মত ১— গত বুধবার সিএবি-র ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বার্ষিক হিসাব আদৌ অনুমোদনই হয়নি।
মত ২— বুধবারের বৈঠকে বার্ষিক হিসাব পাস হয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যে পদ্ধতিতে বার্ষিক হিসাব পাস হয়, সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয়নি।
মত ৩— পদ্ধতি মেনেই বার্ষিক হিসাব পাস হয়েছে। না হলে ২৭ জুলাই বার্ষিক সভার তারিখ ঠিক হবে কী করে? আর তাতে কমিটির সবাই সম্মতি বা দেবেনই বা কী করে?
শুক্রবার সারা দিন ধরে এই তিনটে মতই ঘোরাফেরা করল বঙ্গ ক্রিকেট প্রশাসনের অন্দরমহলে। যার ফলে শহরের সারা দিনের আবহাওয়ার মতো অনিশ্চয়তার কালো মেঘে ঢেকে রইল ভারতীয় বোর্ড প্রেসিডেন্টের নিজের সংস্থার আকাশও। বঙ্গ ক্রিকেটের প্রশাসক মহলে যা নিয়ে এমন ভুল বোঝাবুঝির বাতাবরণ যে, বার্ষিক সভার আগে শেষ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বার্ষিক হিসাব আদৌ অনুমোদন হয়েছে কি না, তা নিয়েই সন্দেহ খোদ কমিটি সদস্যদের মনে।
প্রথম মত, রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী ও সিএবি-র ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। যা তিনি আগের দিনও বলেছিলেন এবং এ দিনও বললেন, ‘‘এমন বেআইনি, ভুলে ভরা বার্ষিক হিসাব কিছুতেই মেনে নেব না। তার জন্য যা করার করব।’’
দ্বিতীয় মত, ওয়ার্কিং কমিটির বহু সদস্যের, যাঁদের মধ্যে একজন তো শুক্রবার ক্লাব হাউসে বললেন, ‘‘হিসাব পাস হওয়ার জন্য তো প্রস্তাব ও তার সম্মতি দুটোই হওয়া দরকার। কিন্তু বুধবারের বৈঠকে সে সব কিছুই হয়নি।’’
প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন। এ দিন সন্ধেয় তিনি বলেন, ‘‘এই নিয়ে মন্তব্য করে আর বিতর্ক বাড়াতে চাই না।’’ সিএবি যুগ্মসচিব সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও এ নিয়ে কথা বলতে চাইলেন না।
তবে তাঁরা কিছু না বলতে চাইলেও তৃতীয় মতটা উঠে এল সিএবি শীর্ষ কর্তাদের পক্ষ থেকে। যা পরিষ্কার করে এ দিন অন্যতম যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোষাধ্যক্ষ সে দিন বার্ষিক হিসাব অনুমোদনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং সেই প্রস্তাব শিবব্রত দত্ত (ফ্রেন্ডস অ্যাথলেটিক ক্লাব) সমর্থনও করেছিলেন। কিন্তু পর মুহূর্তেই এক সদস্য উঠে দাঁড়িয়ে আলোচনাটা চালানোর কথা বলেন এবং তখনই সুব্রতবাবু অন্য এক অডিটরকে দিয়ে এই হিসাব ফের পরীক্ষার প্রস্তাব দেন। এই ঘটনার পর কী করে বলা সম্ভব হিসাব অনুমোদন হয়নি? আর যদি ওঁর মনে হয়, তা হয়নি, তা হলে উনি বার্ষিক সভার তারিখ ঘোষণাতেই বা রাজি হলেন কী করে?’’
যার পাল্টা জবাবে সুব্রতবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বার্ষিক সভা হবে কি না, বা কবে হবে, তা সিএবি-র ব্যাপার। এই নিয়ে আমি কেন বলতে যাব? তবে এই বেআইনি হিসাব বার্ষিক সভায় পেশ করা হলে তার প্রতিবাদ আমি করবই। দরকার হলে বার্ষিক সভায় যাওয়ার আগেই ব্যবস্থা নেব।’’ সেটা আইনি ব্যবস্থা কী না, তা অবশ্য বলতে চাননি সুব্রতবাবু। বলেন, ‘‘সময় হলেই জানতে পারবেন।’’
রাজ্যের মন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারিতে কিছুটা নরম সুর কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র গলায়। বললেন, ‘‘সুব্রতবাবু একজন ক্রীড়ামোদী মানুষ। তাই ওঁর প্রস্তাব আমরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখব।’’ এই বিতর্কের যবনিকা এখানেই নামে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন।