সিস্টেম বসছে প্রার্থনায়, শিল্প ছুটছে চূড়ান্ত আক্রমণের দিকে

অপমানের আতঙ্ক যে ‘বুলেটপ্রুফ’ মানুষকেও কতটা নিঃস্ব করে দিতে পারে, কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে বোধহয় সবচেয়ে বড় প্রমাণ। দু’টো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন। ইউরোপিয়ান ফুটবলার অব দ্য ইয়ার হয়েছেন। জার্মান ফুটবলের চিরকালীন প্রবাদটাও বিশ্বাস করেন যে, মৃত্যুর আগে হেরে যাওয়ার মানে হয় না। সেই জার্মান কিংবদন্তি এখন প্রার্থনায় বসছেন! না, দেশজ যুদ্ধের সময় এখন নয়। সে সব কিছু হচ্ছেও না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০৩:১৪
Share:

অপমানের আতঙ্ক যে ‘বুলেটপ্রুফ’ মানুষকেও কতটা নিঃস্ব করে দিতে পারে, কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে বোধহয় সবচেয়ে বড় প্রমাণ। দু’টো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন। ইউরোপিয়ান ফুটবলার অব দ্য ইয়ার হয়েছেন। জার্মান ফুটবলের চিরকালীন প্রবাদটাও বিশ্বাস করেন যে, মৃত্যুর আগে হেরে যাওয়ার মানে হয় না। সেই জার্মান কিংবদন্তি এখন প্রার্থনায় বসছেন! না, দেশজ যুদ্ধের সময় এখন নয়। সে সব কিছু হচ্ছেও না। কার্ল হেইঞ্জ রুমেনিগে ঈশ্বরের কাছে চাইছেন বায়ার্ন মিউনিখ ফুটবলারদের বুট থেকে মঙ্গলবার বেরোক এমন বিস্ফোরণ, শতাব্দীতে যা একটাই হয়! মানে, ‘ওয়ান অফ সেঞ্চুরি পারফরম্যান্স’ চান আর কী।

Advertisement

‘‘বায়ার্নের সুযোগটা ক্ষীণ, খুব ক্ষীণ। শতাব্দীতে একটা ম্যাচে এমন হয় যেখানে সমস্ত অঙ্ক, ফেভারিট, পাল্টে দেয় ফুটবলাররা। ও রকম একটা কিছু আমাদের লাগবে বার্সেলোনাকে হারাতে গেলে,’’ ফিরতি যুদ্ধের আগে বলে ফেলেছেন রুমেনিগে।

অত্যাশ্চর্য। অতীতে জার্মান ফুটবল সমাজ এর চেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যায়নি, বললে মিথ্যাচার হবে। য়ুরগেন ক্লিন্সম্যান কোচ হিসেবে টিম জার্মানির স্টিয়ারিং ধরার আগে তো একটা সময় জার্মান ফুটবলই অন্ধকারের দিকে এগোতে শুরু করেছিল। সেখানে এটা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনাল। লোকে তার উপর জানে, বায়ার্ন মিউনিখে একটা রিবেরি, একটা রবেন নেই। এটাও জানে যে, রবেন-রিবেরি থাকলে অত সহজে ০-৩ হজম করত না বায়ার্ন। আর ইতিহাস বলে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালেই প্রথমে তিন গোল খেয়েও শেষ পর্যন্ত মুকুট জয়ের বীরগাথা আছে। লিভারপুলেরই আছে। আর লিভারপুল পারলে বায়ার্ন পারবে না, মনে করার যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। আর্জেন রবেন এ বারও নেই। কিন্তু টমাস মুলার থাকবেন। ফ্র্যাঙ্ক রিবেরি নেই। কিন্তু লেওয়ানডস্কি থাকবেন। তা হলে এত কাঁপুনি? আসলে কোথাও গিয়ে বোধহয় লিওনেল মেসির ফুটবল-শিল্পের কাছে জার্মান সিস্টেমের চূর্ণ হওয়া ফুটবল সমাজের মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে। রুমেনিগেরা যার প্রতিভূ। বোধহয় তাঁরা এটাও ভয় পাচ্ছেন যে, আলিয়াঞ্জ এরিনায় অপমান আরও বিস্তৃত হবে। ঘরের মাঠে ফিরতি যুদ্ধ, তবুও। বলে ফেলছেন, ‘‘বায়ার্ন অন্তত চেষ্টা করুক।’’

Advertisement

এ দিন বিকেলের দিকে মিউনিখ পৌঁছে বার্সেলোনা কোনও তর্জনগর্জনের মধ্যে গেল না। জাভিয়ের মাসচেরানো সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন। মেসির প্রশংসা করেছেন। বায়ার্নকে যথাযোগ্য সম্মান দেখিয়ে বলে দিয়েছেন, ‘‘তিন গোলে এগিয়ে আছি বলে যে ফাইনালে চলে গিয়েছি, বিশ্বাস করি না। বরং নতুন ম্যাচ ধরে খেলব। চূড়ান্ত আক্রমণে যাব।’’ কোচ লুই এনরিকে— তাঁর বক্তব্যও মোটামুটি এক। বরং একটু ভয় পাচ্ছেন বায়ার্ন যদি প্রথমে গোল করে ফেলে, মুশকিল হয়ে যাবে।

কিন্তু পেপ গুয়ার্দিওলা— ক্লাব ফুটবলের সাম্প্রতিক অতীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কোচ, তিনি তো বায়ার্ন মাঝমাঠ থেকে ‘ইঞ্জিন’-কে সরিয়ে ফেলতে চাইছেন! বাস্তিয়ান সোয়াইনস্টাইগার বার্সার বিরুদ্ধে ফিরতি লেগে সম্ভবত প্রথম এগারোয় নেই। খেলবেন হয়তো মারিও গোটজে। ফুটবল প্রতিভা এবং কার্যকারিতায় দু’জনের কোনও তুলনা হয় না। ব্রাজিলেও জার্মানির কাপ জয়ের পিছনে সোয়াইনস্টাইগারের অবদান অনস্বীকার্য ছিল। কিন্তু লিওনেল মেসিদের বিরুদ্ধে প্রথম লেগের যুদ্ধে জার্মান মিডফিল্ডারের খেলায় সন্তুষ্ট নন পেপ। তিনি অন্য স্ট্র্যাটেজি সাজাচ্ছেন। বার্সেলোনা প্রাক্তন কোচের ম্যাচ-দর্শন খুব সহজ। একটা উপায়েই বার্সাকে হারানো যেতে পারে। সেটা হল, বার্সেলোনার চেয়ে ভাল খেলা। যে ভাবে প্রথম লেগে বিরতির পর খেলেছিল টিম।

‘‘আমরা শুধু একটাই জিনিস করতে পারি। শেষ পর্যন্ত চেষ্টাটা চালিয়ে যেতে পারি,’’ বলে দিয়েছেন পেপ। দু’টো ব্যাপার দিয়ে নিজেদের টগবগে রাখতে চাইছে বায়ার্ন। এক, বুন্দেশলিগা চ্যাম্পিয়নের নাম এ বারও বায়ার্ন। দুই, নানা ঘাত-প্রতিঘাত সত্ত্বেও টিমটা ভাল খেলেছে গোটা মরসুম। লেওয়ানডস্কি যেমন বলছেন, ‘‘যা যা আমাদের আছে, সব বার করতে হবে।’’ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে পোর্তো ম্যাচও এখন বায়ার্নের মোটিভেশন। যেখানে প্রথম লেগে ১-৩ হেরে পরে পোর্তোকে ৬-১ উড়িয়ে সেমিফাইনালে ঢুকেছিল বায়ার্ন।

টমাস মুলার যেটাকে বিশ্বাসের জপমন্ত্র করতে চাইছেন। বলছেন, ‘‘আমাদের হারাবার কিছু নেই। আর এখনও আমরা কিন্তু বায়ার্ন মিউনিখ।’’

এই প্রথম একটা হুঙ্কার, যেখানে জাত্যভিমানের অহঙ্কার আছে। যেটা এটুকু অন্তত বুঝিয়ে দেবে, এমন খাদ থেকে আকাশ ছোঁয়ার ক্ষমতা কোনও টিম যদি রাখে, তা হলে সেটা বায়ার্ন মিউনিখই রাখে। পারলে তারাই পারবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement