আটকে গেলেন গার্সিয়ারা।
মুম্বই সিটি-২ (লালরিন্ডিকা, ফ্রিডরিখ)
আটলেটিকো দে কলকাতা-১ (বলজিত্)
আমার কলেজের পুনর্মিলন উত্সব ছিল বারাকপুরে। রবিবারের ছুটির দিনেও ওখান থেকে গল্ফগ্রিন ফিরতে দেড়-দু’ঘণ্টা লাগে!
গাড়ির এত লম্বা পথ হলে কখনও গান শুনি, বিশ্রাম নিই। কিন্তু এ দিন কিছুই করিনি। আটলেটিকো দে কলকাতা ম্যাচের উত্তেজনায় বিটি রোড ধরে কখন যে বাড়িতে পৌঁছে গেলাম, বুঝতেই পারলাম না। একটা কথাই ভাবছিলাম আজই কলকাতা শেষ চারে যাবে তো?
নাহ্, আজ গেল না।
বরং তড়িঘড়ি বাড়ি পৌঁছে যে প্রবল উত্সাহ আর আশা নিয়ে ম্যাচটা দেখতে বসেছিলাম, তা জলে গেল। কলকাতা খেলায় হতাশা ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পেলাম না। গার্সিয়াদের দেখে মনে হল, কোনও পরিকল্পনা এবং উদ্দেশ্য ছাড়াই মাঠে নেমেছে। জেতা তো দূরের কথা, খেলার ইচ্ছেটুকুও যেন হারিয়ে ফেলেছে!
আটলেটিকো দে কলকাতার ফুটবলাররা আইএসএলটা যে দাপট নিয়ে শুরু করেছিল, তার ছিঁটেফোটা মানসিকতা নেই এখনকার টিমে। কোথাও যেন একটা যোগাযোগের অভাব স্পষ্ট। ফুটবলার-ফুটবলার, কোচ-ফুটবলার কিংবা ম্যানেজমেন্ট আর টিমের মধ্যে। সবচেয়ে বিপজ্জনক, এ সবের প্রভাব পড়ছে টিমে। আমার ধারণা, শেষ চারে যাওয়ার জন্য মুম্বই সিটি ম্যাচটা জেতা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেটা কেউই কাউকে বোঝাতে পারেনি। না হলে হয়তো এ রকম দিশাহীন ফুটবল দেখতে হত না।
ম্যাচের প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট চোখে দেখা যাচ্ছিল না। কোনও উইং প্লে নেই। কোনও পজিটিভ মুভ নেই। আনেলকারা এই সুযোগে দেখলাম পুরো টিমটাকে আটলেটিকোর পেনাল্টি বক্সে তুলে ফেলেছে। মুম্বইয়ের অ্যাটাকিং ফুটবলের সামনে তখন একেবারে দিশাহারা কলকাতা। আসলে হাবাসের টিমে এক জন প্রকৃত নেতার খুব অভাব। অনেকে হয়তো গার্সিয়াকে দেখাবেন। কিন্তু আমার মতে, নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কোয়ালিটি ওর মধ্যে নেই। ও হয়তো ভাল ড্রিবলার। পাসার। তবে নেতা নয়।
মুম্বইয়ের দু’টো গোলের ক্ষেত্রেই কলকাতার মাঝমাঠের সঙ্গে ডিফেন্সের সমন্বয়ের অভাব দেখলাম। গোলকিপার যে একেবারে নির্দোষ, সেটাও নয়। বিশেষ করে মুম্বইয়ের দ্বিতীয় গোলের সময় দেখলাম মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে বেটে। অর্ণব-হোসেমিরা কোথায় কাকে মার্ক করবে, সেটা তো ‘লাস্টম্যান অফ ডিফেন্স’-এর বলার কথা।
আটলেটিকোর তুলনায় মুম্বই সিটি-র মধ্যে জেতার খিদেটা আজ বেশি ছিল। শুরু থেকে যে ভাবে ওরা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলল, তাতে তিন পয়েন্ট না পেলেই বোধহয় বেশি অবাক হতাম। তবে আমি এখনও বলছি, এই টুর্নামেন্টের সেরা টিম কলকাতাই। একক দক্ষতায় কেউ ম্যাচ বার না করতে পারলেও, গুণগত মানে ওরাই এক নম্বর। আমার শুধু একটা অনুরোধ হাবাসকে। এক স্ট্রাইকারের ফর্মুলা ছেড়ে এ বার ফিকরুর পাশে বলজিত্ সিংহকে শুরু থেকেই খেলান। গোলটা চেনে।
আর একবার সেমিফাইনালে উঠলে নিশ্চিত চ্যাম্পিয়ন হবে আটলেটিকো দে কলকাতাই।
আটলেটিকো দে কলকাতা: বেটে, কিংশুক, অর্ণব, হোসেমি, বিশ্বজিত্, রাকেশ (বলজিত্), নাতো (আর্নাল), গার্সিয়া, বোরহা, ফিকরু, রফি (সঞ্জু)।
ছবি: শঙ্কর নাগ দাস