ছুরিকাহত হওয়ার আতঙ্ক ভুলে রূপকথার প্রত্যাবর্তন

জীবনযুদ্ধে বিজয়িনী বনাম জাপানের নতুন সূর্যের দ্বৈরথ

অস্ট্রেলীয় ওপেনের ফাইনালে উঠে গেলেন তিনি। স্ট্রেট সেটে হারালেন যুক্তরাষ্ট্রের অবাছাই ড্যানিয়েল কলিন্সকে। ফল তাঁর পক্ষে ৭-৬ (৭-২), ৬-০। ফাইনালে উঠে চেক তারকার মুখেও ছুরিকাহত হওয়ার পরে প্রত্যাবর্তনের কথা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০১
Share:

উদাহরণ: অস্ট্রেলীয় ওপেনে পেত্রা কুইতোভার স্বপ্নের দৌড় চলছে। ড্যানিয়েলা কলিন্সকে স্ট্রেট সেটে ৭-৬, ৬-০ উড়িয়ে ফাইনালে পৌঁছনোর হুঙ্কার। বৃহস্পতিবার রড লেভার এরিনায়। এপি

ছুরিকাহত হওয়ার পরে তিনি যে আবার স্বমহিমায় ফিরতে পারেন, কেউ ভাবেইনি। পেত্রা কুইতোভা কিন্তু প্রমাণ করে দিলেন, ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানতে পারে আতঙ্ক। সেরিনা উইলিয়ামসের প্রত্যাবর্তন অভিযান থেমে গেলেও স্বপ্নের দৌড় অব্যাহত কুইতোভার।

Advertisement

অস্ট্রেলীয় ওপেনের ফাইনালে উঠে গেলেন তিনি। স্ট্রেট সেটে হারালেন যুক্তরাষ্ট্রের অবাছাই ড্যানিয়েল কলিন্সকে। ফল তাঁর পক্ষে ৭-৬ (৭-২), ৬-০। ফাইনালে উঠে চেক তারকার মুখেও ছুরিকাহত হওয়ার পরে প্রত্যাবর্তনের কথা। বলে গেলেন, ‘‘সেই দুর্ঘটনার পরে কেউ ভাবেননি যে, আমি ফিরে আসতে পারি। অনেকেই মনে করেছিলেন, আমার পক্ষে আর কখনও উঠে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। কখনও কোর্টে দাঁড়িয়ে এই পর্যায়ের টেনিসে অংশ নেওয়া সম্ভব নয়।’’

২০১৬-তে ছুরিকাহত হন তিনি। একাধিক চোট পান কুইতোভা। লিগামেন্ট এবং টেন্ডনে গুরুতর ক্ষত হয়। সেই আক্রমণের পরে তাঁর মনে ভয় ধরে গিয়েছিল। একা একা থাকতে পারতেন না। ‘‘শুধুমাত্র শারীরিক ভাবেই নয়, মানসিক দিক থেকেও খুব কঠিন ছিল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসাটা। দীর্ঘ একটা সময় ধরে আমি খুব কাছের লোকদেরও বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,’’ ফাইনালে ওঠার পরে সাংবাদিকদের বলেছেন কুইতোভা।

Advertisement

ডিসেম্বর, ২০১৬-তে আক্রান্ত হওয়ার পরে পাঁচ মাস লাগে তাঁর টেনিসে ফিরতে। ২০১৪-তে উইম্বলডন জেতার পরে শনিবারই প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে খেলতে নামবেন তিনি। ছুরিকাহত হওয়ার পরবর্তী সময়টা যে কতটা কঠিন ছিল, এখনও চোখ বুজলে দেখতে পান কুইতোভা। বলছেন, ‘‘বিশেষ করে প্রথম তিনটে মাস খুব, খুব কঠিন ছিল। মানসিক ভাবে আমাকে খুব শক্ত হতে হয়েছিল। চেষ্টা করতাম প্রত্যেক দিন নিজেকে বোঝানোর যে, নেতিবাচক কথা ভেবো না। তবু অজানা আশঙ্কা চলেই আসত। কোনও সন্দেহ নেই, সংগ্রামের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ফের গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালে পৌঁছতে পেরেছি।’’ শনিবার মেয়েদের ফাইনালে কুইতোভা মুখোমুখি হবেন নেয়োমি ওসাকার। এ দিন যিনি ক্যারোলিনা প্লিসকোভাকে হারালেন ৬-২, ৪-৬, ৬-৪ সেটে। গত মরসুমের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামে ওসাকা বড় অঘটন ঘটান ফাইনালে সেরিনাকে হারিয়ে। মেলবোর্নে এখন মারাত্মক গরম। বৃহস্পতিবারই ওসাকাদের খেলার সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি। তবে মেয়েদের দু’টি সেমিফাইনালই হল রড লেভার এরিনায় ছাদ ঢাকা অবস্থায়। ফাইনালে ওঠার সময়ই জাপানি তারকাকে নিয়ে আবার সরগরম বিতর্কও হাজির। তাঁর স্পনসর বিজ্ঞাপনে ওসাকার ত্বকের রং শ্বেতকায় করায় প্রচুর সমালোচনা হয়। যা নিয়ে পরে ক্ষমাও চাওয়া হয় ওই স্পনসরের তরফে। ফাইনালে উঠে ওসাকা বললেন, ‘‘জানতাম ক্যারোলিনা সহজে ছাড়ার মেয়ে না। আজ এমন কঠিন লড়াইয়ের জন্য তৈরিই ছিলাম।’’ যোগ করেছেন, ‘‘১-১ সেট হওয়ার পরে স্নায়ুর চাপে ভুগছিলাম। বিশেষ করে দ্বিতীয় সার্ভিসটা মারার সময় খুব ভয় করছিল। কোর্টেই নিজেকে বোঝাই, পরিস্থিতি যাই হোক ফোকাস নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। ভাল লাগছে শেষ সেটটা এতটা সহজে জিততে পেরে।’’

ওসাকা যাঁর সঙ্গে ট্রফির লড়াইয়ে নামবেন শনিবার, তিনি সকলের কাছে ভয় জয় করার উদাহরণ হতে পারেন। আর তাঁর কাছে অতীতের আর এক ছুরিকাহত মহিলা টেনিস খেলোয়াড় মণিকা সেলেস হয়ে উঠেছিলেন প্রেরণা। কুই কুইতোভা নিজেই এ দিন জানান, গত গ্রীষ্মে মণিকা সেলেসের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ১৯৯৩-এ হামবুর্গে একটি টুর্নামেন্টে ম্যাচ চলাকালীন কোর্টের মধ্যেই ছুরিকাহত হন সেলেস। তখন তিনি বিশ্বের এক নম্বর। দু’বছর তাঁকে খেলার বাইরে থাকতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন