স্বপ্নার দাপটে ম্লান বাগানের জয়ের হ্যাটট্রিকও

পিয়ের বোয়া তাঁর দিকে তেড়ে গেলেন অন্তত দু’বার। বড় চেহারার ক্যামেরুন স্ট্রাইকারকে এক ধমকে চুপ করালেন তিনি। সতর্কও করলেন। রেলের বিরুদ্ধে পেনাল্টি দেওয়ার পর ঘিরে ধরলেন জেমস, পিন্টু, অসীমরা। মেয়ে রেফারিকে সামনে দেখেও বিশ্রী অঙ্গভঙ্গিও করলেন নাইজিরিয়ান জেমস। নিজের সিদ্ধান্তে কিন্তু অটল রইলেন শিলিগুড়ির মেয়ে। সবাইকে হটিয়ে অভিযুক্তকে কার্ডও দেখালেন।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:৫০
Share:

মোহনবাগান ২ (বলবন্ত, বোয়া পেনাল্টি)
বিএনআর ১ (কাজিম)

Advertisement

পিয়ের বোয়া তাঁর দিকে তেড়ে গেলেন অন্তত দু’বার। বড় চেহারার ক্যামেরুন স্ট্রাইকারকে এক ধমকে চুপ করালেন তিনি। সতর্কও করলেন।

Advertisement

রেলের বিরুদ্ধে পেনাল্টি দেওয়ার পর ঘিরে ধরলেন জেমস, পিন্টু, অসীমরা। মেয়ে রেফারিকে সামনে দেখেও বিশ্রী অঙ্গভঙ্গিও করলেন নাইজিরিয়ান জেমস। নিজের সিদ্ধান্তে কিন্তু অটল রইলেন শিলিগুড়ির মেয়ে। সবাইকে হটিয়ে অভিযুক্তকে কার্ডও দেখালেন।

ফাউলকে কেন্দ্র করে তর্কাতর্কি থেকে হাতাহাতির দিকে এগোচ্ছিলেন বাগানের উজ্জ্বল হাওলাদার আর রেলের অসীম দাশ। দৌড়ে এসে দু’জনের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়লেন তিনি। কড়া মনোভাব দেখিয়ে সরিয়ে দিলেন দু’দিকে।

ডার্বি হারের পর কলকাতা লিগে জয়ের হ্যাটট্রিক করল মোহনবাগান। কিন্তু বোয়া, বলবন্ত সিংহদের ফ্যাকাসে পারফরম্যান্সের দিনে আলো ছড়ালেন শিলিগুড়ির রাজবংশী পরিবারের এক মেয়েস্বপ্না বর্মন। বাঁশি মুখে বড় দলের ম্যাচ খেলাতে এখন হিমশিম খাচ্ছেন কলকাতার নামী রেফারিরা। প্রতিদিনই নানা গণ্ডগোল হচ্ছে। এই আবহে বাঁশি মুখে ছোটখাটো চেহারার স্বপ্নার ‘মাস্তানি’ চোখ টানল। গ্রিন পুলিশে চাকরি করেন বলেই সম্ভবত এতটা অকুতোভয়। দু’দিকে স্বদেশী-বিদেশি মিলিয়ে যুদ্ধের মেজাজে থাকা ফুটবলাররা। গ্যালারিতে আগুনে মেজাজে দর্শক। তাঁর মাঝে দাঁড়িয়ে শাসন করছেন এক জন মেয়ে। মাত্র একটা হলুদ কার্ড দেখিয়েই মুঠোয় রেখে ম্যাচ শেষ করলেন। স্বপ্নার ফিটনেস আর বলের কাছে পৌঁছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা দেখে কে বলবে এটাই তাঁর বড় দলের দ্বিতীয় ম্যাচ? তা-ও আবার প্রায় সাড়ে আট মাস পর। গত বছর ডিসেম্বরে ইস্টবেঙ্গল-পিয়ারলেস বড় ম্যাচ খেলানোর হাতেখড়ি হয়েছিল স্বপ্নার। তারপর আবার আজ। জুনে বিয়ে করেছেন। ম্যাচ খেলাননি অনেকদিন। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ফিটনেসও। সেই ‘বাধা’ পেরিয়ে মঙ্গলবার তিনি দেখালেন, যে রাধে সে চুলও বাঁধে।

স্বপ্নার পারফরম্যান্স দেখে রেফারি কর্তারা খুশি হলেও সুভাষ ভৌমিকের দলের খেলা দেখে আশ্বস্ত হতে পারছেন না বাগান কর্তা-সমর্থকরা। সাই, এরিয়ান এবং বিএনআরডার্বি হারের পর তিনটি দুর্বল দলকে সামনে পেয়ে জিতল বটে বাগান, কিন্তু সেটা হামাগুড়ি দিয়ে। প্রথম দু’টো জয়ের সময় প্রতিপক্ষ দলে কোনও বিদেশি ছিল না। রেলের হয়ে এ দিন খেললেন দুই নাইজিরিয়ানকাজিম আর জেমস। আর তাতেই সুভাষের টিমের রক্ষণের কঙ্কালসার চেহারাটা বেরিয়ে এল। একটা গোল হজমও করতে হল অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে।

কলকাতা লিগ জয়ের সুযোগ এখনও আছে বাগানের। তবে সেটা পুরোপুরি সুভাষের হাতে নেই। খেতাব পেতে হলে একই সঙ্গে দু’টো অঙ্ক মেলাতে হবে। এক) পরের দুটি ম্যাচে সাদার্ন সমিতি আর আর্মি একাদশের বিরুদ্ধে জিততেই হবে। দুই) পয়েন্ট নষ্ট করতে হবে ইস্টবেঙ্গল ও টালিগঞ্জ অগ্রগামীকে।

লিগ বাগান পাক বা না পাক, সুভাষ-ব্রিগেডের খেলা দেখে কিন্তু পাস মার্কের বেশি দেওয়া যাচ্ছে না। আইএসএল খেলতে দশ ফুটবলার চলে গিয়েছেন। পরে তাঁরা দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। সনি নর্ডিও এসে পড়বেন। তারপর কী হবে এখনই বলা সম্ভব নয়। কিন্তু আড়াই মাস অনুশীলনের পরও এই টিমটার মধ্যে কোনও বুনন-ই যে তৈরি হয়নি সেটা স্পষ্ট। রেলের মতো দুর্বল দলের বিরুদ্ধে লালকমল ছাড়া মাঝমাঠে তো কাউকে চোখেই পড়ল না। কিপার দেবজিৎ মজুমদার দুটো নিশ্চিত গোল না বাঁচালে সমস্যায় পড়ত বাগান।

৪-৪-১-১ ফর্মেশনে দল নামিয়েছিলেন বাগান টিডি। বলবন্তের পিছনে বোয়াকে রেখে। কিন্তু গোলের পাসটা ছাড়া ক্যামেরুন স্ট্রাইকার আর কিছু করেননি। ফিটনেসের দুরবস্থার কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। ফুটবলারটির গতি-ও তো ঠেলা গাড়ির চেয়ে সামান্য বেশি। উজ্জ্বল হাওলাদার, পঙ্কজ মৌলাকরিম বেঞ্চারিফার আমলে যা খেলতেন তার ধারেকাছেও তো নেই! আর বলবন্ত? গত বছর ফেড কাপ জিতিয়েছিলেন চার্চিল ব্রাদার্সকে। এ দিন সেই পঞ্জাব ফুটবলারটি যে সব সুযোগ নষ্ট করলেন, তাতে তাঁর লেখচিত্র-ও তো নিম্নমুখী।

রেলের এই টিমটার হাল খুবই খারাপ। দুই বিদেশি ছাড়া চোখে পড়ার মতো কোনও ফুটবলার টিমে নেই। বরুণ কুণ্ডুুর হাতে বল লাগায় বাগান পেনাল্টি পেল। ওটা না পেলে জেতা কঠিন ছিল বোয়াদের।

কলকাতা লিগেই এই হাল! আই লিগ বা ফেড কাপে কী হবে? সুভাষের টিম তাই এখনও স্বপ্ন দেখাচ্ছে না।

মোহনবাগান: দেবজিৎ, সতীশ, জনি, প্রতীক, সুখেন, লালকমল, পঙ্কজ (তীর্থঙ্কর), উজ্জ্বল, ফাতাই (বিক্রম), বোয়া, বলবন্ত (আদর্শ)।

অভব্যতা। রেফারি মহিলা। বিএনআর ফুটবলাররা শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেন বারবার। মঙ্গলবার যুবভারতীতে। ছবি: উৎপল সরকার

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন