প্রথম দিনে দেড়শো অলআউট, মাঠে ১২,০০০ দর্শক

দুরন্ত শামিদের গতির বাণে বিদ্ধ বাংলাদেশ ব্যাটিং

শিশু দিবসে ভারতীয় বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে শিশুর মতোই দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের। প্রত্যেক পদক্ষেপেই অনভিজ্ঞতার প্রভাব স্পষ্ট।

Advertisement

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত

ইনদওর শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২৯
Share:

আগ্রাসী: বাংলাদেশের প্রধান ভরসা মুশফিকুরকে ফিরিয়ে উল্লাস মহম্মদ শামির। তিন উইকেট নিয়ে নায়ক তিনিই। এপি

শেষ কবে ভারতের মাটিতে টেস্ট নিয়ে সমর্থকদের এত উন্মাদনা দেখা গিয়েছে, তা হয়তো মনে করতে পারবেন না ক্রিকেটপ্রেমীরা। বৃহস্পতিবার ভারত-বাংলাদেশ প্রথম টেস্টের প্রথম দিন ২৮ হাজার দর্শকাসনের ১২ হাজারই ভরে গিয়েছিল হোলকার স্টেডিয়ামে। শিশু দিবস উপলক্ষে স্কুল, কলেজ বন্ধ। প্রিয় তারকাদের সামনে থেকে দেখার জন্য পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মাঠে ভিড় করেছিল খুদেরা।

Advertisement

শিশু দিবসে ভারতীয় বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে শিশুর মতোই দেখিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের। প্রত্যেক পদক্ষেপেই অনভিজ্ঞতার প্রভাব স্পষ্ট। মহম্মদ শামি, উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মা ও আর অশ্বিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছেন মাহমুদুল্লা, লিটন দাসেরা। ভারতের বিরুদ্ধে তাদের টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ অভিযান শুরু হওয়ার প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশ অলআউট ১৫০ রানে। তিন উইকেট মহম্মদ শামির। দু’টি করে উইকেট অশ্বিন, উমেশ ও ইশান্তের। অজিঙ্ক রাহানে ও বিরাট কোহালি তুলনামূলক সহজ ক্যাচ না ফস্কালে একশো রানের গণ্ডিও তাঁরা পেরতে পারতেন কি না সন্দেহ।

এ দিন শুরু থেকেই ভারতীয় বোলারদের ভয় পেতে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ইমরুল কায়েস ও শাদমান ইসলাম কিছুতেই ইশান্ত ও উমেশের সুইংয়ে খেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সপ্তম ওভারের মাথায় দু’জনেই ফিরে গেলেন প্যাভিলিয়নে। উমেশের অতিরিক্ত বাউন্সের আন্দাজ না পেয়ে গালিতে ক্যাচ দেন কায়েস (৬)। ইশান্তের ইনসুইংয়ে (বাঁ-হাতির ক্ষেত্রে আউটসুইং) প্রলুব্ধ হয়ে কভার ড্রাইভ করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড শাদমান (৬)। মহম্মদ মিঠুনও শামির আউটসুইংয়ের নাগাল পাননি। ফ্লিক করতে গিয়ে তাঁর শরীর ঘুরে যায়। প্যাডে আছড়ে পড়ে ভারতীয় পেসারের ডেলিভারি।

Advertisement

আরও পড়ুন: নির্দেশ নয়, তবে হতেই পারে তদন্ত, সুপ্রিম কোর্টের রাফাল-রায়ে চাঙ্গা দু’পক্ষই

৩১ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বড় রানের স্বপ্ন প্রায় শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের। ঘাসে ভরা উইকেটে ভারতীয় পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যাট করার সিদ্ধান্তের ফলই ভোগ করতে হল মোমিনুলকে। দিনের শেষে তিনি মেনেও নিলেন, ‘‘টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত আমার ঠিক ছিল না।’’ কিন্তু তিন উইকেট পড়ার পর থেকে কিছুটা ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে বাংলাদেশ। ৬৮ রান যোগ করেন মোমিনুল ও মুশফিকুর রহমান। সেটাও হত না যদি মুশফিকুরের দু’টি সহজ ক্যাচ ভারত ফেলে না দিত।

২৪তম ওভারের প্রথম বলে তৃতীয় স্লিপে মুশফিকুরের ক্যাচ ফেলেন বিরাট। তখন প্রাক্তন বাংলাদেশ অধিনায়কের রান তিন। উমেশের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি ভাবতেই পারেননি অধিনায়কের হাত থেকে এ ধরনের ক্যাচ পড়তে পারে। লাঞ্চের পরে দ্বিতীয় ওভারে ফের মুশফিকুরের ব্যাট ছুঁয়ে স্লিপে চলে যায় অশ্বিনের ডেলিভারি। একেবারে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন রাহানে। আত্মবিশ্বাস ফিরে পান বাংলাদেশের সব চেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ১০৫ বলে ৪৩ রান করার পরে তাঁকে অবিশ্বাস্য ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন শামি। গুড লেংথ থেকে ভিতরে কাট করে মুশফিকুরের ব্যাট ও পায়ের মধ্যে দিয়ে অফস্টাম্পে আছড়ে পড়ে শামির স্বপ্নের ডেলিভারি। অবাক হয়ে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না তাঁর। আগেও বহু বার ব্যাট ও পায়ের ফাঁক দিয়ে আউট হয়েছেন মুশফিকুর। কারণ, তিনি কাট করতে পছন্দ করেন। ফলে ব্যাট ও পায়ের মধ্যে অনেকটা ফাঁক তৈরি হয়। শামি বেশ কয়েকটি বল আউটসুইং করিয়ে তাঁকে বোকা বানান এই মোক্ষম চালে। ভারতীয় পেসারের হাতে যে কী জাদু আছে, তার কোনও আন্দাজই পাননি মুশফিকুর। গ্যালারি থেকে ধ্বনি শোনা যায়, ‘‘শামি..... শামি.....।’’ অধিনায়ক বিরাটও গ্যালারির উদ্দেশে হাত তুলে সমর্থকদের তাতাতে থাকেন। ঠিক তার পরের বলেই উইকেট। শামির রিভার্স সুইংয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান মেহদি হাসান মিরাজ। হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি হয় ভারতীয় পেসারের। কিন্তু দীপক চাহারের উৎসব টেস্টে করা হয়নি শামির। তবে দলের হ্যাটট্রিক পূরণ হয় চা-বিরতির পরের বলেই। ইশান্তের রিভার্স সুইং লিটনের (২১) ব্যাট ছুঁয়ে চলে যায় বিরাটের হাতে। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৪০-৬ থেকে ১৫০ অলআউট। শেষ পাঁচটি উইকেট হারায় দশ রানে।

আরও পড়ুন: তদন্তের দাবিতে অটলই রাহুল

ভারতের আগ্রাসী পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে এই শক্তিহীন বাংলাদেশ যে খুব একটা লড়াই করবে তা আশা করাও ভুল। শেষ টেস্টে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠেও যারা জিততে পারেনি, বিশ্বের এক নম্বর দলের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই দেখতে পাওয়ার আশাও তাই ক্ষীণ। মোমিনুল বুধবারই বলে দিয়েছিলেন, ‘‘আমাদের উপরে কোনও প্রত্যাশা নেই। জেতার কথা ভেবে নিজেদের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে চাই না।’’ তাঁর আউট হওয়ার ভঙ্গিও অবাক হওয়ার মতো। ক্রিজে ১৩৮ মিনিট কাটানোর পরে অশ্বিনের বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেন। ৮০ বল খেলার পরেও তাঁর অফস্টাম্প কোথায়, তা আন্দাজ করতে পারেননি।

যে পিচে বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারেনি, সেখানে দিনের শেষে ২৬ ওভারে ভারতের রান এক উইকেট হারিয়ে ৮৬। এমনকি, চেতেশ্বর পুজারা পর্যন্ত ৭০-এর স্ট্রাইক রেটে রান তুলছেন। যা একেবারেই তাঁর চরিত্র-বিরোধী। ৬১ বলে তিনি অপরাজিত ৪৩ রানে। ৮১ বলে মায়াঙ্ক আগরওয়াল অপরাজিত ৩৭। দিনের শেষে আবু জায়েদের বলে মায়াঙ্কের সহজ ক্যাচ যদি কায়েস না ফেলতেন, তা হলে নাইটওয়াচম্যান নামানোর সিদ্ধান্ত হয়তো নিতে হত বিরাটকে। কিন্তু রোহিত শর্মা ছয় রানে ফিরে যাওয়ার পরেও ভারত কিন্তু রানের গতি কমায়নি। আসলে তাদের সব চেয়ে বড় আতঙ্ক মুস্তাফিজুর রহমানকেই খেলায়নি বাংলাদেশ। খেলানো হয়নি আল আমিন হোসেনকেও। মোমিনুলের ব্যাখ্যা, ‘‘আমাদের সব পেসার চার দিন খেলার মতো উপযুক্ত নয়। যারা চার দিন খেলতে পারবে, তাদেরই দলে নেওয়া হয়েছে।’’ বিপক্ষ অধিনায়ক যদি নিজের দলের ক্রিকেটারদের উপরেই ভরসা রাখতে না পারেন, তা হলে র‌্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর টেস্ট দলের বিরুদ্ধে কী করে তাঁরা লড়াই করবেন!

স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ ১৫০ (৫৮.৩)
ভারত ৮৬-১ (২৬)

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)
শাদমান ক ঋদ্ধি বো ইশান্ত ৬•২৪
ইমরুল ক রাহানে বো উমেশ ৬•১৮
মোমিনুল হক বো অশ্বিন ৩৭•৮০
মিঠুন এলবিডব্লিউ শামি ১৩•৩৬
মুশফিকুর বো শামি ৪৩•১০৫
মাহমুদুল্লা বো অশ্বিন ১০•৩০
লিটন ক কোহালি বো ইশান্ত ২১•৩১
মেহেদি এলবিডব্লিউ শামি ০•১
তাইজুল রান আউট (জাডেজা/ঋদ্ধি) ১•৭
আবু জায়েদ অপরাজিত ৭•১৪
এবাদত হোসেন বো উমেশ ২•৫
অতিরিক্ত ৪
মোট ১৫০ (৫৮.৩)
পতন: ১-১২ (ইমরুল, ৫.৬), ২-১২ (শাদমান, ৬.৬), ৩-৩১ (মিঠুন, ১৭.৬), ৪-৯৯ (মোমিনুল, ৩৭.১), ৫-১১৫ (মাহমুদুল্লা, ৪৫.১), ৬-১৪০ (মুশফিকুর, ৫৩.৫), ৭-১৪০ (মেহেদি, ৫৩.৬), ৮-১৪০ (লিটন, ৫৪.১), ৯-১৪৮ (তাইজুল, ৫৬.৪), ১০-১৫০ (এবাদত, ৫৮.৩)।
বোলিং: ইশান্ত শর্মা ১২-৬-২০-২, উমেশ যাদব ১৪.৩-৩-৪৭-২, মহম্মদ শামি ১৩-৫-২৭-৩, আর অশ্বিন ১৬-১-৪৩-২, রবীন্দ্র জাডেজা ৩-০-১০-০।
ভারত (প্রথম ইনিংস)
মায়াঙ্ক আগরওয়াল ব্যাটিং ৩৭•৮১
রোহিত ক লিটন বো আবু জায়েদ ৬•১৪
চেতেশ্বর পূজারা ব্যাটিং ৪৩•৬১
অতিরিক্ত ০
মোট ৮৬-১ (২৬)
পতন: ১-১৪ (রোহিত, ৭.২)।
বোলিং: এবাদত হোসেন ১১-২-৩২-০, আবু জায়েদ ৮-০-২১-১, তাইজুল ইসলাম ৭-০-৩৩-০।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন