দিনের নায়ক।
লোকুগে দীনেশ চান্দিমল। গল টেস্টের আগে শ্রীলঙ্কার এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে বিশেষ কেউ চিনতেন কি না সন্দেহ। আর এ বার সেই চান্দিমলের হাত ধরেই গল টেস্টে ভারতের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াল শ্রীলঙ্কা। অবস্থা এমনই যে, লাঞ্চের আগে পর্যন্ত যে টেস্টে ইনিংস পরাজয়ের ভয় করছিলেন ম্যাথিউজরা, সেই টেস্টে জেতার স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছেন তাঁরা।
প্রথম টেস্টের আয়ু তিন দিন গড়াবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল দ্বিতীয় দিনের শেষেই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে যে প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল, শুক্রবার প্রথম সেশনের পর তা প্রায় পরিষ্কার হতে শুরু করেছিল। অশ্বিন-অমিতদের দাপটে লাঞ্চের আগেই মুড়িয়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার অর্ধেক লাইন আপ। ফিরে গেছেন সঙ্গাকারা, ম্যাথিউজ। সবাই যখন ভাবছে, বাকি কাজ শেষ করতে বেশি সময় লাগবে না ভারতীয় বোলারদের, তখনই চান্দিমলের আবির্ভাব। প্রথমে থিরিমানে এবং পরে জেহান মোবারককে সঙ্গী করে ৯৫/৫ থেকে দলকে নিয়ে গেলেন ৩৬৭-তে। নিজে অপরাজিত থেকে গেলেন ১৬২ রানে। আর ভারতের সামনে টার্গেট দাঁড়াল ১৭৬ রানের। দিনের শেষে লোকেশ রাহুলের উইকেট হারিয়ে ভারত ২৩/১।
ম্যাচে আগাগোড়া প্রাধান্য রাখলেও, তৃতীয় দিনের সকালটা কিন্তু ভালই ব্যাট করছিল শ্রীলঙ্কা। বা বলা ভাল সঙ্গাকারা-ম্যাথিউজ জুটি। বরুণ অ্যারনের প্রথম বলে নাইটওয়াচম্যান ধামিকা প্রসাদ আউট হতে দিনের প্রথম ওভারেই নামতে হয় শ্রীলঙ্কার অধিনায়ককে। ব্যাটিং দেখে মনেই হচ্ছিল না, জ্বরের জন্য গত কাল বেশির ভাগ সময় মাঠের বাইরেই থাকতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর সঙ্গে ‘তরুণ’ সঙ্গা পাল্টা আক্রমণ করতে থাকেন অশ্বিন-অমিতদের। শ্রীলঙ্কার সর্বকালের সেরা বাঁহাতি যেন ছিলেন পুরনো ছন্দে। বাউন্ডারিগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, গলে শেষ টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে বদ্ধপরিকর তিনি। ২০ ওভারে দু’জনের ৮৭ রানের পার্টনারশিপের ওইটুকু সময়েই সামান্য হলেও ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু হিসাবটা বদলে দিলেন অশ্বিন। ৪০ রানে সঙ্গাকারাকে আউট করলেন তিনি। কিন্তু এই উইকেটটা অশ্বিনের ঝুলিতে না ঢুকে রাহানের ঝুলিতে ঢুকলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্লিপে যে ক্যাচটা তিনি নিলেন, তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। পরের ওভারেই আউট ম্যাথিউজ।
বিদায় গল।
লাঞ্চের পর যেন বেড়িয়ে এল একেবারে অন্য শ্রীলঙ্কা। পজিটিভ ক্রিকেট খেলে চান্দিমলরা আক্রমণ ফিরিয়ে দিলেন অশ্বিন-অমিতদের দিকেই। থিরিমানের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ২৫ ওভারে যোগ করলেন ১২৫ রান। পরের উইকেটে মোবারকের সঙ্গে যোগ করলেন ৮২ রান। ১৬৯ বলে চান্দিমলের ১৬২ রানের ইনিংসে ছিল ১৯টি চার এবং চারটি বিশাল ছক্কা। টেস্টে এর আগে তিনটি সেঞ্চুরি আছে চান্দিমলের। প্রতিটিই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। আজ তাঁর দাপটে অমিত মিশ্র বাদে ওভার প্রতি চার দিলেন বাকি চার বোলারই। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও চার উইকেট নিয়ে টেস্টে দশ উইকেট নিলেন অশ্বিন। এবং ইনিংসে আটটি ক্যাচ নিয়ে এক ইনিংসে সর্বাধিক ক্যাচ নেওয়ার রেকর্ড করলেন আজিঙ্ক রাহানে।
তবে মাঠে অসামান্য পার্টনারশিপ করলেন নাইজেল লং আর ব্রুস অক্সেনফোর্ডের জুটি। বহু দিন বাদে এত খারাপ আম্পায়ারিং দেখা যাচ্ছে চলতি টেস্টে। ভারতের ব্যাটিংয়ের সময়ে একাধিক বিতর্কিত এলবিডব্লু, ঋদ্ধির হেলমেটে লেগে আউট হওয়া তো ছিলই, তার সঙ্গে যোগ হল এ দিন একাধিক আউট না দেওয়া। আম্পায়ারিং ঠিক হলে থিরিমানে বা চান্দিমল, ক্রিজে বেশি ক্ষণ থাকার কথা নয় কারওরই।
ছবি: এএফপি।