প্যারা-অ্যাথলিটে সফল বঙ্গ সন্তানরা।
মঞ্চটা ১৬তম জাতীয় অ্যাথলিট চ্যাম্পিয়নশিপের। বাংলার প্রাপ্তি ৫ টা সোনা, ২টো রুপো এবং একটি ব্রোঞ্জ। নাহ্, কোনও প্রাগৈতিহাসিক সময়ের জাতীয় ক্রীড়ার প্রাপ্তির হিসাব নয় এটা, এ বছরের গত মাসের কথা। ২৬ থেকে ৩০ মার্চ অবধি, হরিয়ানাতে চার দিনব্যাপী সেই ইভেন্ট সেরে একগাদা মেডেল নিয়ে রাজ্যে ফিরেও এসেছেন বাংলার সফল ক্রীড়াবিদরা। কিন্তু, কোনও সংবাদপত্র, কোনও টেলিভিশন চ্যানেলে সেই খবর নেই কেন? নেই কেন তত্ক্ষণাত্ কোনও সরকারি পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি? কারণ, একটাই! এই জাতীয় ক্রীড়ার মঞ্চটি ছিল প্যারাঅ্যাথলিটদের। যে ক্রীড়াবিদরা কোনও রকম পরিকাঠামো বা যথাযথ সরকারি সাহায্য ছাড়াই নিজেদের মনের জোর আর পরিশ্রমকে সঙ্গে করে সফল হয়ে ফিরলেন তাঁরা কোনও না কোনও ভাবে প্রতিবন্ধী। যে দেশ বিশেষ ভাবে সক্ষম মানুষদের এমনিতেই নিজেদের সমস্ত রকম শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গে করে প্রতি মুহূর্তে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে, তাঁরাও যে খেলতে পারেন সফল হতে পারেন, সেই ভাবনাটাই বেশির ভাগের মাথায় আসে না। তাই প্যারা অ্যাথলেটিকরা যে অবহেলিতই থেকে যাবেন তাতে আর আশ্চর্য কী!
তাও চেষ্টা চালিয়ে যান সাহেব হুসেনরা। এ বছর ন্যাশনাল মিটে টি-১২ ক্যাটাগরি থেকে ১০০ মিটার, ২০০ মিটার এবং ৩০০ মিটারে সোনা পেয়েছেন ৭৫ শতাংশ দৃষ্টিক্ষমতাহীন সাহেব। টি-৪৪ ক্যাটাগরিতে শটপাট এবং ডিসকাসে জোড়া সোনা পেয়েছেন রুবিয়া চট্টোপাধ্যায়। জ্যাভেলিনে পেয়েছেন একটি রুপো। তাঁর দু-পা ৬০ শতাংশ অকোজো। ৮০ শতাংশ দৃষ্টিক্ষমতাহীন হরিয়াল টুডু এফ-১২ ক্যাটাগরিতে লংজাম্পে একটি রুপো পেয়েছেন, টি-৪৪ ক্যাটাগরিতে ৪০০ মিটার দৌড়ে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন আতার আলি।
এই সাফল্যের পরেও কিন্তু এ বছরও সেপ্টেম্বরে রিওতে প্যারা়লিম্পিক্সে যাওয়া হচ্ছে না সাহেবদের। দুর্নীতির দায়ে ভারতীয় প্যারালিক্সিস কমিটি গত চার বছর ধরে আন্তর্জাতিক কমিটির কালো তালিকায়। তাই, সব রকম যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে দিনের পর দিন অবহেলিতই থেকে যাচ্ছেন এ দেশের প্যারাঅ্যাথলিটরা। সব জেনে শুনেও আশ্চর্য নীরব সরকারও। কেন্দ্র, রাজ্য উভয়ই। কবে মিটবে এই সমস্যা, কবে যথাযথ পরিকাঠামো পাবেন এ দেশের প্যারাঅ্যাথলিটরা, কবে পাবেন তাঁরা যোগ্য সম্মান? জানা নেই। প্রশ্নগুলো সহজ, উত্তরটাও জানা, কিন্তু নেই সমাধানের বিন্দুমাত্র উদ্যোগ। কিন্তু তাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রুবিয়া, সাহেব, হরিয়ালরা। প্রায় ব্যক্তিগত উদ্যোগেই তাঁরা মাঠকে সম্বল করে লড়ে যাচ্ছেন, সফল হচ্ছেন, কিন্তু বদলাচ্ছে না, বঞ্চনা, অবহেলার ইতিব়ৃত্তটা।
আরও পড়ুন...