বাগানে দুই মহারথী আর সারথির আড্ডা

ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে ছ’পয়েন্ট না এগোলে দুর্গাপুরে আছি

জাতীয় সড়কের ধারে বাগান টিম হোটেল থেকে গোয়ার সমুদ্রতট এক মাইলেরও দূরে। তবু টিমকে চাঙ্গা রাখতে সনি-জেজেদের সমুদ্র স্নানে নিয়ে গেলেন সঞ্জয় সেন। সেখানেই টিম মিটিং। বাগান কোচ তাঁর পুরো টিমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘‘শুনেছি সমুদ্র নাকি যা নেয়, তা ফিরিয়ে দেয়। এখানে তাই প্রার্থনা করো যাতে আই লিগ ট্রফিটা আবার ফিরে আসে।’’ রবিবাসরীয় মোহন-আড্ডার প্রত্যক্ষদর্শী শুধু আনন্দবাজার।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৪:১৯
Share:

বসন্তের বাগানে আড্ডা। গ্লেন-সঞ্জয়-সনি।

জাতীয় সড়কের ধারে বাগান টিম হোটেল থেকে গোয়ার সমুদ্রতট এক মাইলেরও দূরে। তবু টিমকে চাঙ্গা রাখতে সনি-জেজেদের সমুদ্র স্নানে নিয়ে গেলেন সঞ্জয় সেন। সেখানেই টিম মিটিং। বাগান কোচ তাঁর পুরো টিমকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘‘শুনেছি সমুদ্র নাকি যা নেয়, তা ফিরিয়ে দেয়। এখানে তাই প্রার্থনা করো যাতে আই লিগ ট্রফিটা আবার ফিরে আসে।’’
উত্তপ্ত বালিয়াড়ির উপর দৌড়োদৌড়ি। সামান্য গা ঘামানো। বিচ ফুটবলও হল। চলল সমুদ্রস্নান। সেখান থেকেই শুরু তিনজনের টুকরোটাকরা কথা। সি-বিচ টু টিম হোটেল। লবিতে আড্ডা। দেখা গেল, দুই মহারথী সনি নর্ডি আর কর্নেল গ্লেনের সঙ্গে টিমের সারথি সঞ্জয় সেনের ভাবনায় মিল যেমন প্রচুর, অমিলও কম নয়। তবে একটা ব্যাপারে সবাই একমত— আই লিগ খেতাব অটুট রাখার এ রকম সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না কিছুতেই। রবিবাসরীয় মোহন-আড্ডার প্রত্যক্ষদর্শী শুধু আনন্দবাজার।

Advertisement

তা হলে মঙ্গলবার ওডাফার স্পোর্টিং ক্লুবকে হারালেই তো চ্যাম্পিয়নশিপের দোড়গোড়ায়?

সঞ্জয়: কী বলছেন? ইস্টবেঙ্গলের থেকে যতক্ষণ ছয় পয়েন্টে এগোচ্ছি ততক্ষণ আমি দূর্গাপুরেই দাঁড়িয়ে থাকব। দিল্লি অনেক দূর।

Advertisement

সনি: কোচের সঙ্গে আমি একমত। বাকি সাত ম্যাচের পাঁচটায় জিততেই হবে। তবেই স্বস্তি। আমাদের গায়ে-গায়ে দু’টো টিম আছে।

কর্নেল: (ন্যাড়া মাথায় হাত বুলিয়ে) আমি তো শেষ ম্যাচ না হওয়া পর্যন্ত বলব না ট্রফি আমাদের। কোচ আর সনি আগে আই লিগ পেয়েছে। আমি তো পাইনি। সে জন্যই ভয়টা বেশি আমার। বাগানে তো ট্রফিটা পেতেই খেলতে এসেছি।

সঞ্জয়: কর্নেল ছেলেটা খুব ভাল। প্রথমে বুঝতে পারিনি। টিমে সবার সঙ্গে যে ভাবে মেশে, দারুণ লাগে আমার। গোল আর ট্রফি দু’টোই চায়।

টানা ন’ম্যাচ অপরাজিত। তা সত্ত্বেও তিনজনই এত সতর্ক! ‘ঠিক মেরে দেব’-র আত্মবিশ্বাস নেই যেন। এটা ঠিক মানাচ্ছে না কিন্তু!

সঞ্জয়: আত্মবিশ্বাস নেই আমাদের, কে বলল? না থাকলে কি পরপর জিততাম! গত বার তো শিলং ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট করার পর সবাই ভেবেছিল, আর হল না। দু’পয়েন্ট পিছিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ট্রফি জিতেছিলাম। এটা লিগ। যে কোনও সময় পিছলে যেতে পারে কোনও টিম। তবে এটাও ঠিক যে, শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইছি না। বেঙ্গালুরু ম্যাচের আগে চ্যাম্পিয়ন হওয়া আমাদের টার্গেট। কিন্তু চাইলেই তো হবে না। করে দেখাতে হবে।

কর্নেল: গত বার আমি শিলং লাজংয়ে ছিলাম। কিন্তু কেন জানি না আমার মনে হয়েছিল সনিরাই চ্যাম্পিয়ন হবে। ওই বাগান টিমটাও যত দিন যাচ্ছিল, তত ভাল খেলছিল।

সনি: গত বারের চেয়ে এ বার আমাদের বেঞ্চ অনেক বেশি শক্তিশালী। এমন অবস্থা, যে খেলতে পারবে না তাকেই টিমের বাইরে ছিটকে যেতে হবে। সেটা আমি বা গ্লেন, যে কেউ হতে পারি।

সঞ্জয়: ইস্টবেঙ্গল যে-হেতু গায়ে গায়ে রয়েছে, ফিরতি ডার্বি জেতাটা খুব ইম্পর্ট্যান্ট। ওটা জিতলে ট্রফির দরজা অনেকটা খুলে যাবে আমাদের।

সনি: হ্যাঁ, ডার্বি জিততেই হবে। তবে আমি মনে হয় ওই ম্যাচটা খেলতে আসতে পারব না। দেশের হয়ে খেলতে চলে যাচ্ছি। ৩০ মার্চ হাইতি-পানামা প্রি ওয়ার্ল্ড কাপ আছে। তার দু’দিনের মধ্যে কী ভাবে অত দূর থেকে কলকাতা ফিরব বুঝতে পারছি না!

সঞ্জয়: সনি আসতে না পারলে কী আর করব! দেশের হয়ে তো খেলতে যেতেই হবে। তবে সনি ছাড়াও আমরা জিতেছি। তা ছাড়া ডার্বি অনেক দূর। এক মাস আগে থেকে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। পরশু স্পোর্টিং ম্যাচ জিততে হবে। ছেলেদের মনে করিয়ে দিয়েছি, দুটো ম্যাচ জেতার পর তিন নম্বরটায় আটকে যাচ্ছি। পয়েন্ট নষ্ট হচ্ছে। এই খারাপ ট্রেন্ড থামাতে হবে এ বার। আত্মতুষ্টির জায়গা নেই।

সনি: এটাতেও কোচের সঙ্গে আমি একমত। সালগাওকরের তুলনায় স্পোর্টিং ক্লুব ভাল টিম। ডাফির চেয়ে ওডাফা ভাল স্ট্রাইকার। ওডাফাকে স্কোরিং জোনে টার্ন করতে দিলেই বিপদ। কোচ ঠিকই বলেছে, এ বার টানা তিনটে ম্যাচ জিততে হবে। শেষ দু’টোয় জিতেছি। স্পোর্টিংকে হারানো তাই বড় চ্যালেঞ্জ আমাদের কাছে।

সঞ্জয়: আমার হিসেব বলছে, সনি সে দিন গোল করবে। দেখবেন, স্পোর্টিং ম্যাচ ওর গোলেই জিতব।

সনি: কোচ, আমি কিন্তু নিজের গোল নিয়ে ভাবি না। যে-ই গোল করুক, টিম জিতলেই হল।

কর্নেল: আমারও তাই মত। আমি না গোল করলে জেজে করবে, না হলে সাব্রোসা, না হলে সনি। টিম জিতলেই হল। যখন গোল পাচ্ছিলাম না তখন সবাই বলত গোল পাচ্ছ না কেন? তাদেরও আমি এই কথাটাই বলতাম। আসলে আমাদের টিম স্পিরিট কেমন, কেউ জানে না।

লুসিয়ানো, দেবজিৎ, কাতসুমি ও গ্লেন। রবিবাসরীয় গোয়ায়।

এর মাঝেই কলকাতা থেকে ফোন এল। ৩ মার্চ ফেডারেশনের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি বাগান কোচকে সমন পাঠিয়েছে দিল্লিতে হাজির হতে। টাম্পাইন্স রোভার্স ম্যাচ জেতার পর ফেডারেশনের সমালোচনা করার অভিযোগে। সঞ্জয়কে সমনের খবরটা দিলেন গোয়ায় আসা টিম ম্যানেজার। জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এখান থেকে দিল্লির টিকিট কাটতে বলব?’ সঞ্জয় গোড়ায় ক্ষুব্ধ হলেন। তার পর বললেন, ‘‘আমার শরীর খুব খারাপ। কলকাতায় ফিরেই ডাক্তার দেখাতে হবে। স্পোর্টিং ম্যাচের পরে ছ’দিন সময় পাব। ডাক্তার বারবার বলছেন বিশ্রাম নিতে। গোয়ায় না এলে সমস্যায় পড়ত টিম। খারাপও দেখাত। তাই এসেছি।’’

আড্ডা থেমে যায়। দিল্লি না গেলে কি শাস্তি হতে পারে সঞ্জয়ের? কোচ-ম্যানেজার আলোচনা হল। সঞ্জয়ের মেডিক্যাল সার্টিফিকেট পাঠানো হবে দিল্লিতে। সনি-গ্লেন একযোগে উৎকন্ঠা নিয়ে জানতে চান, কোচের কী হবে?

বাগান হোটেলে বসন্তের হাওয়া হঠাৎ-ই যেন থমকে যায়!

ছবি: উৎপল সরকার

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement