আইএসএলে এ বারই হয়তো দুই প্রধান

কয়েক মাস আগেও যে সংযুক্তিকরণকে মনে হচ্ছিল অবিশ্বাস্য ব্যাপার, সেটাই হয়তো বাস্তবায়িত হতে চলেছে এ বার। সব কিছু ঠিকঠাক চললে ২০১৭-১৮ মরসুমেই সম্ভবত আতলেতিকো দে কলকাতার সঙ্গে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলতে দেখা যাবে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং বেঙ্গালুরু এফ সি-র মতো দলকেও।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

আগমন: বেঙ্গালুরুর কাছে হেরে কলকাতায় ফিরলেন সনিরা। নিজস্ব চিত্র

কয়েক মাস আগেও যে সংযুক্তিকরণকে মনে হচ্ছিল অবিশ্বাস্য ব্যাপার, সেটাই হয়তো বাস্তবায়িত হতে চলেছে এ বার। সব কিছু ঠিকঠাক চললে ২০১৭-১৮ মরসুমেই সম্ভবত আতলেতিকো দে কলকাতার সঙ্গে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে খেলতে দেখা যাবে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল এবং বেঙ্গালুরু এফ সি-র মতো দলকেও।

Advertisement

নভেম্বরের মাঝামাঝি শুরু হওয়ার কথা আইএসএলের চতুর্থ সংস্করণ। অনেকদিন কথাবার্তা বন্ধ থাকার পর হঠাৎ-ই যেভাবে আইএমজি-আর কর্তারা সকাল-বিকেল কলকাতার টিমের কর্তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন, আলোচনায় বসছেন, নানা কাগজপত্র চাইছেন তাতে মাস খানেকের মধ্যেই সব জট খুলে যাবে বলে আশা করছেন দুই প্রধানের কর্তারা। স্পনসর-সহ নানা বাধ্যবাধকতার কারণে প্রকাশ্যে কেউ পুরো ব্যাপারটি খোলসা করছেন না। তবে ঘুরিয়ে স্বীকার করে নিচ্ছেন আলোচনা শেষ পর্যায়ে।

মোহনবাগান অর্থ সচিব দেবাশিস দত্ত দিল্লি থেকে এ দিন যেমন ফোনে বললেন, ‘‘কথাবার্তা চলছে। যতক্ষণ না সমস্ত কিছু চূড়ান্ত হচ্ছে, বেশি কিছু বলতে চাই না। আমরা অপেক্ষায় আছি।’’ সবুজ-মেরুন শিবিরের মতোই ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকারও। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বলে দিলেন, ‘‘যে উদ্যোগে ভাটা পড়েছিল সেটা ফের শুরু হয়েছে। কথাবার্তা চলছে। কথাবার্তা এগোচ্ছে। আশা করি দ্রুতি সমস্ত জট খুলে যাবে।’’

Advertisement

জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই আইএসএল সংগঠকদের তরফে অন্যতম চিফ এগজিকিউটিভ অফিসার (সিইও) সুন্দর রামন কথা চালাচ্ছেন দুই প্রধানের সঙ্গে। ক্লাবের নানা কাগজপত্রও তিনি চেয়ে পাঠিয়েছেন মুম্বইতে। কিন্তু দুই প্রধান কর্তাদের আশঙ্কা অন্য জায়গায়। এটিকে-র ছাড়পত্র পাওয়া গেলেও ফেডারেশন এই চেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ দুই প্রধান এবং বেঙ্গালুরুর মতো টিম আইএসএল খেলতে চলে গেলে মার খাবে আই লিগ। এ ব্যাপারে ফেডারেশন সচিব কুশল দাসের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁকে বুধবার ফোনে ধরার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে কলকাতার দুই প্রধান ছাড়া আই লিগের আর একটি দলকেই নেওয়া হবে। সেটা সুনীল ছেত্রীদের বেঙ্গালুরু এফ সি হবে বলে ধরে রাখা যায়। সেক্ষেত্রে লিগ হবে সাত মাসের। খেলবে এগারোটি দল।

আইএসএল যখন শুরু হয় তখন ফ্র্যাঞ্চাইজিদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল, এক শহর থেকে একটা টিমই নেওয়া হবে। চুক্তিপত্রেও সেরকম আছে। কিন্তু টুনার্মেন্টের আকর্ষণ বাড়াতে এবং কলকাতার দুই প্রধানের লাখ লাখ সমর্থককে মাঠে টেনে আনতে আইএসএলের চেয়ারম্যান নীতা অম্বানি প্রচন্ড আগ্রহী। তিন বছর টুনার্মেন্ট চালিয়ে তিনি বুঝেছেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগানকে না নিলে এদেশে যে কোনও টুনার্মেন্ট টিঁকিয়ে রাখা কঠিন। এ জন্যই গত বছর থেকে কাজ শুরু হয় সংযুক্তিকরণের।

বেঙ্গালুরুর কোনও টিম আইএসএলে নেই। ফলে তাদের নেওয়া নিয়ে সমস্যাও নেই। সমস্যা কলকাতার দুই প্রধানের খেলা নিয়েই। কারণ কলকাতার টিম হিসাবে খেলে আতলেতিকো দে কলকাতা। চুক্তি অনুযায়ী দুই প্রধানকে খেলাতে হলে এটিকের সম্মতি দরকারই। গুঞ্জন ছিল, এটিকে মালিক দুই প্রধানকে আইএসএলে নিতে আপত্তি জানাবেন। সেই ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন এটিকে প্রধান সঞ্জীব গোয়েন্কা। বরং এখন কলকাতার দুই বড় ক্লাবকে নিয়ে সহানুভূতিশীল তিনি। আনন্দবাজারকে তিনি মঙ্গলবার বলে দিয়েছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান ঐতিহ্যশালী টিম। লাখ লাখ সমর্থক। আমিই তো ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে ওদের খেলা দেখতে যেতাম। ওদের সঙ্গে আমার কোনও বিরোধ নেই।’’

তবে তিনি জানিয়েছেন তাঁর কাছে এখনও আইএসএলে কলকাতার টিম বাড়ানো নিয়ে কোনও প্রস্তাব লিগ কমিটির তরফে আসেনি। ‘‘প্রস্তাব না এলে কলকাতার দুই প্রধানের খেলা নিয়ে কোনও কথা বলব না। তবে এও বলছি, আমি যদি ওদের বিরোধী হতাম তা হলে মোহনবাগানকে রবীন্দ্র সরোবরে আমাদের তৈরি পরিকাঠামোয় আই লিগ খেলার অনুমতি দিতাম না।’’ ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগানের ২০১৭-র আইএসএলে খেলা নিয়ে মুখ না খুললেও এটিকে প্রধান বলে দিয়েছেন, ‘‘লিগে টিম বাড়ুক এটা চাই। সঙ্গে ফুটবলারদের দামও কমুক। বিশেষ করে বিদেশি ফুটবলারদের নির্বাচনের ব্যাপারে কয়েকটি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ হয়ে যাচ্ছে।’’

আর এসব কথাবার্তাতেই দুই প্রধানে বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে—আইএসএলের আড়ম্বরের আলো এ বারই তাদের ক্লাবেও আলো ছড়াবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন