ক্লাস: ফুটবলারদের নিয়ে চলছে ব্রাজিল কোচের বিশেষ সেশন। শনিবার যুবভারতীতে। নিজস্ব চিত্র
প্রকাশ্যে তিনি দাবি করছেন, তিন বছর আগে জার্মানির বিরুদ্ধে ১-৭ হার দলে প্রভাব ফেলবে না।
অথচ অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ কোয়ার্টার ফাইনালের চব্বিশ ঘণ্টা আগে হঠাৎ করেই বদলে ফেললেন স্ট্র্যাটেজি! তিনি— ব্রাজিল কোচ কার্লোস আমাদেউ।
দিনের বেলা অনুশীলন করাতে একেবারেই পছন্দ করেন না ব্রাজিল কোচ। তাঁর পছন্দ নৈশালোকেই প্রস্তুতি নেওয়া। কিন্তু দেখা গেল, শনিবার সকাল দশটায় বৃষ্টির মধ্যেই পাওলো হেনরিক সাম্পাইও ফিলহো (পাওলিনহো), লিঙ্কন ডস স্যান্টোস-দের নিয়ে জার্মানি বধের মহড়ায় নেমে পড়লেন কার্লোস। প্রথমে বোর্ডে ঘুঁটি সাজিয়ে বোঝালেন কী ভাবে জার্মানির পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে হবে। তার পর শুরু করলেন প্র্যাকটিস। ফরোয়ার্ড ও মিডফিল্ডারদের রাখলেন এক দলে। অন্য দিকে ডিফেন্ডাররা। জার্মানির ডিফেন্স ভেঙে গোল করার মহড়া চলল প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে।
আরও পড়ুন: জার্মান আক্রমণের সামনে বড় পরীক্ষা ব্রাজিল রক্ষণের
অনুশীলনের সময় বদলে ফেলার কারণ কী?
ব্রাজিল শিবিরের খোঁজ নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য উঠে এল।
অনুশীলনের সময় পরিবর্তনের নেপথ্যে কিন্তু কার্লোস নন। ছিলেন চিকিৎসক, ফিটনেস ট্রেনার, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং পুষ্টিবিদ!
শুক্রবার প্রাতঃরাশের পরেই সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন ব্রাজিল কোচ। জানতে চান, ফুটবলাররা কী অবস্থায় রয়েছে। ব্রাজিল শিবিরে প্রত্যেক দিনই একাধিক বার ফুটবলারদের নানা ধরনের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। এবং সমস্ত তথ্যই মজুত থাকে চিকিৎসক, ফিটনেস ট্রেনার ও ফিজিওথেরাপিস্টের ল্যাপটপে। বৈঠকে কোচকে তাঁরা রীতিমতো অঙ্ক কষে দেখিয়ে দেন, কোন ফুটবলার কতটা ক্লান্ত। এখানেই শেষ নয়। শারীরিক গঠন অনুযায়ী কোন কোন ফুটবলারের তরতাজা হয়ে ওঠার ক্ষমতা বেশি, সেটাও স্পষ্ট ভাবে কোচকে জানিয়ে দেন তাঁরা। পরামর্শ দেন, শনিবার সকালেই জার্মানি ম্যাচের প্রস্তুতি সেরে নেওয়ার। তাঁদের ব্যাখ্যা, নয়াদিল্লিতে কলম্বিয়াকে হারিয়ে জার্মানি কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিল গত সোমবার। আর কোচিতে হন্ডুরাসের বিরুদ্ধে ব্রাজিলকে খেলতে হয়েছিল তার দু’দিন পরে। ফলে জার্মানির ফুটবলাররা কোয়ার্টার ফাইনালের আগে পাঁচ দিন বিশ্রাম পাচ্ছে। কিন্তু অ্যালান সৌজা-দের দু’দিনের বেশি বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ নেই।
কিন্তু ব্রাজিল দল তো বৃহস্পতিবার বিকেলেই কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছিল। তা হলে? কার্লোসকে দলের চিকিৎসক ও ফিজিওথেরাপিস্ট বোঝান, কোচি থেকে বেঙ্গালুরু হয়ে কলকাতায় পৌঁছেছিল ফুটবলাররা। দীর্ঘ বিমানযাত্রায় ফলে তাদের ক্লান্তি আরও বেড়েছে। এই কারণেই সকালে অনুশীলন করা প্রয়োজন।
ব্রাজিল কোচ তা সত্ত্বেও অনুশীলনের সময় বদলাতে রাজি হচ্ছিলেন না। সাপোর্ট স্টাফরা তখন তাঁকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলেন, এমনিতেই ফুটবলাররা বিশ্রাম কম পাচ্ছে। ম্যাচের আগের রাতে অনুশীলন করলে ক্লান্তি আরও বাড়বে পাওলিনহো-দের। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের আগে কোনও ভাবেই ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়। শেষ পর্যন্ত সহকারীদের যুক্তি মেনে নেন কার্লোস।
রবিবাসরীয় যুবভারতীতে জার্মানির বিরুদ্ধে ম্যাচের আগে যে খুব একটা স্বস্তিতে নেই কার্লোস, সাংবাদিক বৈঠকেই স্পষ্ট। পাওলিনহো-কে পাশে বসিয়ে কার্লোস বললেন, ‘‘বিশ্ব ফুটবলের ক্লাসিকো হচ্ছে, ব্রাজিল বনাম জার্মানি। এই ম্যাচে দু’দলই জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামে।’’ জার্মানিকে হারাতে ব্রাজিল কোচের স্ট্রাটেজি কী? কার্লোসের জবাব, ‘‘ফুটবলারদের বলেছি, সমস্ত রকম পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে হবে। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে রাখার চেষ্টা করতে হবে।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘প্রত্যেকটা ম্যাচই আলাদা। ইউরোপের দলগুলো খেলে এক রকম ভাবে। আবার আফ্রিকার দলগুলোর খেলার ধরন আলাদা। আমরা সমস্ত রকম পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েই অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলতে এসেছি।’’