জীবন বাজি রেখেই লড়াই এশিয়াডে বাংলার মুখ স্বপ্নার

বাংলার মাত্র দু’জন অ্যাথলিট এ বার রয়েছেন এশিয়াডের ভারতীয় দলে। স্বপ্না বর্মন এবং সনিয়া বৈশ্য। সনিয়া রয়েছেন মেয়েদের রিলে দলে। তিনি শেষ পর্যন্ত ব্যাটন হাতে নামতে পারবেন কী না, তা বলা কঠিন।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৯
Share:

লক্ষ্য: শারীরিক সমস্যা নিয়েই জাকার্তার প্রস্তুতি স্বপ্নার। —ফাইল চিত্র।

ডাক্তার অস্ত্রোপচার করতে বললেও, করেননি। তিনটে ইঞ্জেকশন নিয়েছেন কোমরে। সকাল-বিকাল রি-হ্যাব করে সুস্থ হয়ে উঠেছেন।

Advertisement

গত এগারো মাস জলপাইগুড়ির ঘোষ পাড়ার বাড়িতে যাননি। দেখা হয়নি মা-বাবা পরিবারের সঙ্গে। জাতীয় শিবিরে কঠোর অনুশীলনে ডুবে রয়েছেন স্বপ্ন সফল করার জন্য। বিশ্বাস করেন, একদিন অনুশীলন না করলেই পিছিয়ে পড়বেন।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একমাত্র অ্যাথলিট হিসাবে রেকর্ড-সহ জোড়া সোনা জিতেছিলেন। তা সত্ত্বেও মাত্র একটি বিষয়ে তিন নম্বর কম থাকায় ফেল করেছেন। স্নাতক হতে পারেননি এখনও। রিভিউ করিয়েও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়েই ফের অনুশীলনের ফাঁকেই পড়াশুনা করতে হচ্ছে তাঁকে। ওই একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে তাই শিবির থেকে ছুটি নিয়ে কলকাতায় আসছেন ৭ অগস্ট। মাত্র এক দিনের জন্য।

Advertisement

নানা ঝুঁকি বা আবেগকে সরিয়ে রাখা অকুতোভয় এই মেয়ে কী নিজের অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন? ‘‘পারতেই হবে আমাকে। আমার এতদিনের স্বপ্ন সফল করতেই হবে। তার জন্য যা করার দরকার করব।’’ পাতিয়ালার শিবির থেকে ফোনে স্বপ্না বর্মনের গলা শুনলে মনে হয় রাজবংশি পরিবারের মেয়ের জেদ সত্যিই অফুরান। ‘‘জানেন আমি কেন কোমরের অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি নিইনি? কারণ ওটা করার পরে যদি আর ট্র্যাকে নামতে না পারি এই আশঙ্কা থেকেই করিনি। সে জন্যই অ্যাথলেটিক্স জীবন বাজি রেখে নামছি জাকার্তায়।’’

বাংলার মাত্র দু’জন অ্যাথলিট এ বার রয়েছেন এশিয়াডের ভারতীয় দলে। স্বপ্না বর্মন এবং সনিয়া বৈশ্য। সনিয়া রয়েছেন মেয়েদের রিলে দলে। তিনি শেষ পর্যন্ত ব্যাটন হাতে নামতে পারবেন কী না, তা বলা কঠিন। কারণ এই ইভেন্টের দল ঠিক হয় প্রতিযোগিতার দু’দিন আগে। আর সে জন্যই অ্যাথলেটিক্সে স্বপ্না-ই বাংলার একমাত্র আশার প্রদীপ। সবকিছু ঠিকঠাক চললে সাইয়ের ছাত্রী যে বিভাগে নামবেন সেই হেপ্টাথলনে তাঁর পদক পাওয়া প্রায় নিশ্চিতই। কারণ কোমরের চোট নিয়ে নেমেই গত বছর এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছিলেন সুভাষ সরকারের ছাত্রী। পুরো সুস্থ না হয়েও করেছিলেন ৫৯৪২ পয়েন্ট। আর এখন এশিয়ায় হেপ্টাথলনে মেয়েদের ইভেন্টের যা পরিস্থিতি তাতে ৫৯০০ পয়েন্ট করলেই স্বপ্নার পদক বাধা। কিন্তু স্বপ্নার স্বপ্ন তো শুধু পদকে আটকে নেই! তিনি সোনা জিততে চান। যা এই ইভেন্টে বাংলার কোনও মেয়ে কখনও করেননি। হেপ্টাথলনে সোমা বিশ্বাস এশিয়াডে দু’বার রুপো জিতলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। সোনা জিততে পারেন আপনার ছাত্রী? স্বপ্নার কোচ সুভাষ সরকার অনুশীলনের ফাঁকেই বললেন, ‘‘এখন স্বপ্না যা পয়েন্ট করছে তাতে ও সুস্থ থাকলে পদক পাবেই। তবে সেটা সোনা, রুপো না ব্রোঞ্জ বলা কঠিন। মোট সাতটা ইভেন্ট। তার মধ্যে পাঁচটা ইভেন্টে ভাল করে দু’টো খারাপ করলেই পিছিয়ে পড়তে হয়।’’ চার বছর আগের এশিয়াডে স্বপ্না নেমেছিলেন জুনিয়র অবস্থায়। হয়েছিলেন পঞ্চম। বলছিলেন, ‘‘তখন আমি অনভিজ্ঞ ছিলাম। গত বার যে ভুলগুলো করেছিলাম এ বার সেটা হবে না।’’

আরও পড়ুন: কখনওই তৃপ্ত হবে না, বিরাটকে সচিন

জাকার্তায় বিজয় স্তম্ভে ওঠা নিশ্চিত করার জন্য কী ভাবে প্রস্তুত হচ্ছেন সোনার মেয়ে? সকাল-বিকেল মিলিয়ে পাঁচ ঘণ্টা অনুশীলন করছেন। তার মাঝে চলছে রি-হ্যাব এবং অবশ্যই পড়াশুনো। বলছিলেন, ‘‘আমি এখন একশো ভাগ সুস্থ। সুস্থ থাকলে পদক পাবই। নিজের উপর এই আস্থা আমার আছে।’’

স্নাতক হওয়ার অদম্য ইচ্ছা এবং স্বপ্নের এশিয়াড পদক— দু’টোর মধ্যে জলপাইগুড়ির মেয়ে বেছে নিয়েছেন পদককেই। এখন দেখার স্বপ্নার স্বপ্ন সত্যি হয় কী না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন