ক্যানসার জয় করেই মস্কোতে পদক দুই খুদের

ক্যান্সারের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে ‘টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল’-এর ‘সোশ্যাল ওয়ার্কার্স বিভাগ’। কে কোন বিষয়ে পারদর্শী তার খোঁজও রাখেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ভাবেই মঙ্গলদীপ ও চিদাগ্নির পছন্দের কথাও জেনে নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

সৌমেশ্বর মণ্ডল

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৭ ১২:১০
Share:

সফল: পদকজয়ী মঙ্গলদীপ মিত্র। —নিজস্ব চিত্র।

খুদে বয়সেই তাদের সকলে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিল। মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে জয়ীও হয়েছে তারা। ১০-১৬ বছরের ক্যান্সার জয়ী এ রকম ১৪ জন খুদেকে বেছে নিয়ে রাশিয়ার মস্কোতে অনুষ্ঠিত অষ্টম ‘ওয়ার্ল্ড চিল্ড্রেন উইনার গেমস্’-এ পাঠানোর ব্যবস্থা করেন মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাজ্য থেকে খড়্গপুরের মঙ্গলদীপ মিত্র ও চিত্তরঞ্জনের চিদাগ্নি পাণ্ডে মস্কোতে গিয়েছিল। প্রতিযোগিতায় দাবাতে রূপো পেয়েছে মঙ্গলদীপ। চিদাগ্নি ফুটবল, দৌড়ে সোনা ও দাবায় রূপোর পদক পেয়েছে।

Advertisement

গত ১-৬ জুন মস্কোর একটি নন-প্রফিট অর্গানাইজেশন ‘গিফট অফ লাইফ’-এর উদ্যোগে আয়োজিত ওই প্রতিযোগিতায় ১৬টি দেশের প্রায় ৬০০ জন প্রতিযোগী যোগ দিয়েছিল। ফুটবল, দৌড়, টেবল টেনিস, দাবা ও সাঁতার এই পাঁচটি ইভেন্টে খেলা হয় প্রতিযোগিতায়। শুধু মঙ্গলদীপ বা চিদাগ্নি নয়, ভারতের ১৪ জন প্রতিযোগী ওই প্রতিযোগিতার বিভিন্ন বিভাগে মোট ২৬টি পদক পেয়েছে।

ক্যান্সারের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে ‘টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল’-এর ‘সোশ্যাল ওয়ার্কার্স বিভাগ’। কে কোন বিষয়ে পারদর্শী তার খোঁজও রাখেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ভাবেই মঙ্গলদীপ ও চিদাগ্নির পছন্দের কথাও জেনে নেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

খড়্গপুরের মালঞ্চর বাসিন্দা মঙ্গলদীপ ক্রিস্টোফার স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। পাঁচ বছর বয়সে তার বামদিকের কলার বোনে ক্যান্সার ধরা পড়ে। বাবা প্রদীপ মিত্র রেলের গ্যাংম্যানের কাজ করেন। আর্থিক অনটনের মধ্যেই ২০১০ সালে ‘টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল’-এ অস্ত্রোপচার করে মঙ্গলদীপের বাম দিকের কলার বোন কেটে বাদ দেওয়া হয়। তারপর থেকে বাম হাত উপর দিকে তুলতে পারে না সে।

হাত তুলতে না পারায় আউটডোর গেম খেলতে অসুবিধা হবে বুঝেই বাবা মঙ্গলদীপকে খড়্গপুরের ‘যুব সঙ্ঘ দাবা অ্যাকাডেমি’তে ভর্তি করান। সেখানেই চলে দু’বছর প্রশিক্ষণ। কলকাতার গোর্কি সদনে ‘অ্যালেখাইন চেস ক্লাব’-এও এক বছর প্রশিক্ষণ নেয় সে। ২০১৩ সালে ওডিশার পুরীতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব ন’বছরের ‘অল ইন্ডিয়া রেটিং টুর্নামেন্ট’ ও ২০১৫ সালে তামিলনাড়ুর চেন্নাইতে অনুষ্ঠিত রেটিং টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব ১১ বিভাগে যোগ দেয় মঙ্গলদীপ। ২০১৭ সালে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা দাবা প্রতিযোগিতায় অনূর্ধ্ব ১৩ বিভাগে জয়ী হয় সে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে পেরে খুশি মঙ্গলদীপ।

প্রদীপবাবু বলছেন, ‘‘মঙ্গলদীপ আরও প্রশিক্ষণ নিতে চায়। এশিয়া কাপের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতাতেও ও খেলতে চায়।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমার আর্থিক ক্ষমতা সীমিত হওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়। ছেলের দাবা প্রশিক্ষণ ও রাজ্যের বাইরে প্রতিযোগিতা খেলতে যাওয়ার জন্য সাহায্য পেলে ভাল হত।’’

জীবন যুদ্ধে ক্যান্সারকে হার মানিয়েছে চিদাগ্নিও। চিত্তরঞ্জন হাইস্কুলের (ইংরেজি মাধ্যম) ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী চিদাগ্নির লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ে মাত্র ন’মাস বয়সে। টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসার পর এখন সুস্থ আছে সে। দু’বছরে একবার রুটিন চেক আপে যেতে হয় তাকে। রাশিয়ায় পদক পেয়ে খুশি চিদাগ্নিও। তাঁর মা কল্পনা পাণ্ডে বলেন, ‘‘রাশিয়ার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আমাদের ছেলেমেয়েদের যোগদানের সুযোগ করে দেওয়ায় টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন