ব্রেথওয়েট হারালেন ব্রেথওয়েটকে

কী ভাবছেন? ইডেনে কেকেআরের টিকিটের কালোবাজারি দাম? পাঁচশোর টিকিট যেখানে পাঁচ হাজারে চলছে? না কি ভাবছেন রবিবাসরীয় ইডেনের জনসমুদ্রের ব্যালান্স শিট ফিগার ও সব? গুণে যা শেষ করা যাচ্ছে না, বারবার ভুল হচ্ছে এবং আবার গুণতে হচ্ছে?

Advertisement

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৬ ০৪:১৯
Share:

-এক ছক্কায় শেষ ব্রেথওয়েট। ইডেনে রবিবার।

এক, দুই, একশো, দু’শো, হাজার, পাঁচ হাজার, দশ হাজার, পনেরো হাজার...

Advertisement

কী ভাবছেন? ইডেনে কেকেআরের টিকিটের কালোবাজারি দাম? পাঁচশোর টিকিট যেখানে পাঁচ হাজারে চলছে? না কি ভাবছেন রবিবাসরীয় ইডেনের জনসমুদ্রের ব্যালান্স শিট ফিগার ও সব? গুণে যা শেষ করা যাচ্ছে না, বারবার ভুল হচ্ছে এবং আবার গুণতে হচ্ছে?

দুঃখিত, দু’টোর একটাও নয়। ইডেনে আজ টিকিট কালোবাজারি চলেছে, ভুলেও ভাবতে যাবেন না। এবং উইকএন্ড সন্ধের ইডেনের দিকে ধাবমান বঙ্গবাসীর মাথা গোনার প্রয়োজন এ দিন অন্তত পড়েনি। তবে পরপর প্রদেয় সংখ্যা যখন, হিসেব তো কিছুর বটে। বিষয় দুঃখজনক। কিন্তু কিছুর করার নেই।

Advertisement

ইডেনের শূন্য সিটের সংখ্যা ওগুলো। আইপিএলে কেকেআর নাইটের চোখধাঁধানো আতসবাজির মধ্যেও যা সময়-সময় বিষাদ উপহার দিয়ে গেল।

ভাবা যায়, ইডেনে গৌতম গম্ভীররা আইপিএল নাইনের দামামা বাজিয়ে দিল্লির ডেয়ারডেভিলদের ক্রমশ নির্বিষ করছেন, আর তা দেখছে কি না মাত্র তিরিশ হাজার দর্শক! সিএবি থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ গেট এন্ট্রির হিসেব এটা। মানে, সাতষট্টি হাজারের মধ্যে তিরিশ, অর্ধেকও নয়। ভাবা যায়, বারবার ‘করব, লড়ব, জিতব রে’ ম্যাজিক থিম প্রাণপণে বাজাচ্ছেন ইডেন ডিজে, কিন্তু নাচার লোক পাওয়া যাচ্ছে না! রাতে গম্ভীররা মহাসমারোহে প্রথম জয় সম্পন্ন করার পর দেখা গেল, গ্যালারির দিকে বেগুনি বেলুন ওড়ানো হচ্ছে। কিন্তু ওই বেলুন আজ ধরবে কে? ‘জিতব রে’-র সঙ্গে আজ নাচবে কে?

প্রেসবক্স থেকে সোজাসুজি, বাঁ দিক, ডান দিক, যে দিকে খুশি তাকালেই তো চলছে। যে ইডেন গ্যালারি দৃশ্যমান হচ্ছে বারবার, তার তূল্য উপমা অনায়াসে টানা যাচ্ছে। এ যেন এক ডিজাইনার বাইশ গজ। জায়গায়-জায়গায় যার ছুটকো ঘাস ছাড়া। বাকিটা? মরুভূমি!

মুখবন্ধ ছেড়ে মূল কাহিনিতে ঢোকা যাক। রবিবাসরীয় ইডেনে কার্লোস ব্রেথওয়েট সশরীরে থাকলেন। কিন্তু ইডেনে তাঁরই তৈরি চার ছক্কায় বিশ্বজয়ের হ্যাংওভারও চরম ভাবে থেকে গেল। আর তার প্রভাব এতটাই যে, দৃশ্য ব্রেথওয়েটও পারলেন না তাঁর অদৃশ্য ছায়ার সঙ্গে। কলকাতাবাসী তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রেথওয়েটকেই মনে রেখে দিল। দিল্লির ব্রেথওয়েটকে দেখতে এল না।

মাত্র সাতটা দিন, দু’টো রবিবারের গল্প। যে দু’টোকে মেলাতে বসলে ক্রমাগত ধাক্কা খেতে হবে। সাত দিন আগে, এই একই ইডেনে কাপ ফাইনাল দেখতে এসেছে ষাট হাজার দর্শক। সে দিন ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিল শহরের নিখাদ ক্রিকেট-প্রেমের, কারণ কোথাও সে দিন ভারত নামের কোনও টিম ছিল না। কপিল দেব গত কালও শহরে এক অনুষ্ঠানে এসে বলছিলেন যে, সেলাম আপনাদের শহরকে।

কপিল এ দিন ইডেনে ছিলেন না। কে জানে, থাকলে কী বলতেন! সাত দিনের মধ্যে যে দর্শকসংখ্যা সিএবিকে ইডেন উপহার দিয়ে গেল, তার পর বঙ্গ ক্রিকেট কর্তাদের মধ্যে বলাবলি চলল, বহু দিন আইপিএল ম্যাচে এমন ঘটেনি। যেখানে কেকেআর খেলছে, কেকেআর জিতছে, অথচ উপভোগ করার মতো পর্যাপ্ত সমর্থন নেই। শেষ মনে করা যাচ্ছে, ক্যাপ্টেন গম্ভীরের প্রথম কেকেআর মরসুমের প্রথম ম্যাচকে। যেখানে কোনও এক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে টিমে না রাখার প্রতিবাদে নীরব বিদ্রোহ দেখিয়ে গিয়েছিল ইডেন।

ওই শেষ। তার পর আজ, আবার। সত্যি। ক্লাবহাউসের আপার টিয়ারের সিঁড়ি ধরে নামলে তো আশেপাশে শূন্যতা ছাড়া আজ আর কিছু চোখে পড়ল না। কিংগ খান যে কর্পোরেট বক্সের বারান্দায় এসে দাঁড়ান, তার ঠিক নীচের গ্যালারিতে দেখা গেল মেরেকেটে গোটা পঞ্চাশ। একমাত্র ‘ডি’ এবং ‘ই’ ব্লক দেখে মনে হচ্ছিল, একটা ম্যাচ হচ্ছে।

কেউ কেউ বললেন, বাংলার বহু জায়গায় সোমবার নির্বাচন। বহু দর্শক তাই আসতে পারেননি। কেউ বললেন, এত গরম। লোকে বাড়িতে টিভির সামনে ঠান্ডা পানীয় নিয়ে বসে যে ম্যাচটা দেখতে পারবে, সেটা চল্লিশ ডিগ্রিতে ভাজা-ভাজা হয়ে দেখতে চাইবে কেন?

কিন্তু এ দু’টো অনু-কারণ হতে পারে। মূল নয়। সেটা এক এবং একমাত্র কাপ-হ্যাংওভার। যে শহর গত কুড়ি দিনের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান দেখেছে, বিরাট কোহালির ব্যাটিং-শৌর্য উপভোগ করেছে, ব্রেথওয়েটের চার ছক্কায় বিশ্বজয়ের ক্যালিপসো সঙ্গীত শুনেছে, তারা কয়েক দিনের মধ্যে নতুন কী আশ্চর্য প্রত্যাশা করতে পারে টি-টোয়েন্টি থেকে? মাঠ তো ফাঁকা থাকবেই। রাজভবনের ফুটপাথ দিয়ে হাঁটলে ‘দামেরটা দামে ছাড়ব’ শুনতে তো হবেই। টুর্নামেন্ট ব্রডকাস্টারদের লেন্স সেট করতে অসুবিধে তো একটু হবেই।

একমাত্র পারতেন শাহরুখ খান। পারতেন কাপ-মায়ার ঘোর কাটিয়ে নতুন মোহের টানে কলকাতাকে মাঠে নামাতে। কিন্তু এ দিন তো তিনিও ছিলেন না। পরেরটাতেও নেই।

কী করা যাবে? আসলে ক্রিকেটের মতো ক্রিকেট-দর্শকের আচরণও সময়-সময় বড় অদ্ভুত। পুরনো স্মৃতির ঘোর কাটিয়ে নতুনে মন বসাতে তারও সময় লাগে। তা সে যতই ঘরের টিম খেলুক। যতই সাত দিন আগে চার ছক্কায় পাগল করে দেওয়া ছেলেটা ফিরে আসুক।

মিস্টার কার্লোস ব্রেথওয়েট, আপনি ভাগ্যবান না ভাগ্যহীন, বলা মুশকিল। কিন্তু আপনি বোধহয় সেই কতিপয়ের এক, যিনি সাত দিনে দু’টো ইডেন দেখে গেলেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন