তিন পয়েন্টেই ‘খুশি’ বাংলা

জিততে দরকার ১৪১ রান। হাতে দিনের শেষ ৯০ মিনিট। বড়জোর ২০ ওভার। অভিষেক রামনের সঙ্গে ওপেন করতে নামলেন আইপিএল ফাইনালের সেঞ্চুরিয়ন ঋদ্ধিমান সাহা। ১১৫ ওভার কিপিং করার পরে তাঁকেই দায়িত্ব নিতে হল ব্যাটিং শুরুর।

Advertisement

রাজীব ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৭
Share:

মহম্মদ শামির বলে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে অসাধারণ ক্যাচ কৌশিক ঘোষের। ইডেনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

দিনের শেষে বাউন্ডারির বাইরে তিনমূর্তির দিকেই তাকিয়ে সবাই। মনোজ তিওয়ারি, সাইরাজ বাহুতুলে ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। দৃশ্যতই বেশ বিরক্ত সিএবি প্রেসিডেন্ট। কারণ, মাঠের মধ্যে তখন বাংলা লড়ছে। কিন্তু কীসের লড়াই? কঠিন প্রশ্ন। কারণ, মাঝে মাঝে গুলিয়ে যাচ্ছিল, বাংলা তখন ম্যাচ বাঁচানোর লড়াই করছিল, না হার বাঁচানোর।

Advertisement

জিততে দরকার ১৪১ রান। হাতে দিনের শেষ ৯০ মিনিট। বড়জোর ২০ ওভার। অভিষেক রামনের সঙ্গে ওপেন করতে নামলেন আইপিএল ফাইনালের সেঞ্চুরিয়ন ঋদ্ধিমান সাহা। ১১৫ ওভার কিপিং করার পরে তাঁকেই দায়িত্ব নিতে হল ব্যাটিং শুরুর। প্রথম বলেই ঋষি ধবনকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন আগের ইনিংসে সেঞ্চুরির নায়ক। তৃতীয় ওভারে গালিতে ক্যাচ দিলেন নির্ভরযোগ্য সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। পঞ্চম ওভারে যখন মনোজ তিওয়ারির স্টাম্প ছিটকে গেল, তখন বাংলা মাত্র ২৫-এ। ন’ওভার শেষ হতে না হতেই শ্রীবৎস গোস্বামীও আউট। বাংলা দশ ওভারে ৪০-৪। এর পরে ম্যাচের চেয়ে হার বাঁচানোর লড়াই-ই শুরু করেছিল বাংলা।

ডুবন্ত সূর্যই শেষ পর্যন্ত বাঁচালো ডুবতে থাকা বাংলাকে। আকাশে আধো আলো-আঁধারির খেলা শুরু হতে মাঠের খেলা শেষ করে দেওয়া হয় দুই অধিনায়কের সম্মতিতে।

Advertisement

ঘরের মাঠ। ‘ফ্যাব ফোর’-সহ সেরা দল। বিপক্ষে হিমাচল প্রদেশ। তবু ছ’পয়েন্টের কাছে গিয়েও ফিরে আসা। এ সব দেখে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ারই কথা। কোচ-ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলে মাঠ থেকে বেরিয়ে এসে বললেন, ‘‘চার দিনের ম্যাচে এ রকম হয়েই থাকে। আমাদের ছেলেরা তো খারাপ খেলেনি। চেষ্টা করেছে। কিন্তু ক্রিকেট এ রকমই। দু-একটা বলেই খেলা ঘুরে যায়। সে রকমই হল।’’ এই কথাগুলোর সঙ্গে তাঁর কোচ-ক্যাপ্টেনের সঙ্গে বৈঠকের সময়ের অভিব্যক্তির তেমন মিল পাওয়া গেল না কিন্তু। বাহুতুলে ও মনোজেরও শাক দিয়ে মাছ ঢাকার প্রবণতা দেখে বোঝা গেল বাংলা মাঠে ম্যাচ বাঁচিয়ে এসে এ বার পিঠ বাঁচানোর খেলা শুরু করেছে।

বাংলার ৪১৯ রানের জবাবে ২০৬-এ অল আউট হয়ে যাওয়ার পরেও ফলো অন করে ১৪০ রানের লিড নিলেন প্রশান্ত চোপড়া, নিখিল গাঙ্গটা, ঋষি ধবনরা। তাও আবার মহম্মদ শামি-অশোক ডিন্ডাদের বিরুদ্ধে। যা কি না রঞ্জি ট্রফির অন্যতম সেরা পেস জুটি! এর ব্যাখ্যা চাওয়া হলে কোচ-ক্যাপ্টেনরা এমন ভান করলেন, যেন কিছুই হয়নি। এই ম্যাচে দলের পারফরম্যান্সে ও তিন পয়েন্ট পেয়ে দু’জনেই খুশি! এত অল্পেতেই নিজেদের খুশি হলে কি দলকে রঞ্জি ট্রফি ফাইনালের স্বপ্ন দেখানো সম্ভব তাঁদের পক্ষে?

বাংলার এক প্রাক্তন অধিনায়ক বলেছিলেন, ‘‘আমাদের ছেলেদের বুকের খাঁচাগুলো বড্ড ছোট। খাঁচা বড় না হলে রঞ্জি ফাইনাল খেলা হবে না আমাদের।’’ শনিবার ফের সেই সত্যিটাই উঠে এল আরও একবার। সবুজ উইকেট নেওয়ার সাহস নেই। আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস নেই। দ্রুত রান তোলার মানসিকতা নেই। সাহসের ভাণ্ডারে এত দারিদ্র থাকলে রঞ্জি ফাইনাল বোধহয় স্বপ্নই থেকে যাবে।

এই ম্যাচে শামি ৫১ ও ডিন্ডা যথাক্রমে ৫০ ওভার বল করলেন। ওঁদের ওপর বেশিই চাপ পড়ে গেল কি না, জানতে চাইলে কোচ বলেন, ‘‘হয়তো পড়ল। কিন্তু ওরা এই চাপটা উপভোগ করে।’’ অধিনায়কের বক্তব্য, ‘‘কোথায় লেখা আছে, ওদের চাপ নেওয়া যাবে না? প্রয়োজন হলে তো ওদের চাপ নিতেই হবে।’’

এই চার দিনে ইডেনে মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে বাংলার শামি-ডিন্ডা ছাড়া আর কোনও বোলার নেই! ডান হাতি মিডিয়াম পেসার মুকেশ কুমার থাকা সত্ত্বেও। সাইরাজ বলেন, ‘‘মুকেশের মরসুমের প্রথম ম্যাচ। সেই অনুযায়ী ভালই পারফর্ম করেছে।’’ এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কণিষ্ক শেঠ, বি অমিতের মতো ক্রিকেটে থাকা বোলারদের জায়গায় মুকেশ কেন? মেজাজ হারিয়ে সাইরাজ বলে দিলেন, ‘‘আমি এই প্রশ্নের উত্তর দেব না। মাফ করবেন।’’

মনোজের ব্যাখ্যা, ‘‘এই কন্ডিশন ও উইকেট অনুযায়ী মুকেশের বলই বেশি কার্যকর হতো বলে মনে হয়েছে আমাদের।’’ শামি-ডিন্ডা দুই ইনিংস মিলিয়ে আটটি করে উইকেট নিলেন যেখানে, সেখানে তিন উইকেট নেন মুকেশ। এমন পাটা উইকেটে বেশি উইকেট নেবেন কী করে অনভিজ্ঞ মুকেশ? তাঁকে সাহাস জোগানোর জন্য তো সবুজ উইকেট দরকার। তাও দেওয়া হল না। কেমন ছন্নছাড়া লাগছে বাংলার ক্রিকেট সংসারকে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন