Cricket

বিষ্ণোইকে তখন তুলে নেওয়াই বড় ভুল হল

নিখুঁত বোলিংয়ের মিশেল এক অচেনা বাংলাদেশের ছবি তুলে ধরল ক্রিকেটবিশ্বের কাছে।

Advertisement

লক্ষ্মীরতন শুক্ল

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:২৯
Share:

উৎসব: অথর্ব আঙ্কোলেকরকে ফিরিেয় দিয়ে উল্লাস বাংলাদেশের বোলার অভিষেক দাসের। রবিবার পোচেস্ট্রুমে যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে। পিটিআই

যে কোনও দেশের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ তুলে আনার জন্য দুরন্ত মঞ্চ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। এই প্রতিযোগিতা থেকে ক্রিকেটবিশ্ব যেমন হরভজন সিংহ, মহম্মদ কাইফ, যুবরাজ সিংহ, বিরাট কোহালিদের পেয়েছে। তেমনই উঠে এসেছে স্টিভ স্মিথ, শিমরন হেটমায়ার, গ্রেম স্মিথরা। ক্রিকেটবিশ্বের ‘সাপ্লাই লাইন’ বলা যেতে পারে এই প্রতিযোগিতাকে।

Advertisement

যুব বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আমারও রয়েছে। ১৯৯৮-তে বীরেন্দ্র সহবাগ, হরভজন সিংহও ছিল আমাদের দলে। তখন থেকেই সহবাগ শিস দিতে দিতে ব্যাট করত। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতাম, ছেলেটার মধ্যে কি কোনও স্নায়ুর চাপ কাজ করে না? তেমনই হরভজন সিংহ এখনকার মতোই কিছুটা খামখেয়ালি। মনে পড়ছে, একটি ম্যাচে দু’পায় দু’রকম জুতো পরে মাঠে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু ওর আগ্রাসনটাই ছিল মূল অস্ত্র।

রবিবার পোচেস্ট্রুমে ভারত-বাংলাদেশ দ্বৈরথে দু’দলের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিল এই আগ্রাসন। বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের আক্রমণাত্মক মনোভাব শুরু থেকেই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছিল ভারতকে। সেই সঙ্গেই নিখুঁত বোলিংয়ের মিশেল এক অচেনা বাংলাদেশের ছবি তুলে ধরল ক্রিকেটবিশ্বের কাছে। টসে হেরে শুরুতে ব্যাট করে ১৭৭ রানে শেষ হয়ে যায় ভারতের ইনিংস। জবাবে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে তিন উইকেটে জিতল বাংলাদেশ। শেষ ৯ ওভার বাকি থাকতে ম্যাচ বন্ধ করতে বাধ্য হন আম্পায়ারেরা। তখন ৫৪ বলে ১৫ রান বাকি। ডি-এল পদ্ধতির অঙ্কে তখনও ভারতের চেয়ে ১৮ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ। হাতে তিন উইকেট। একটি উইকেটের পতন ফের ভারতকে ম্যাচে ফেরাতে পারত। কিন্তু প্রিয়ম গর্গদের মাথার উপরেও তখন কালো মেঘ। শেষরক্ষা হল না। ৪২তম ওভারে বৃষ্টি থেমে শুরু হয় ম্যাচ। মাত্র সাত রানের লক্ষ্যে নামতে হয় বাংলাদেশকে। নতুন রূপকথা রচনা করে ড্রেসিংরুমে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলি ও রাকিবুল হাসান। অপরাজিত ৪৩ রানের অপূর্ব ইনিংস খেলে আকবর বুঝিয়ে দেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হাতে উঠতে চলেছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ঠান্ডা মাথার এই ‘ফিনিশার’-এর নেতৃত্বে নতুন অধ্যায় শুরু হল পদ্মাপাড়ের ক্রিকেটে

অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করবেন, এতটা আগ্রাসনের প্রয়োজন ছিল কি না। আমি বলব, ২০০০ সালের ক্রিকেটের সঙ্গে এখনকার ক্রিকেটের তুলনা হয় না। এখন আগ্রাসন না থাকলে বড় প্রতিযোগিতায় ভাল ফল করা যায় না। কিন্তু ম্যাচ শেষের দৃশ্য হতাশজনক। ‘জেন্টলম্যান’স গেম’-এর সঙ্গে এই দৃশ্য মেলানো যায় না। খুবই খারাপ একটি উদাহরণ হয়ে থাকল ম্যাচ শেষের এই দৃশ্য।

যদিও ম্যাচ চলাকালীন বিপক্ষের আগ্রাসনের সঙ্গে শুধু একজন ভারতীয়ই মানাতে পেরেছিল। সে যশস্বী জয়সওয়াল। বাঁ-হাতি পেসার শোরিফুল ইসলামের চোখে চোখ রেখে লড়াই করে গেল। ৮৮ রান করতে ১২১ বল হয়তো নিয়েছে। কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাট করে গিয়েছে যশস্বী। শোরিফুলদের অতি-উত্তেজক উৎসব ও স্লেজিংয়েও মনঃসংযোগ নষ্ট করেনি। বাকিরাও যদি যশস্বীকে একটু সঙ্গ দিত, তা হলে পঞ্চম বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিরতে পারত ভারত। ভারতের শেষ সাতটি উইকেট পড়েছে ২১ রানে। তার মধ্যে তিনটি রান আউট। এতগুলো রান আউট হলে যে কোনও দলের মনোবল নষ্ট হয়ে যায়।

পাশাপাশি বোলিংয়ের সময়েও অধিনায়ক প্রিয়মের কিছু সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের কাজটা সহজ করে দেয়। আমার মনে হয়েছে, রবিকে টানা স্পেল করাতে পারত প্রিয়ম। ছয় ওভারে ১৫ রানে চার উইকেট পাওয়ার পরে ওর আত্মবিশ্বাসও ছিল তুঙ্গে। কিন্তু সেই পরিস্থিতিতে সুশান্ত মিশ্রকে এনে রবির ছন্দ নষ্ট করে দিল প্রিয়ম। যে দিক থেকে রবি উইকেট পাচ্ছিল, সেই প্রান্ত পরিবর্তন করে ওকে নিয়ে আসে ভারত অধিনায়ক। ২২তম ওভারে অন্য প্রান্ত থেকে বল করতে এসে দশ রান দেয় রবি। তার পরে ফের ২৯তম ওভারে ফেরানো হয় ওকে। মাঝের সাত ওভার পেসার দিয়ে বল করানোর যুক্তি খুঁজে পেলাম না। প্রয়োজনের চেয়ে স্পিনারদের কম ব্যবহার করেছে প্রিয়ম। অথর্ব আঙ্কোলেকরকে চার ওভারের বেশি বল করায়নি। ব্যবহার করতে পারেনি যশস্বীর লেগস্পিনও। ভারতীয় পেস ব্যাটারি বিশ্বকাপ জুড়ে দুরন্ত বল করলেও এ ম্যাচে একেবারে ছন্দহীন। বাংলাদেশের ১৭০ রানের মধ্যে ৩৩ রানই অতিরিক্ত। দু’টি বিমারের সঙ্গে একাধিক ওয়াইড, বাংলাদেশকে ম্যাচের মধ্যে থাকতে সাহায্য করে। বিশ্বকাপের ফাইনালে এ ধরনের ভুল একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। সেই সঙ্গেই ফিল্ডিংয়ে ভারতকে পিছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ। কভার অঞ্চল থেকে দৌড়ে এসে যশস্বীর ঝাঁপানো ক্যাচ ছাড়া ভাল ফিল্ডিং নজরে পড়ল না।

আরও পড়ুন: পেসার থেকে স্পিনার হয়ে উদয় নতুন রবির

বিশ্বকাপ জিততে না পারলেও, ভবিষ্যতের দুই তারকাকে পেয়ে গেল ভারত। প্রথম জন অবশ্যই যশস্বী। দ্বিতীয় জন রবি বিষ্ণোই। বাংলাদেশ ইনিংসের নবম ওভারে রবিকে দায়িত্ব দেয় অধিনায়ক প্রিয়ম গর্গ। তখন বিনা উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের রান ৫০। ১৬.১ ওভারের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৬৫। ওকে দেখে রশিদ খানের কথা মনে পড়ে গেল। রশিদের মতো রবিও মাথার পিছন থেকে বল ছাড়ে। ফলে লেগস্পিনের চেয়ে গতির সঙ্গে গুগলি করে ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলে ও। চারটি উইকেটই পেল গুগলিতে। গুগলির সঙ্গে কুম্বলের মতো ফ্লিপারও যদি আয়ত্তে আনতে পারে, তা হলে ভারতীয় দলের দরজা আরও দ্রুত খুলে যেতে পারে ওর জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন