একই টেস্টে, একই দিনে শতরান করেছিলেন মুস্তাক আলি ও বিজয় মার্চেন্ট। ১৯৩৬ সালের ২৬ জুলাই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে যা আসে। ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ভারতীয় হিসেবে শতরান করেন মুস্তাক আলি। তিনি করেন ১১২ রান। বিজয় মার্চেন্ট করেন ১১৪ রান। ওপেন করতে নেমে দু’জনে প্রথম উইকেটে তোলেন ২০৩ রান। সেই যুগে এই দু’জন ছিলেন ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ।
সঞ্জয় মঞ্জরেকরের বাবা বিজয় মঞ্জরেকর ১৯৫২ সালে লিডস টেস্টে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতরান করেন। ২৭০ মিনিট ক্রিজে থেকে ১৩৩ করেন তিনি। যাতে ছিল ১৯ বাউন্ডারি। কুড়ি বছর বয়সি যখন নেমেছিলেন, তখন প্রথম দিনের সকালে ৪২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে ভারত। চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক বিজয় হাজারের সঙ্গে ২২২ রান যোগ করেন তিনি।
প্রথম টেস্টেই শতরান করেছিলেন আব্বাস আলি বেগ। ১৯৫৯ সালে ম্যাঞ্চেস্টারে প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ২৬। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন ১১২। ৫৪৮ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়া করে চতুর্থ ইনিংসে আব্বাসের শতরান অবশ্য পরাজয় আটকাতে পারেনি। ওই টেস্টে শতরান করেন পলি উমরিগড়ও। তবে আব্বাস আলি বেগ মোট দশ টেস্ট খেললেও আর শতরান করতে পারেননি।
শতরান নয়। করেছিলেন ৫৭। কিন্তু, সুনীল গাওস্করের কাছে সবচেয়ে সন্তোষজনক ইনিংস হল ১৯৭১ সালে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ৫৭। ওই অর্ধশতরান এসেছিল কেরিয়ারের ১১তম টেস্ট ইনিংসে। গাওস্করের মতে, ওই ইনিংস ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর উন্নতিতে অনুঘটকের কাজ করেছিল। ১৯৭৯ সালে ওভালে ২২১ রানের ইনিংস আবার অনেকের মতে তাঁর গ্রেটেস্ট
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক থেকেছেন দিলীপ বেঙ্গসরকর। ২৩ ইনিংসে ৪৮ গড়ে করেছেন ৯৬০ রান। লর্ডসে টানা তিন টেস্টে শতরানও করেছেন। তবে ১৯৮৬ সালে হেডিংলেতে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংসকে সেরা বলে মনে করেন ক্রিকেটমহলের অনেকে। এই ইনিংসই জয়ের ভিত গড়ে দেয়। টেস্টের সঙ্গে সঙ্গে সিরিজও জেতে ভারত।
১৯৯০ সালের ইংল্যান্ড সফরে প্রথম টেস্টে মহম্মদ আজহারউদ্দিন করেছিলেন ১২১। এই ইনিংস ছিল রীতিমতো আক্রমণাত্মক। ১১১ বলের ইনিংসের স্ট্রাইক রেট ছিল ১০৯! যাতে ছিল ২২ বাউন্ডারি। তবে পরাজয় আটকাতে পারেননি। সেই সফরেই দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ১৭৯। ২৮১ মিনিট ক্রিজে থেকে মেরেছিলেন ২১টি চার ও একটি ছয়।
মাত্র ১৭ বছর বয়েস কেরিয়ারের প্রথম টেস্ট শতরান করেছিলেন সচিন তেন্ডুলকর। ১৯৯০ সালের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ১১৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৬৮ করেছিলেন। দ্বিতী ইনিংসে ৪০৮ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়া করে ভারত যখন ১০৯-৪, নেমেছিলেন তিনি। ওই বয়সে দ্বিতীয় সবচেয়ে কমবয়সি হিসেবে টেস্টে শতরান করেছিলেন সচিন।
অভিষেকেই টেস্ট শতরান। সেটাও লর্ডসে। তিন নম্বরে নেমে রাজকীয় ভঙ্গিতে। সিধু হঠাত্ দেশে ফিরে আসায় সুযোগ এসেছিল বেহালার বাঁ-হাতির সামনে। আর সেই সুযোগ দারুণ ভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ১৩১ রানের ইনিংসে ছিল ২০ বাউন্ডারি। প্রথম ইনিংস হেরে গিয়েছিল ভারত। সৌরভের শতরান দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের অবস্থান মজবুত করে।
ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে ২০০২ সালের হেডিংলে টেস্টে রাহুল দ্রাবিড়ের ইনিংস চিরস্থায়ী হয়ে গিয়েছে। মেঘলা কন্ডিশনে দুরন্ত সুইং করাচ্ছিলেন ইংল্যান্ডের সিমাররা। দ্রাবিড় ৪২৯ মিনিট ক্রিজে থেকে নির্ভরতা জোগালেন ইনিংসে। ২৩ বাউন্ডারির সাহায্যে করলেন ১৪৮ রান। সেই টেস্ট শচিন ও সৌরভ শতরান করা সত্ত্বেও ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন দ্রাবিড়।
শতরান হয়তো পাননি, কিন্তু ২০০৭ সালে লর্ডসে মহেন্দ্র সিং ধোনির ইনিংস ভারতকে রক্ষা করে পরাজয়ের হাত থেকে। ওই ড্র পরে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ, ভারত টেস্ট সিরিজ জেতে ১-০ ব্যবধানে। ৩৮০ রানের জয়ের লক্ষ্য তাড়া করে ১৪৫ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে গিয়েছিল ভারতের। ধোনি ১৫৯ বলে ৭৬ রানে অপরাজিত ছিল। যাতে ছিল ১০ বাউন্ডারি।