মনোজের আলিঙ্গনে শ্রীবত্স। শনিবার ইডেনে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক মাঠে পা রাখতেই কি তেতে উঠলেন তরুণ পেসার সায়নশেখর মণ্ডল?
জেতার জন্য তখন ৩০ বলে ৫৩ দরকার অসমের, হাতে হাফডজন উইকেট, তখনই ইডেনে আগমন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের।
তার পরই ঘটল ঘটনাটা।
পাঁচ দিন আগেই পঁচিশ পূর্ণ করা সায়ন ছিটকে দিলেন বিপক্ষের দুই ব্যাটসম্যান অমিত সিংহ ও আবু নাচিমের স্টাম্প। ক্রমশ লড়াইয়ে ফেরার চেষ্টায় থাকা অসমের মেরুদণ্ড ভাঙল এই জোড়া আউটেই। ১৮ রানে জিতে বিজয় হাজারে ট্রফির আঞ্চলিক পর্বে অপরাজিত বাংলার লড়াই এ বার মূলপর্বে।
দু’দিন আগেই যে বাইশ গজে রোহিত শর্মা ঐতিহাসিক ইনিংস খেলে গিয়েছেন, সেই রানের স্বর্গেই এ দিন দু’টি সেঞ্চুরি ও দু’টি হাফসেঞ্চুরির সাক্ষী থাকল ফাঁকা ইডেন গ্যালারি। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির পর বাংলা ওপেনার শ্রীবত্স গোস্বামী তো বলেই দিলেন, “আগেরটার চেয়ে এই সেঞ্চুরিটা সহজ ছিল। ওটা তো কল্যাণীর সবুজ উইকেটে করেছিলাম। বেশ কঠিন ছিল। আজকেরটা পাটা উইকেটে। রোহিতের সে দিনের ইনিংসটা পরে টিভিতে দেখেছিলাম। সেখান থেকেও কিছু বুঝেছিলাম। তার উপর (ভিভিএস) লক্ষ্মণ ভাইয়ের পরামর্শ তো রয়েছেই। বিশেষ করে মানসিকভাবে নিজেকে তৈরি রাখার পরামর্শ।” ১৫৯-এর গড়ে চার ম্যাচে ৩১৮ রান পাওয়া শ্রীবত্স এ দিন দু’বার অসমের ফিল্ডারদের হাতে প্রাণ পেলেও দিনের শেষে আত্মবিশ্বাসে ফুটছেন। মূলপর্বে তাঁকে যেমন বড় রানের প্রত্যাশা সামলাতে হবে, তেমনই স্টাম্পের পিছনেও দায়িত্ব পালন করতে হবে। “সে জন্য আমি তৈরি”, বলে দিলেন শ্রীবত্স। তাঁর বক্তব্য, “আসলে শুরুটা ভাল হওয়া খুব দরকার। গত মরসুমে যেটা পাচ্ছিলাম না। রাজকোটে মনে হয় এ রকমই উইকেট পাব। তাই আশা করি ওখানেও ভাল রান পাব।”
আগের দুই ম্যাচে ১৬, ৪৩-এর পর এ দিন ৫৭-র ইনিংস খেলা মনোজ তিওয়ারি বললেন, “আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ক্রিজে ব্যাট করার সময় কেমন অনুভব করছি। সে দিক থেকে একদম ঠিক জায়গায় আছি মনে হচ্ছে।” দল নিয়ে মনোজ বলেন, “ড্রেসিং রুমের পরিবেশ খুব ভাল। নক আউটে এটাই আমাদের প্লাস পয়েন্ট হয়ে উঠবে, দেখবেন।” নক আউটে রেলের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল। হারলেই বিদায়। তবে পাটা উইকেটের জন্য খ্যাত রাজকোটে রানের ফুলঝুরি ছুটিয়ে জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী চারে চার করা বাংলা শিবির।
ক্যাপ্টেন লক্ষ্মীরতন শুক্ল ইডেন ছাড়ার আগে বলে গেলেন, “টিম যা খেলছে, সে রকম ফর্মে থাকলে ওখানেও আমরা জিতব। তবে এখনই নক আউটের গেমপ্ল্যান নিয়ে ভাবছি না। দু’দিন বিশ্রাম নেওয়ার পর তা করব।” সোমবার রওনা হচ্ছে ১৬ জনের বাংলা দল, যেখানে অস্ট্রেলিয়াগামী ঋদ্ধিমান সাহার জায়গায় রাখা হল অভিজ্ঞ বাঁ-হাতি স্পিনার শিবসাগর সিংহকে। ইরেশ সাক্সেনা এ দিন হাতে চোট পাওয়ায় তাঁর ‘ব্যাক-আপ’ হিসেবে শিবসাগরকে রাখা হল বলে জানালেন অন্যতম নির্বাচক ইন্দুভূষণ রায়। ইরেশ এ দিন ফিল্ডিং করতে গিয়ে হাতের তালুতে চোট পান। চারটি সেলাইও করতে হয় তাঁর হাতে। ম্যাচ চলাকালীন নির্বাচকরা দল বাছতে বসে প্রথমে তাঁকে তালিকার বাইরেই রেখেছিলেন। কিন্তু ড্রেসিংরুম থেকে যখন তাঁদের কাছে কোচ বার্তা পাঠান, ইরেশের চোট তেমন গুরুতর নয়, তখন তাঁকে ফের দলে রাখা হয়।
বাংলার ৩১২-র পাহাড়ের শৃঙ্গ ধীরজ যাদবের ১১৫ এবং পরভেজ আজিজের ৫২-র সাহায্যে প্রায় ছঁুয়েই ফেলছিল অসম। সায়ন শেষ বেলায় পরপর ওই দুটো উইকেট না নিলে চাপ হয়তো আরও বাড়ত। তরুণ পেসার পরে বলছিলেন, “ওই সময় আমি উইকেট না পেলে নিশ্চয়ই অন্য কেউ পেত। তবে আমিই পেলাম বলে ভাল লাগছে। অভিজ্ঞতাটা আশা করি মূলপর্বেও কাজে লাগবে।” দিন্দা ও ইরেশ দু’টি করে উইকেট ভাগ করে নেন। ইডেনে এ দিন বোলারদের পারফরম্যান্স খুব একটা ভাল না হওয়া নিয়ে অবশ্য চিন্তিত নন বাংলার কোচ অশোক মলহোত্র। বললেন, “উইকেট অনুযায়ী ঠিকই আছে। বোলিং নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নই আমি।”
অন্য ম্যাচে ঝাড়খণ্ডের কাছে ওড়িশা ৪৫ রানে হেরেও পূর্বাঞ্চলের দ্বিতীয় সেরা হিসেবে নক আউটে উঠে গেল। অসম ও ঝাড়খন্ডের চেয়ে তুলনায় ভাল নেট রান রেট থাকায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলা ৩১২-৬ (শ্রীবত্স ১৩৩, মনোজ ৫৭, লক্ষ্মী ৩৬)
অসম ২৯৪-৮ (ধীরজ ১১৫, আজিজ ৫২, সায়ন ৪-৫৯, দিন্দা ২-৪২, ইরেশ ২-৪৬)