবলের কতটা উন্নতি হয়, সেটা দেখতে হবে। আইএসএল আমাদের মঞ্চ তৈরি করে দিয়েছে। এ বার পারফরম্যান্স দিয়ে আমাদের এই জায়গাটা ধরে রাখতে হবে। বিদেশের কাগজে আমাদের নিয়ে যে লেখালেখি হয়েছে, সেটা যেন এই প্রথম এবং শেষ না হয়ে যায়। একটা সোনালি যুগের শুরু হল। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। ফিফা র্যঙ্কিংয়ে এর প্রভাব ফেলতে হবে।”

বিদেশি সংবাদমাদ্যমগুলোতে যে শুধু গার্সিয়া-বোরহা আর ভারতীয় ফুটবলারদের নিয়েই হইচই হচ্ছে সেটা কিন্তু নয়। পুরো কলকাতা টিম নিয়েই একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ফ্রান্সের জনপ্রিয় ক্রীড়া দৈনিকে যেমন শিরোনাম হয়েছে, “আটলেটিকো কলকাতা ইন হিস্ট্রি।” এমনকী আটলেটিকো মাদ্রিদের ওয়েবসাইট খুললেও পাওয়া যাচ্ছে উদ্বোধনী ম্যাচের উল্লাস। আইএসএলে কলকাতা-মুম্বই ম্যাচ দেখতে আসা আটলেটিকো মাদ্রিদের এক শীর্ষকর্তা ইগনাসিও আগুইয়ো বলছিলেন, “স্পেনে আটলেটিকো মাদ্রিদের মতোই আমরা ভারতে আটলেটিকো দে কলকাতার সমর্থক তৈরি করতে চাই। প্রথম ম্যাচে শুভাশিসরা যে পারফরম্যান্স করেছে, তাতে আমরা নিশ্চিত আগামী দিনে স্টেডিয়ামে আরও মানুষ খেলা দেখতে আসবেন।”

তিন সপ্তাহ নেই নবি

নিকোলাস আনেলকাকে তো পাওয়া যাবেই না। পরের কিছু ম্যাচ থেকে আবার ছিটকে গেলেন মুম্বই সিটি এফসির অধিনায়ক রহিম নবিও। বাঁ পায়ের গোড়ালিতে চোট পেয়ে তিন সপ্তাহের জন্য খেলতে পারবেন না রহিম নবি। যে চোট পেয়ে মাঝপথেই আটলেটিকো দে কলকাতা ম্যাচ ছাড়তে হয় মুম্বই অধিনায়ককে। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের উদ্বোধনী ম্যাচ হারার পরে এটা দলের জন্য আর এক বড় ধাক্কা। এমআরআই করার পরে জানা যায় নবির গোড়ালির কোনও হাড় ভাঙেনি। শুধু টিস্যুতে একটু সমস্যা হয়েছে। যে কারণে তিন সপ্তাহ তাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement