‘হয় ম্যাচ জেতো, নয় মাথা কামাও’, আদেশ কোচের

সম্প্রতি জবলপুরে আয়োজিত জাতীয় জুনিয়র হকিতে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ হারায় বাংলার কোচের কড়া ফরমানে মস্তক মুণ্ডন করতে হল, বাংলা জুনিয়র হকি দলের ১৬ জন সদস্যকে। যা আলোড়ন ফেলেছে বাংলার ক্রীড়া মহলে।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৬
Share:

নজিরবিহীন: মুণ্ডিতমস্তকে বাংলার জুনিয়র হকি দলের খেলোয়াড়রা। যে শাস্তিতে বিতর্ক ক্রীড়ামহলে। নিজস্ব চিত্র

বিতর্ক তাড়া করেই চলেছে বাংলার হকিকে। নতুন বছরে নতুন বিতর্ক— হয় ম্যাচ জেতো, নয় মাথা কামাও!

Advertisement

সম্প্রতি জবলপুরে আয়োজিত জাতীয় জুনিয়র হকিতে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ হারায় বাংলার কোচের কড়া ফরমানে মস্তক মুণ্ডন করতে হল, বাংলা জুনিয়র হকি দলের ১৬ জন সদস্যকে। যা আলোড়ন ফেলেছে বাংলার ক্রীড়া মহলে।

এই ঘটনায় অভিযোগের তির যাঁর দিকে, বাংলা জুনিয়র দলের সেই কোচ পঙ্কজ আনন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে বলেন, ‘‘ছেলেদের উজ্জীবিত করার জন্য মাথা কামানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু জবলপুরে তো কিছু হয়নি। দলের সব ছেলে মাথাভর্তি চুল নিয়েই তো কলকাতায় ফিরেছিল। ছেলেরা বাড়ি ফিরে মাথা কামিয়েছে কলকাতায়। তা হলে আমি কী করব? হারের অনুশোচনায় ছেলেরা এ-রকম করে থাকতে পারে নিজের থেকেই।’’ বাংলার জুনিয়র দলের এই হকি কোচকে বলা হয়, তাঁর দল থেকেই অভিযোগ উঠেছে, তিনিই নাকি খেলোয়াড়দের কলকাতায় ফিরে মস্তক মুণ্ডন করতে বলেছিলেন। যা শুনেই বাংলার জুনিয়র হকি দলের কোচ বলে দেন, ‘‘এ ব্যাপারে আর কোনও কথা বলতে চাই না। আমি এ-সব বলিনি।’’ যদিও জুনিয়র বাংলা হকি দলের বেশ কয়েক জন খেলোয়াড় বলছেন, ‘‘জবলপুর থেকে ফেরার সময় ট্রেনে আনন্দ স্যর বলেছিলেন, বাড়ি গিয়ে মাথা মুড়িয়ে প্রত্যেকে ছবি পাঠাবে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: সেমিফাইনালে বাংলা, অরুণের নজরে এ বার অনূর্ধ্ব-২৩ দল

ঠিক কী ঘটেছিল বাংলার জুনিয়র হকি দলের সঙ্গে?

ঘটনার সূত্রপাত চলতি মাসে জবলপুরে আয়োজিত জাতীয় জুনিয়র হকি প্রতিযোগিতায়। সেখানে খেলার জন্য বাংলা দল কলকাতা ছেড়েছিল ৮ জানুয়ারি। দলের ১৪ জন খেলোয়াড়কেই বাছা হয়েছিল সাই থেকে। প্রথম ম্যাচে গুজরাতকে ৪-০ ও দ্বিতীয় ম্যাচে অন্ধ্রপ্রদেশকে ৯-১ হারিয়ে প্রতিযোগিতার কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলা। শেষ আটের লড়াইয়ে পঞ্জাবের নামধারী একাদশের বিরুদ্ধে ১-৫ হারে তারা।

ওই দলের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক খেলোয়াড় রবিবার আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘কোচ জবলপুরে প্রথম দিন থেকেই বলতেন ম্যাচ না-জিতলে আমাদের সবার মাথা কামিয়ে দেবেন। কিন্তু পরপর দুই ম্যাচ জেতায় কিছু হয়নি। কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের আগে ফের কোচ বলেন, নামধারী একাদশের বিরুদ্ধে জিততে না-পারলে মাথা কামিয়ে দেবেন।’’

আরও পড়ুন: বাবাকে লুকিয়ে স্বপ্নপূরণ জবির

খেলোয়াড়দের কাছ থেকে আরও জানা গিয়েছে, বাংলা কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ হারার পরে কোচ নাকি সবাইকে ডেকে বলেন, ‘‘হারলে মাথা কামানোর কথা ছিল। এ বার বলো, তোমরা কী করবে? এক ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাও।’’ খেলোয়াড়দের অভিযোগ, দলের অধিনায়ক রাহুল কুমার নাকি তার পরেই বাকি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন, কোচের নির্দেশ মেনে নিয়ে মস্তক মুণ্ডন করবেন। কিন্তু বেঁকে বসেন গৌতম শর্মা নামে এক খেলোয়াড়। তিনি নাকি, অধিনায়ককে সরাসরি বলেন, মাথা কামাবেন না। হারের শাস্তি হিসেবে কোচ পারলে হকি স্টিক দিয়ে মারুন। ওই খেলোয়াড় নাকি এর পরে কোচের কাছে গিয়ে বলেন, তাঁর পক্ষে মাথা কামানো সম্ভব নয়। তাঁর বাবা-মা বেঁচে রয়েছেন। ধর্মীয় কারণে তাই মস্তকমুণ্ডন অসম্ভব। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই খেলোয়াড়টি আরও বলেন, ‘‘এর পরেই কোচ বাকিদের তাঁর ঘরে ডেকে নেন। ঘরের বাইরে যেতে বলেন গৌতমকে। সেই বৈঠকেই নির্দেশ দেওয়া হয়, কলকাতা ফেরার এক দিন পরে সবাই মস্তক মুণ্ডন করে যেন ছবি পোস্ট করে।’’ বাংলার জুনিয়র হকি দল কলকাতা ফিরেছে ১৮ জানুয়ারি। তার পরে এ দিন গৌতম বাদে সেই দলের খেলোয়াড়েরা সবাই মাথা কামিয়ে ছবি পোস্ট করেছেন।

যা দেখার পরেই কলকাতা ময়দানে এই ঘটনার প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে। এর আগে গত শতাব্দীর নয়ের দশকে দ্রোণাচার্য কোচ সৈয়দ নইমুদ্দিন ফুটবলার চুল ছোট করে ছাঁটতে বলে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনও মস্তকমুণ্ডনের নির্দেশ দেননি। বাংলা জুনিয়র হকি দলের সঙ্গে যাওয়া ম্যানেজার আলাউদ্দিন এ দিন তাঁর মোবাইল ফোন ‘সুইচড্ অফ’ করে রেখেছিলেন। ফলে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। পুরো বিষয়টি শুনে ক্ষুব্ধ রাজ্য হকি সংস্থার সচিব। তিনি বলছেন, ‘‘সব শুনেছি। খবরাখবর জোগাড় করছি। যদি প্রমাণ পাই, কোচ খেলোয়াড়দের এ ভাবে নির্দেশ দিয়ে মস্তক মুণ্ডন করিয়েছেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন