বোয়ার প্রাণপাত। বারাসতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
মোহনবাগান-১ (বোয়া)
এরিয়ান-০
তিনি যে মাঠে সশরীরে আছেন, তার প্রমাণ পাওয়া গেল ম্যাচের পঁচাত্তর মিনিটে। কলকাতা লিগে মোহনবাগানের আইকন ফুটবলার পিয়ের বোয়ার দ্বিতীয় গোলের পরে।
সেই যে সাইডলাইনের ধারে একবার উঠে দাঁড়ালেন, আর রিজার্ভ বেঞ্চে বসতে দেখা যায়নি। ম্যাচ শেষ হতেই ড্রেসিংরুমে। সেখান থেকে সোজা নিজের গাড়িতে চেপে নিউ আলিপুরের পথে। মুখে টুঁ শব্দ নেই!
সুভাষ ভৌমিক যে কতটা চাপে আছেন, সেটা বোঝার জন্য মনোবিদের সাহায্য লাগে না। তাঁর শরীরী ভাষাই তার পরিচয়পত্র। হয়তো সে জন্যই ডার্বি হারের পরে মোহনবাগান টানা দু’টো ম্যাচ জিতলেও, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না। উল্টে ‘মিশন এরিয়ান’ শেষ হতেই ‘মিশন বিএনআর’-এর প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন। বাকি তিনটে ম্যাচও যে জিততেই হবে ময়দানের ‘ভোম্বলদা’-কে।
কিন্তু এই মোহনবাগান কি আদৌ কলকাতা লিগ জেতার স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে পারবে? শনিবার বারাসত স্টেডিয়ামে যে মাপের ফুটবল উপহার দিলেন কাতসুমি-লালকমলরা, তাতে খুব নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। মোহনবাগান টানা দু’টো ম্যাচ জিতলে কী হবে? দু’টো দলই তো বিদেশিহীন। তার ওপর সাই আর এরিয়ানকে হারাতে যে ভাবে হোঁচট খেতে দেখা গেল সবুজ-মেরুন জার্সিধারীদের, তাতে আশার চেয়ে আশঙ্কার পাল্লাই বেশি ভারী। সেই মাঝমাঠে সমন্বয়ের অভাব, মিস পাসের ফুলঝুরি এবং ধুঁকতে ধুঁকতে প্রায় শেষ লগ্নে গোল। বাগান কোচ শঙ্করলাল ভট্টাচার্যের যুক্তি, “আমার হাতে ফুটবলার নেই। বেশির ভাগ ফুটবলার আইএসএল খেলতে বেরিয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় একটা নতুন দল খেলছে। আমি খুশি, আগের দিনের চেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
আর গোল? পরিস্থিতির চাপে নতুন দল হতে পারে। বোয়া-বলবন্তরা তো নতুন নন। নতুন মরসুমের শুরু থেকেই খেলছেন দুই স্ট্রাইকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত গোল চিনে উঠতে পারলেন না। মাঠে এমন এমন সুযোগ নষ্ট করছেন, যা চোখে দেখা যাচ্ছে না। বোয়ার গোলে শনিবার বাগানের মান রক্ষা হলেও, তাঁর ‘সৌজন্যে’ পয়েন্ট হারাতেও পারতেন সুভাষ। ম্যাচ শুরুর সাত মিনিটের মধ্যেই বাগানের ২-০ হয়ে যায় যে! বোয়ার সমস্যা হল, তিনি এখনও পুরোপুরি ফিট নন। গতি তো নেই-ই। আর গতির অভাব যে স্কিল দিয়ে ঢাকবেন, সেই ক্ষমতাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এরিয়ানের অর্ণব ভৌমিক বার বার আটকে দিলেন বাগানের এই আইকন ফুটবলারকে। পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা অর্ণব এ বছরই প্রথম সাই থেকে এরিয়ানে এসেছেন। তবে এ দিন ম্যাচের সেরা হলেন এরিয়ান গোলকিপার শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তনুময় বসুর ছাত্র। তাঁর এই পুরস্কারে বোয়ার ‘অবদান’ যেন ভোলার নয়!
শুধু অ্যাটাকিং থার্ড কেন, মাঝমাঠেও ঝাঁঝ নেই বাগানের। লালকমল ভৌমিকের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলার থাকা সত্ত্বেও চূড়ান্ত সমন্বয়ের অভাব। পঙ্কজ-তীর্থঙ্কররা খেই হারিয়ে ফেলছেন। একটা সময় তো কাতসুমিকেও ডিফেন্ডার হয়ে যেতে দেখা গেল। বল না পেলে কী আর করবেন? তবে কাতসুমির নতুন ভূমিকায় অবির্ভাব ঘটতেই গোলের দরজা খুলে যায় বাগানের। কাতসুমির পাস থেকে উজ্জ্বল হাওলাদারের শট এরিয়ানের অভীক গুহের গায়ে লেগে ফিরে আসতেই বোয়ার ফাঁকতালে গোল। যদিও এরিয়ান কোচ রাজদীপ নন্দীর দাবি, “পরিষ্কার অফসাইড। বড় টিম বলে ফ্ল্যাগ তুলল না রেফারি। এই ভাবে চলতে থাকলে ছোট দলগুলো শেষ হয়ে যাবে।”
রাজদীপকে জেতাতে এ দিন মাঠে এসেছিলেন তাঁর বাবা রঘু নন্দী। বিরতিতে ছেলেকে টিপস দেওয়া থেকে শুরু করে ম্যাচ চলাকালীন মোবাইলে বারবার পরামর্শ কোনওটাই বাদ দিলেন না। তবে লিগ আর বোয়া নিয়ে স্বস্তির চেয়ে অস্বস্তি বেশি থাকলেও, ভাগ্যদেবতা বোধহয় সুভাষের দিকেই ঝুঁকে ছিলেন!
মোহনবাগান: দেবজিৎ, জনি, প্রতীক, সুখেন, সতীশ, লালকমল, পঙ্কজ (শেহনাজ), বিক্রমজিৎ (বলবন্ত), তীর্থঙ্কর (উজ্জ্বল), কাতসুমি, বোয়া।