আহত আম্পায়ার। দোষী শাপোভালব। -রয়টার্স
‘আততায়ীর’র নাম ডেনিস শাপোভালব। বয়স মাত্র সতেরো। কানাডার টিনএজার। জুনিয়র উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন। তাঁর সৌজন্যেই ডেভিস কাপের ১১৭ বছরের ইতিহাস প্রত্যক্ষ করল কোনও টেনিস প্লেয়ারের নিষ্ঠুরতম প্রতিক্রিয়া। পয়েন্ট খুইয়ে, মেজাজ হারিয়ে, হঠাৎ সজোরে মারলেন প্রচণ্ড গতির শট। যে শটের লক্ষ্য নেটের ওপারে থাকা প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, স্বয়ং চেয়ার আম্পায়ার।
লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়নি। বলটা গিয়ে লাগল ফরাসি আম্পায়ার আর্নদ গাবাসের বাঁ চোখের নীচে। খেলা বন্ধ হল সঙ্গে সঙ্গে। স্বাভিবক কারণেই বিজয়ী ঘোষণা করা হল শাপোভালবের প্রতিপক্ষ ব্রিটেনের কাইল এডমন্ডকে। ৩-২ টাইও জিতে গেল কাইলের দেশ। আগামী এপ্রিলে ব্রিটেনের সামনে ফ্রান্স। আশা করা হচ্ছে কানাডা টাই না খেলা অ্যান্ডি মারেকে দেখা যাবে সেই ম্যাচে।
এ দিকে এত জঘন্য একটা কাণ্ড করে ফেলে শাপোভালব দৃশ্যতই ভেঙে পড়েন। ক্ষমা চাইতে ছুটে যান আম্পায়ারের কাছে। ততক্ষণে আম্পায়ারকে নিয়ে আয়োজকরা তড়িঘড়ি ছুটেছেন হাসপাতালে। পরে আইটিএফের লোকেরা জানিয়েছেন, আহত আম্পায়ারের চোখের পাশে কেটে গিয়েছে। মুখ ফুলেও আছে। অল্পের জন্য চোখটা বেঁচে গিয়েছে। আর কানাডা শিবিরের লোকজন, বিশেষ করে তাঁদের অধিনায়ক মার্টিন লরেডাউ বোঝাতে চেয়েছেন, আম্পায়ার না, শাপোভালব বলটা মারতে চেয়েছিলেন নেটে। হিসেবের গোলমালে জঘন্য দুর্ঘটনাটা ঘটেছে।
এ দিন টাই শেষে কার্যত কাঁদতে কাঁদতে শাপোভালব বলেছেন, ‘‘যা হয়েছে তার জন্য আমি ভীষণ রকম লজ্জিত। সত্যিই দারুণ অস্বস্তিকর একটা অবস্থায় পড়লাম। খারাপ লাগছে আমার দেশ আর টিমের কথা ভেবেও। আমার জন্যই ওদের মাথা নীচু হয়ে গেল। আম্পায়ার আর রেফারিদের কাছেও ক্ষমা চাইছি। স্বীকার করছি, ব্যাপারটা মেনে নেওয়া যায় না। এই ঘটনায় একটা বড় শিক্ষাও পেলাম। কথা দিচ্ছি, বাকি জীবনে কখনও এর পুনরাবৃত্তি হবে না।’’
ব্রিটেনকে বিজয়ী ঘোষণা করার আগে রেফারি বার বার ঘটনার স্লো-মোশনে রিপ্লে দেখেন। এই সময়টা কানাডার হাজার ছয়েক সমর্থক ব্রিটেনকেই টিটকিরি দিচ্ছিল। রিপ্লে দেখার পর রেফারি বোঝেন, দোষী শাপোভলবকে পরাজিত ঘোষণা করা ছাড়া অন্য কোনও রাস্তা নেই। আর বিজয়ী এডমন্ডের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ রকম কেউ করতে পারে ভাবতে পারিনি। ম্যাচে কিন্তু আমারই নিয়ন্ত্রণ ছিল। সার্ভিসগুলোও ঠিক ঠাক জায়গায় পড়ছিল। তাই এ ভাবে জিততে চাইনি। এ ভাবে জিততে ভালও লাগে না।’’
অতীতে যা ঘটেছে
• ২০১২ কুইন্স টুর্নামেন্ট। সার্ভ নষ্ট করে বিজ্ঞাপনের বোর্ডে সজোরে লাথি মারেন ডেভিড নলবনদিয়ান। যে বোর্ড ছিটকে গিয়ে লাগে লাইন জাজের পায়ে।
• ১৯৯৫ উইম্বলডন। টিম হেনম্যানের মারা বল গিয়ে লাগে বল গার্লের গালে। হেনম্যান বলেছিলেন, ভুল করে হয়েছে।
• গ্যালারিতে বল ছুড়ে বিতর্কে। কোনও বিশেষ টুর্নামেন্ট বা প্লেয়ার নয়, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়েছে। সবার উপরে নাম নোভাক জকোভিচের।