Bangladesh vs England

চট্টগ্রামের বদলা ঢাকায়! মিরাজ, সাকিব গুঁড়িয়ে দিল ইংল্যান্ডকে

ইতিহাসে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে দিল একদল বাঙালি। শুরু করলেন মেহেদি, শেষও করলেন তিনি। ফিনকে এলবিডব্লু করেই উইকেট তুলে দৌঁড় শুরু করলেন সদ্য টেস্ট ক্রিকেটে নাম লেখানো এই ছেলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৬ ১৬:৩৬
Share:

শেষ উইকেটের পর উচ্ছ্বাসে মাতল বাংলাদেশ। ছবি: রয়টার্স।

বাংলাদেশ ২২০ ও ২৯৬

Advertisement

ইংল্যান্ড ২৪৪ ও ১৬৪

ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ইংল্যান্ডকে ১৬৪ রানেই গুঁড়িয়ে দিয়ে টেস্টে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। টাইগারদের ছুঁড়ে দেওয়া ২৭৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল করলেও মিরাজের বোলিংয়ের তোপে ক্রিজে দাঁড়াতে পারেনি ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। ফলে সাকিব-মিরাজ-তামিমদের জয়টা ১০৮ রানের। এই জয়ের সঙ্গেই দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-১ এ সমতায় ফিরল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো ইংলিশদের হারাল টাইগাররা।
ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ সব উইকেট হারিয়ে তোলে ২৯৬ রান, তাতে টাইগারদের লিড দাঁড়ায় ২৭২ রানে।
২-০ তে সিরিজ জিততে হলে ইংল্যান্ডকে ঢাকা টেস্ট জিততেই হতো। কারণ এর আগে ২০১০ সালে ইংল্যান্ড সর্বশেষ ২০৯ রান চেজ করে জয় পেয়েছিল, সেটিও আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ঢাকার মাটিতে। এর বেশি রান লক্ষ্য করে কখনওই জিততে পারেনি ইংল্যান্ড।
এর আগে টাইগারদের প্রথম ইনিংসে তোলা ২২০ রানের জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৪৪ রান তুলে অলআউট হয় সফরকারি ইংল্যান্ড। ম্যাচের দ্বিতীয় দিন কুকদের থেকে ২৪ রানে পিছিয়ে থেকে টাইগারদের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং শুরু করেন তামিম ইকবাল এবং ইমরুল কায়েস। দ্বিতীয় দিন শেষে হোম টিম ৩ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৫২ রান।
ইনিংসের ১৩তম ওভারে তামিমের বিদায়ে বাংলাদেশের প্রথম উইকেটের পতন ঘটে। ৪৭ বলে ৪০ রান করতে তামিম সাতটি বাউন্ডারি হাঁকান। জাফর আনসারির বলে ইংল্যান্ড অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুকের হাতে ধরা পড়েন তামিম। ৭৭ বলে ৬৫ রানের ওপেনিং জুটি এনে দেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস।
এরপর বেন স্টোকসের লাফিয়ে ওঠা বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে দাঁড়ানো কুকের তালুবন্দি হন ১ রান করে বিদায় নেন মুমিনুল হক। দলের ৬৬ রানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারায়। জুটি গড়েন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ এবং ইমরুল। দিন শেষে টেস্ট কেরিয়ারের চতুর্থ অর্ধশত রান হাঁকিয়ে ইমরুল কায়েস ৫৯ রানে (৮১ বল) অপরাজিত ছিলেন। তবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ দিনের একেবারে শেষ বলে জাফর আনসারিকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বোল্ড হন। ৪৭ রানে বিদায় নিতে হয় রিয়াদকে।

Advertisement

যাঁর হাতে পরাস্ত ইংল্যান্ড। বল হাতে সেই মেহদি হাসান মিরাজ। ছবি: রয়টার্স।

তৃতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নেমে আগের দিন ৫৯ রানে অপরাজিত থাকা ইমরুল কায়েসের ব্যাটে টাইগারদের লিড বেড়েই চলছিল। তবে, ইনিংসের ৪৬তম ওভারে মঈন আলির বল সুইপ করতে গিয়ে এলবির ফাঁদে পড়েন টাইগার ওপেনার। বিদায় নেন ৭৮ রানে। দলীয় ২০০ রানের মাথায় বাংলাদেশ চতুর্থ উইকেট হারায়।
জুটি গড়েন সাকিব-মুশফিক। ব্যক্তিগত ২৩ রানে বেন ডাকেট ক্যাচ মিস করলে জীবন পান সাকিব। ডিপ মিডউইকেটে বেন ডাকেটের ব্যর্থতার মাঝে ৬ রানে থাকা মুশফিকের কঠিন একটি ক্যাচ ছেড়ে দেন স্টিভেন ফিন। ব্যক্তিগত ৪১ রানে আউট হন সাকিব। ইনিংসের ৫৫তম ওভারে আদিল রশিদের বলে বোল্ড হন ৮১ বলে ছয়টি চারে ইনিংস সাজানো সাকিব। এরপর সাকিবের পথ ধরেন ৯ রান করা মুশফিকও। বেন স্টোকসের করা বলে অ্যালিস্টার কুকের তালুবন্দি হন মুশফিক।
এরপর বিদায় নেন সাব্বির রহমান। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটে ছিলেন সাব্বির রহমান-শুভাগত হোম। ২৭ বলে ৩০ রানের জুটি গড়েন তারা। ১৭ বলে তিনটি চারের সাহায্যে ১৫ রান করা সাব্বির ইনিংসের ৬১তম ওভারে লাঞ্চের ঠিক আগে আদিল রশিদের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন। দলীয় ২৬৮ রানের মাথায় স্বাগতিকদের সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে।
তৃতীয় দিনের প্রথম সেশন শেষে (লাঞ্চ বিরতি) বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ২৬৮/৭। লাঞ্চের পর দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই বিদায় নেন ৫ রান করা তাইজুল ইসলাম। বেন স্টোকসের করা বলে উইকেটের পেছনে বেয়ারস্টোর গ্লাভসবন্দি হন তিনি। দলীয় ২৭৩ রানের মাথায় বাংলাদেশ অষ্টম উইকেট হারায়। মাত্র ২ রান করে ফেরেন মিরাজ। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন ৭ রান করা রাব্বি। রাব্বির বিদায়ে ২৯৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
ইংলিশদের হয়ে চারটি উইকেট নেন আদিল রশিদ। বেন স্টোকস তিনটি উইকেট নেন, দুটি উইকেট নেন জাফর আনসারি। বাকি একটি উইকেট পান মঈন আলী।
২৭৩ রানের টার্গেটে নামে ইংল্যান্ড। চা-বিরতির পর তৃতীয় সেশনের প্রথম বলেই বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ওপেনার বেন ডাকেটকে সরাসরি বোল্ড করে ফেরান ডানহাতি স্পিনার মিরাজ। ৬৪ বলে সাত চার ও এক ছক্কায় ৫৬ রান করেন ডাকেট। পরের ওভারেই জো রুটকে (১) এলবির ফাঁদে ফেলেন সাকিব। ১০০ রানে প্রথম উইকেটের পতন হওয়ার পর দলীয় ১০৫ রানের মাথায় ইংলিশদের দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটে।
দলীয় ১২৪ রানের মাথায় মেহেদির দুর্দান্ত ঘূর্ণিতে বোকাবনে যান গ্যারি ব্যালেন্স। তামিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৫ রান। একই ওভারে মিরাজ ফিরিয়ে দেন নতুন ব্যাটসম্যান মঈন আলীকে। এলবির ফাঁদে পড়ার আগে মঈনের ব্যাট থেকে কোনো রান আসেনি। দলীয় ১২৪ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেটের পতন হয় সফরকারীদের।

জয়ের উল্লাস। ছবি: রয়টার্স।

ইনিংসের ৩৩তম ওভারে মিরাজের বলে শর্টে দাঁড়ানো মুমিনুলের তালুবন্দি হন ইংলিশ দলপতি অ্যালিস্টার কুক। বিদায়ের আগে ১১৭ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৫৯ রান করেন কুক। দলীয় ১২৭ রানের মাথায় পঞ্চম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
এরপর নিজের পঞ্চম আর দলের হয়ে ষষ্ঠ উইকেটটিও তুলে নেন মিরাজ।
এরপর ইনিংসের ৩৮তম ওভারে বেয়ারস্টোকে (৩) শুভাগত হোমের হাতে ধরা দিতে বাধ্য করেন টাইগার মিরাজ। নিজের পঞ্চম আর দলের হয়ে ষষ্ঠ উইকেটটিও নেন তিনি। দলীয় ১৩৯ রানের মাথায় ইংলিশদের ছয় ব্যাটসম্যান প্যাভেলিয়নে ফেরেন। এরপর ৪৩তম ওভারে বোলিং আক্রমণে এসে সাকিব ফিরিয়ে দেন বেন স্টোকসকে। একই ওভারে সাকিব ফিরিয়ে দেন আদিল রশিদকে। এলবির ফাঁদে পড়ে রশিদ ফেরেন শূন্য রানে। তাতে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগে সাকিবের। এক বল পরেই সাকিব ফেরান জাফর আনসারিকে। এক ওভারে তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে ওভার হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সাকিব।
দলীয় ১৬৪ রানের মাথায় ইংলিশদের শেষ ব্যাটসম্যান স্টিভেন ফিনকে ফেরান মিরাজ। টাইগারদের হয়ে মিরাজ ৬টি, সাকিব ৪টি উইকেট দখল করেন।
এরই মধ্য দিয়ে ঢাকা টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ১২৯ বছরের রেকর্ড ভাঙেন বাংলাদেশের ডানহাতি অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ।
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে টেস্ট অভিষেক হয় ডানহাতি এই অফস্পিনারের। সে ম্যাচেই বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন মিরাজ। চট্রগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৬ এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেট নিয়ে নতুন রেকর্ডের পথে এগিয়ে ছিলেন মিরাজ।
এরপর অভিষেক দ্বিতীয় টেস্ট ঢাকা টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে ১২৯ বছরের রেকর্ড ভাঙার স্বপ্ন দেখেন মিরাজ। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টে ৫ উইকেট করে নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি।
নতুন রেকর্ড গড়ার হাতছাড়ি যেন মিরাজকে আরও উইকেট ভাঙার স্বপ্নে বিভোর করে দেয়। ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে আরও ৬ উইকেট নিয়ে স্বপ্নের চূড়ায় পা রাখেন বাংলাদেশের আশা জাগানো ডানহাতি এই অফস্পিনার।
মাত্র ১৯ বছর বয়সী মিরাজ অভিষেকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ ১৯ উইকেট নিয়ে ১২৯ বছরের রেকর্ড ভাঙলেন। গড়লেন নতুন রেকর্ড।
এর আগে ১৮৮৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার বাঁহাতি পেসার জন জেমস ফেরিস অভিষেকে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট নিয়েছিলেন। অ্যাশেজে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিডনিতে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ফেরিস পান ৫ উইকেট। নিউ সাউথ ওয়েলসের এ পেসার একই মাঠে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫টি ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪টি উইকেট নিয়েছিলেন।

আরও খবর

মুস্তাফিজুরের পর মিরাজের ইতিহাস

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন