গোলাপি বলে বিরাটদের স্বাগত জানাতে চায় অস্ট্রেলিয়া, ইডেন টেস্টের পরেই আসছে প্রস্তাব

গত বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার আগে কোহালির দলকে অ্যাডিলেডে দিনরাতের টেস্ট খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি ভারতীয় বোর্ড। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও সেই টেস্ট হয়নি।

Advertisement

কৌশিক দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৫৫
Share:

চ্যালেঞ্জ: অ্যাডিলেডে পরিচিত দৃশ্য এই দিনরাতের টেস্ট। সামনের বছর এ-রকমই নৈশালোক টেস্টে মিচেল স্টার্কদের মুখোমুখি হতে পারে ভারত। ফাইল চিত্র

এক বছর আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে দিনরাতের টেস্ট খেলতে অস্বীকার করেছিল ভারত।

Advertisement

এর পরের বছরে আবার এক অস্ট্রেলিয়া সফর। যেখানে কিন্তু দিনরাতের টেস্ট এ বার খেলতে হতে পারে বিরাট কোহালির দলকে। গোলাপি বলে সামলাতে হতে পারে প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জশ হেজলউডদের।

ইডেনে ২২ নভেম্বর থেকে শুরু ভারত-বাংলাদেশের দিনরাতের টেস্ট শেষ হওয়ার পরেই অস্ট্রেলিয়া বোর্ডের (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া) পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তার পরে সরকারি ভাবে প্রস্তাব দেওয়া হবে পরের বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে একটি গোলাপি বলের টেস্ট খেলার। যে সফরে চারটে টেস্ট খেলার কথা ভারতের।

Advertisement

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার কেভিন রবার্টস স্বয়ং এ কথা জানিয়েছেন আনন্দবাজারকে। সোমবার ই-মেল মারফত অস্ট্রেলীয় বোর্ড প্রধান বলেছেন, ‘‘আমরা দারুণ খুশি হয়েছি শুনে যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি দিনরাতের টেস্ট খেলতে চলেছে ভারত। আমরাও ওদের সঙ্গে দিনরাতের টেস্ট খেলার ব্যাপারে কথা বলতে চাই।’’

গত বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার আগে কোহালির দলকে অ্যাডিলেডে দিনরাতের টেস্ট খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হয়নি ভারতীয় বোর্ড। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও সেই টেস্ট হয়নি। কিন্তু এ বার ভারতকে দিনরাতের টেস্ট খেলতে হবে বলেই অনেকে মনে করছেন। যার প্রথম এবং একমাত্র কারণ, ভারতেরও এ বার গোলাপি বলের টেস্ট অভিষেক ঘটতে চলেছে। যে জন্য ‘গোলাপি বলে অনভিজ্ঞতা’কে আর কারণ হিসেবে দেখা যাবে না। যা বুঝেই সম্ভবত ভারতকে নৈশালোকে টেস্ট খেলাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। সাধারণত, সফরের প্রথম টেস্টটাই গোলাপি বলে খেলতে চায় অস্ট্রেলিয়া। সে ক্ষেত্রে অ্যাডিলেডে হতে পারে ওই দ্বৈরথ।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সিইও এও জানিয়েছেন, এই ব্যাপারে তাঁদের পরের পদক্ষেপ কী হতে চলেছে। কেভিন রবার্টস ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘ভারত-বাংলাদেশ দিনরাতের টেস্ট ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পরে আমরা ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। ২০২০-২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরের সময় দিনরাতের টেস্ট আয়োজনের ব্যাপারে আমরা কথা বলতে চাই।’’

ভারত যখন এর আগে দিনরাতের অ্যাডিলেড টেস্ট খেলতে অস্বীকার করে, তখন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন ক্রিকেটার মার্ক ওয়-সহ বেশ কয়েক জন সরব হয়েছিলেন এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। তাঁদের বক্তব্য ছিল, টেস্ট ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে না ভারতীয় বোর্ড। এ বার বোর্ড মসনদে বসেই সৌরভ দিনরাতের টেস্টে সিলমোহর দিয়ে দিয়েছেন। অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত কেউ কেউ মনে করছেন, এক বার গোলাপি বলের টেস্ট খেলে ফেললে, ভারতের পক্ষে ভবিষ্যতে ‘না’ করা কঠিন হবে। এমনকি ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক মাইকেল ভন তো কয়েক দিন আগে টুইট করেছিলেন, ‘‘ভারত তো এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দিনরাতের টেস্ট খেলতে রাজি হয়ে গিয়েছে। তা হলে ওরা নিশ্চয়ই এর পরে অস্ট্রেলিয়ায় গোটা কয়েক দিনরাতের টেস্ট খেলতে আপত্তি করবে না।’’

দিনরাতের টেস্ট চালু করার ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়ায়ই সব চেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছিল। প্রথম দিনরাতের টেস্ট হয়েছিল সেই ২০১৫ সালে, নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যাডিলেডে। তার পরে আরও চারটে দিনরাতের টেস্ট খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। সব মিলিয়ে পাঁচটি টেস্টের তিনটি অ্যাডিলেড এবং দুটি ব্রিসবেনে হয়েছে। সেই পাঁচটি টেস্টই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। তাদের পাঁচ প্রতিপক্ষ ছিল নিউজ়িল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কা। বড় দেশগুলোর মধ্যে ভারতই একমাত্র দল যারা এখনও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দিনরাতের টেস্ট খেলেনি।

অস্ট্রেলীয় বোর্ড প্রধান আরও বলেছেন, ‘‘ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সব সময় দিনরাতের টেস্টকে সমর্থন করে এসেছে। যে কারণে ভারত এ বার দিনরাতের টেস্ট খেলছে জেনে আমরা খুব খুশি হয়েছি।’’

ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা একটা বিষয়ে একমত। পরিসংখ্যানও একই কথা বলছে। দিনরাতের টেস্টে অস্ট্রেলিয়া খুবই কঠিন প্রতিপক্ষ। এখন পর্যন্ত গোলাপি বলের ক্রিকেটে তাদের অপরাজিত থাকাটা সেটাই প্রমাণ করছে। চার বছর আগে অ্যাডিলেডের প্রথম দিনরাতের টেস্টে মিচেল স্টার্ক এবং জশ হেজলউডের সামনে ভেঙে পড়েছিল নিউজ়িল্যান্ড ব্যাটিং। স্টার্ক শুধু প্রথম ইনিংসে বল করে তিন উইকেট নিয়েছিলেন। হেজলউড দু’ইনিংস মিলিয়ে নিয়েছিলেন নয় উইকেট। চার ইনিংস মিলিয়ে সর্বোচ্চ রান উঠেছিল ২২৪।

এই বছরে আরও দুটো দিনরাতের টেস্ট খেলবে অস্ট্রেলিয়া। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান এবং নিউজ়িল্যান্ড। যে কারণে এই মুহূর্তে দলের সঙ্গে জড়িত কাউকে দিনরাতের টেস্ট নিয়ে কথা বলতে দিচ্ছে না ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। তবে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দিনরাতের টেস্টের সাক্ষী থেকেছেন এমন কেউ কেউ ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাতের আলোয় গোলাপি বল যথেষ্ট নড়াচড়া করেছে। পিচে একটু বেশি ঘাস থাকায় রিভার্স সুইং হয়তো সে ভাবে পাওয়া যায়নি, কিন্তু নতুন বলে ফাস্ট বোলারদের সামলানো কঠিন হয়ে গিয়েছে।

সৌরভের হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটে দিনরাতের টেস্ট বিপ্লব শুরু হয়ে গিয়েছে। এ বার গোলাপি বল নিয়ে ভারতের পূর্ব অবস্থানের বদল ঘটে কি না, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন