এক দিকে গত দু’বারের চ্যাম্পিয়ন কর্নাটক ও তাদের আগ্রাসী বোলিং। অন্য দিকে তিনি ও তাঁর ব্যাট।
তিনি— মনোজ তিওয়ারি।
সঙ্গী নাভেদ আহমেদ। বাংলার প্রতিশ্রুতিমান ব্যাটসম্যান। একসঙ্গে তিন ভূমিকায় তখন তিনি। প্রথমত, ব্যাটসম্যান মনোজ। দ্বিতীয়ত, ক্যাপ্টেন মনোজ। তৃতীয়ত সিনিয়র মনোজ। দিনের শেষে সব ভূমিকাতেই সফল তিনি।
ব্যাটসম্যান মনোজ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কুড়ি নম্বর সেঞ্চুরিটি (১০৩) করে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে উঠলেন কর্নাটক বোলারদের সামনে। সারা দিনে আটটা উইকেট পেলেই ম্যাচ যাদের হাতের মুঠোয় চলে আসত। গত দু’বারের চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব নিয়ে হার বাঁচালেন ক্যাপ্টেন মনোজ। আর সঙ্গী নাভেদকে (৯৫) সমানে সাহস জুগিয়ে, সারাক্ষণ তাঁকে ‘পেপটক’ দিয়ে ১৭৮-এর পার্টনারশিপ গড়ে তুললেন সিনিয়র মনোজ। ফল, চায়ের বিরতিতে বাংলার স্কোর ২৪৯-৪ হওয়ার পর বৃষ্টি নামতেই হাত মিলিয়ে নিতে আর দ্বিধা করলেন না বিপক্ষের ক্যাপ্টেন বিনয় কুমার। ম্যাচ ড্র। কর্নাটক ৩ ও বাংলার এক পয়েন্ট।
মরসুমের শুরুতেই এই মনোজকে দেখে কি বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা আশাবাদী হতে পারেন, যে তিনি সারা মরসুম এমন টপ গিয়ারেই থাকবেন?
রবিবার রাতে বেঙ্গালুরু থেকে মনোজ আনন্দবাজারকে ফোনে বললেন, ‘‘আমার কাউকে কিছু বলার নেই। কিছু বোঝাবারও নেই। গত মরসুমে চার বার সেঞ্চুরির মুখ থেকে ফিরে গিয়েছি। এ বার যাতে আর তা না হয়, তার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই মরসুম শুরু করেছি। ব্যাস, এটুকুই বলতে পারি। এই মেন্টাল সেট-আপটাই এ বার আলাদা, মনোজ তিওয়ারির বাকি সব একই আছে। আজও যেটা মনে করে মাঠে নেমেছিলাম, সেটাই করে দেখিয়েছি। ভবিষ্যতেও এই চেষ্টাটাই থাকবে।’’
রঞ্জি শুরুর কয়েক দিন আগেই জানতে পারেন, তাঁকে এ বার বাংলা দলের দায়িত্ব নিতে হবে। হঠাৎ পাওয়া এই দায়িত্ব যে চাপে ফেলছে না তাঁকে, তা সাফ জানিয়ে মনোজ বলছেন, ‘‘ক্যাপ্টেনসি তো আমি আগেও করেছি। এটা আমার কাছে নতুন নয়। তাই চাপে পড়ারও কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আজকের চাপটা অন্য রকম ছিল। চিন্নাস্বামীর এই উইকেটে চতুর্থ দিন সারাক্ষণ ধরে ব্যাট করে যাওয়াটা মোটেই সহজ ছিল না। সঙ্গে নাভেদের মতো নতুন ছেলে। ছেলেটা অনেক দূর যাবে দেখবেন। যে আস্থা নিয়ে ওকে দলে নেওয়া হয়েছিল, সেই আস্থার দাম দিল। উল্টো দিকে আগ্রাসী বোলিং। পয়েন্ট হারানোর চাপ। এ সব সামলে আজকের ইনিংসটা মনে রাখব।’’ ২০০৭-এ রঞ্জি ট্রফির ফাইনালে ওয়াংখেড়েতে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে ৯৪-এর পরই তাই এই ইনিংসটা রাখছেন মনোজ।
শুরুতেই প্রায় হাতছাড়া হওয়া ম্যাচ বাঁচিয়ে নিলেন। রঞ্জি এ বার ভালই কাটবে বলে মনে হচ্ছে বাংলার অধিনায়কের। বললেন, ‘‘এ বার আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই শুরু করেছি। জানি মোটেই সহজ হবে না লড়াইটা। কিন্তু এটাও জানি যে এ বার আমাদের প্রস্তুতিটা খুব ভাল হয়েছে। আমাদের কোচ সাইরাজ, ভিভিএস (লক্ষ্মণ), মুরলীধরণ আর সাপোর্ট স্টাফরা এ বার সবাই মিলে আমাদের জন্য এত খেটেছেন যে তাঁদের সেই পরিশ্রমের দাম দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। এ বার দলটা অনেক চাঙ্গা। সবাই চার্জড। পারফরম্যান্সেই তো তার ছাপ দেখছেন। প্রথম ম্যাচ থেকেই অনেক পজিটিভ ব্যাপার পেলাম। এগুলো নিয়েই পরের ম্যাচগুলোতে এগোতে চাই। নেগেটিভগুলো পিছনে ফেলেই কলকাতায় ফিরতে চাই পরের ম্যাচের (রাজস্থান) জন্য।’’
কিন্তু দলের পেসারদের ব্যর্থতার কথা অস্বীকার করবেন কী করে? সৌরভ সরকারের যা পারফরম্যান্স ও লক্ষ্মীরতন শুক্লর চোট যে রকম, তাতে পরের ম্যাচে হয়তো দলে তরুণ পেসার মুকেশ কুমারকে নিতে পারেন, সেই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন বাংলার ক্যাপ্টেন। বললেন, ‘‘মুকেশের কথা আমি এখন থেকেই বেশি বলব না। তবে ওকে দেখে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা চমকে উঠতে পারে। এমনই বোলার ও।’’
নতুনদের নিয়ে এ ভাবে এগিয়ে যাওয়ার কথাই এখন শুধু ভাবছেন বাংলার নতুন ক্যাপ্টেন। তাই এক পয়েন্টকেও কম বড় করে দেখছেন না। বললেন, ‘‘কেন দেখব না বলতে পারেন? উল্টোদিকের দলটার নাম যে কর্নাটক। সেটা ভুলে গেলেন?’’
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা ৩১২ ও ২৪৯-৪ (মনোজ ১০৩ ন:আ:, নাভেদ ৯৫, সুচিত ১-২৭) কর্নাটক ৫৩৭-৯ (ডি:)।