ইতিহাস ফেরাতে বড় ম্যাচ জিততে মরিয়া মহমেডান

দীপেন্দুর ‘হিরে’ কাটতে সেটপিস অস্ত্র ডিকাদের

ঠিক দু’ঘণ্টা পরে সল্টলেকে সাই ক্যাম্পাসে যখন ইস্টবেঙ্গল অনুশীলন শেষ হচ্ছে, তখন ফুটবলারদের মুখে কুলুপ। বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় প্রচারমাধ্যমকে এড়িয়েই বাড়ির পথ ধরলেন খাইমে সান্তোস কোলাদোরা।

Advertisement

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:২৫
Share:

কলকাতা লিগে ছয় গোল করা আর্থারেই ভরসা রাখছেন মহমেডান স্পোর্টিং টিডি দীপেন্দু। বৃষ্টি নষ্ট করেনি মেজাজ। খাইমে সান্তোস কোলাদো ( বাঁ দিকে) মেতে হোয়ানের সঙ্গে হাসিঠাট্টায়। নিজস্ব চিত্র ও সুদীপ্ত ভৌমিক

অঝোরে বৃষ্টির মধ্যে অনুশীলন শেষ করেই মহমেডানের দ্বিতীয় গোলকিপার শুভম রায়কে কাদায় ফেলে বাচ্চাদের মতো হাততালি দিচ্ছিলেন সাদা-কালো শিবিরের ভরসা আর্থার কোফি। যা দেখে হেসে ফেলেন মহমেডানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর দীপেন্দু বিশ্বাস। বলেন, ‘‘ছেলেরা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে। খোলা মনে ইস্টবেঙ্গল ম্যাচটা ওদের উপভোগ করতে বলেছি।’’

Advertisement

ঠিক দু’ঘণ্টা পরে সল্টলেকে সাই ক্যাম্পাসে যখন ইস্টবেঙ্গল অনুশীলন শেষ হচ্ছে, তখন ফুটবলারদের মুখে কুলুপ। বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় প্রচারমাধ্যমকে এড়িয়েই বাড়ির পথ ধরলেন খাইমে সান্তোস কোলাদোরা। কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেসের চোয়াল শক্ত। বলে দেন, ‘‘মহমেডানের আর্থার ভাল খেলছে। এর দাওয়াই, বৃহস্পতিবার ওদের চেয়ে একটা গোল বেশি করে মাঠ ছাড়া।’’

কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গল বনাম মহমেডান ম্যাচের আগের সকালে এটাই ছবি দুই শিবিরে। মহমেডানের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর দীপেন্দু যতটাই খোলামেলা, ঠিক ততটাই গম্ভীর ইস্টবেঙ্গল কোচ আলেসান্দ্রো। বৃহস্পতিবারের বড় ম্যাচ অনেকটাই ঠিক করে দিতে পারে এ বারের কলকাতা লিগ কাদের হাতে উঠবে। ১০ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে শীর্ষে রয়েছে মহমেডান। ৯ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত চতুর্থ ইস্টবেঙ্গল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার যুবভারতীতে ইস্টবেঙ্গলকে হারালেই লিগ খেতাবের দিকে অনেকটাই এগিয়ে যাবে মহমেডান। তার পরে শুক্রবার পিয়ারলেস বনাম রেনবো ম্যাচ বারাসতে ড্র হলে প্রায় চার দশকের কাছাকাছি সময় পরে অধরা কলকাতা লিগ খেতাব আসতে পারে মহমেডানে। অন্য দিকে, মহমেডানকে হারালেই ২০ পয়েন্টে পৌঁছে যাবে ইস্টবেঙ্গল। পিয়ারলেস যদি বাকি দুই ম্যাচে রেনবো বা জর্জ টেলিগ্রাফের কাছে পয়েন্ট নষ্ট করে, তা হলে শেষ ম্যাচে কাস্টমসকে হারালেই ইস্টবেঙ্গল কোচ হিসেবে তাঁর প্রথম ট্রফি শতবর্ষে সমর্থকদের উপহার দেবেন আলেসান্দ্রো। দুই কোচই তাই পাখির চোখ করছেন বৃহস্পতিবারের ম্যাচে। আর বৃহস্পতিবার ম্যাচ ড্র হলে সুযোগ বাড়বে পিয়ারলেসের। তাই ক্রোমাদের চোখও আজ বড় ম্যাচে।

দীপেন্দু বলছেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলকে হারাতেই হবে। তার পরে দেখা যাবে কী হয়।’’ আর আলেসান্দ্রো বলছেন, ‘‘মহমেডানের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট চাই। লিগ জেতার খুব কাছে রয়েছি আমরা। এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। এই ম্যাচটা জিতলে খেতাব জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে।’’

সেই ১৯৮১ সালের পরে কলকাতা লিগ আর আসেনি মহমেডান তাঁবুতে। সে বারের কলকাতা লিগে ১৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন ছিলেন মানস ভট্টাচার্য। তাঁকে ফোনে ধরা হলে বাটানগরের বাড়িতে বসে স্মৃতিচারণায় ডুব দেন তিনি। বলেন, ‘‘সে বার শেষ ম্যাচে রাজস্থানের বিরুদ্ধে আমরা ড্র করলেই মোহনবাগান চ্যাম্পিয়ন হয়ে যেত। শেষ মুহূর্তে আমি গোল করায় ১৪ বছর পরে লিগ পেয়েছিল মহমেডান।’’ যোগ করেন, ‘‘সে দিন গোটা পনেরো সোনার চেন ও গোটা দশেক দামি হাতঘড়ি উপহার পেয়েছিলাম। আট বছরের একটি বাচ্চা রাত ন’টা পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ছিল আমাকে আপেল উপহার দেবে বলে।’’ একাশির মহমেডান অধিনায়ক মইদুল ইসলামও হয়ে পড়েন স্মৃতিমেদুর। ৬৪ বছরের অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী বলছেন, ‘‘সে দিন রেড রোডে মহমেডান সমর্থকদের জনস্রোত নেমেছিল। ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে সেই দিনটা আবার ফিরিয়ে আনুক দীপেন্দুর ছেলেরা।’’

মহমেডান টিডি অবশ্য বিপক্ষকে সমীহ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আলেসান্দ্রোর মতো বড় মাপের কোচ, খাইমে সান্তোস কোলাদো, হোয়ান মেরার মতো ফুটবলার রয়েছে ইস্টবেঙ্গলে। তবে সল্টলেকে খেলা হওয়ায় আমাদের সুবিধা।’’

ইস্টবেঙ্গলে যখন অস্ত্র কোলাদো, হোয়ান মেরা, মার্তি ক্রেসপিরা, তখন মহমেডানের ভরসা আফ্রিকার ফুটবলার আর্থার, জন চিডি ও করিম ওমোলাজারা। লড়াইটা কি তা হলে স্পেন বনাম আফ্রিকার? প্রশ্ন শুনে আরও গম্ভীর হয়ে যান আলেসান্দ্রো। ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলেন, ‘‘আমাদের রক্ষণ কম গোল খেয়েছে। তাই আমার দলের বিরুদ্ধে দাপট দেখানো কঠিন।’’

মহমেডান শিবির সূত্রে খবর, মোহনবাগানের বিরুদ্ধে খেলা দলের উপরেই ভরসা রাখছেন দীপেন্দু। ইস্টবেঙ্গলকে হারাতে তাঁর অস্ত্র অমল দত্তের সেই ডায়মন্ড সিস্টেম। মহমেডান টিডি বলছেন, ‘‘অমল স্যরের ডায়মন্ড সিস্টেমে প্রেসিং ফুটবল খেলেই বাঙালি ছেলেরা চমকে দিয়েছিল। আমার দলেও সাত জন বাঙালি। ডায়মন্ড সিস্টেমেই খেলব ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। দেখিয়ে দিতে হবে বাঙালিরাও পাসিং ফুটবল খেলতে জানে।’’

ইস্টবেঙ্গল কোচ এ দিন মহড়া সারলেন বিপক্ষের ভিডিয়ো দেখে। তার পরে মাঠে নেমে হল সেটপিস অনুশীলন। বিপক্ষের জালে বল জড়াতে এটাই অন্যতম অস্ত্র ইস্টবেঙ্গলের। লালরিনডিকা রালতে ও হুয়ান মেরা কর্নার তুলছিলেন দুই প্রান্ত থেকে। সামাদ আলি মল্লিক ও পিন্টু মাহাতোরাও দুই প্রান্ত থেকে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন ক্রস। যা বিপন্মুক্ত করছিলেন মার্তি ক্রেসপিরা। সেই বল ধরে দ্রুত প্রতি আক্রমণে গোলের দরজা খোলার প্রস্তুতিও চলল। সূত্রের খবর, মহমেডানের আক্রমণ রুখতে মাঝমাঠে কাশিম আইদারাকে ফেরাতে চলেছেন আলেজান্দ্রো। বিদেশি কোলাদো, হোয়ান ও মার্তির মধ্যে বাছবেন বাকি দু’জনকে।

ইস্টবেঙ্গল কোচ বলছেন, ‘‘জিততে আমাদের হবেই।’’ যা শুনে ফুঁসছেন মহমেডানের আর্থার। লিগে ছয় গোল করা আইভরি কোস্টের ফুটবলার হুঙ্কার দিচ্ছেন, ‘‘৩৮ বছর পরে লিগ জেতাই স্বপ্ন। ইতিহাসের পাতায় নাম রাখতে চাই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গোল করে।’’

বৃহস্পতিবার কলকাতা লিগ: ইস্টবেঙ্গল বনাম মহমেডান (যুবভারতী, বিকেল ৩.০০)।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন