ইন্ডিয়ান ওপেনে অবশেষে শাপমুক্তি

অনির্বাণকে হারিয়ে ট্রফি ও মধুর বদলা চৌরাসিয়ার

রবিবাসরীয় বিকেলে দিল্লি গল্ফ ক্লাবে মুষ্ঠিবদ্ধ হাতটা আকাশে ছুড়ে দিলেন হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন গল্ফের নতুন চ্যাম্পিয়ন। সদর্প বিজয় ঘোষণায় যেন শাপমুক্তিও ঘটল শিবশঙ্কর প্রসাদ চৌরাসিয়ার!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৬ ০৩:১১
Share:

কাঙ্খিত ট্রফি হাতে শিবশঙ্কর।

রবিবাসরীয় বিকেলে দিল্লি গল্ফ ক্লাবে মুষ্ঠিবদ্ধ হাতটা আকাশে ছুড়ে দিলেন হিরো ইন্ডিয়ান ওপেন গল্ফের নতুন চ্যাম্পিয়ন। সদর্প বিজয় ঘোষণায় যেন শাপমুক্তিও ঘটল শিবশঙ্কর প্রসাদ চৌরাসিয়ার!

Advertisement

কলকাতার তারকা গল্ফার এর আগে চার-চার বার এই ট্রফিটা প্রায় মুঠোয় পুরতে পুরতেও শেষ পর্যন্ত রানার্সের সান্ত্বনা পুরস্কার নিয়ে ফিরেছিলেন। এ বার পঞ্চম চেষ্টায় ট্রফি এল তাঁর দখলে। তাও আবার গত বার নাটকীয় প্লে অফে যাঁর কাছে হেরেছিলেন, সেই অনির্বাণ লাহিড়ীকে শেষ রাউন্ডে রুখে দিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে।

স্বাভাবিক ভাবেই অসম্ভব উচ্ছ্বসিত শিবশঙ্কর। ট্রফি হাতে বলছিলেন, ‘‘আজ আমার স্বপ্নপূরণের দিন। চার বার রানার্স হওয়ার পর ভাবতে শুরু করেছিলাম এই খেতাবটা বোধ হয় আর কোনও দিনও জেতা হবে না। যেন এই টুর্নামেন্টটা আমার ফাঁড়া! আজ সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরে দুর্দান্ত লাগছে!’’

Advertisement

ইন্ডিয়ান ওপেনের শাপমুক্তি প্রাপ্তির ঘরও ভরিয়ে তুলল শিবশঙ্করের। যুগ্ম ভাবে ইউরোপীয় ও এশীয় ট্যুরের এই টুর্নামেন্ট জেতায় এই মরসুমের ইউরোপীয় ট্যুরের পুর্ণাঙ্গ কার্ড পেলেন সাঁইত্রিশ বছরের গল্ফার। সঙ্গে প্রায় ২ লক্ষ ৭৭ হাজার মার্কিন ডলারের বিজয়ীর চেক এশীয় ট্যুরের অর্ডার অব মেরিট তালিকায় তাঁকে আট থেকে তুলে আনল চতুর্থ স্থানে। শিবশঙ্কর নিজেও বলছিলেন, ‘‘আমার জন্য এই জয়টা খুব জরুরি ছিল। ইউরোপীয় ট্যুরের পুরো কার্ড আমার ছিল না। সেটার তো এলই। পাশাপাশি অলিম্পিক্স আর বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের দৌড়েও আশা করি অনেকটা এগিয়ে যেতে পারলাম।’’

অন্য দিকে, শেষ দিনের বার্ডির হ্যাটট্রিক দিয়ে শুরু করে মরিয়া চেষ্টাতেও খেতাব ধরে রাখতে পারলেন না অনির্বাণ। পিজিএ ট্যুর প্লেয়ার এ বছর এশীয় ট্যুরে বাছাই করা যে ক’টি টুর্নামেন্টে নামছেন, তার মধ্যে এটি অন্যতম। কোরিয়ার জিয়ুংহুন ওয়াংয়ের সঙ্গে যুগ্ম রানার্স হওয়া অনির্বাণ চ্যাম্পিয়নকে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, ‘‘এ বারও হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হল আমাদের। কিন্তু চাপের মুখে মাথা দারুণ ঠান্ডা রেখে লিডটা হাতছাড়া হতে দিল না এসএসপি। ভাল খেলে জিতে গেল।’’ দিল্লি গল্ফ ক্লাবে দশম স্থানে শেষ করলেন কলকাতার আর এক তারকা রাহিল গাঙ্গজি।

ইন্ডিয়ান ওপেনের আসরে ১৯৯৯, ২০০৬, ২০১৩ ও ২০১৫-য় ট্রফি অন্যের হাতে উঠতে দেখেছিলেন শিবশঙ্কর। সম্ভবত সেই স্মৃতির তাড়নাই শেষ রাউন্ডে খুব সাবধানী করে

তোলে তাঁকে। যেন কোনও ভুলভ্রান্তিকে কাছেই ঘেঁষতে দিতে নারাজ। বলেও ফেললেন, ‘‘আজ খুব নার্ভাস ছিলাম। চাপ কমাতে বারবার জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়েছি আর ছেড়েছি। মনটাকে সবকিছু থেকে সরিয়ে একাগ্র থাকার চেষ্টায়।’’

ওয়েল ডান এসএসপি। এ বছরও দারুণ টক্কর হল আমাদের। লড়ে জিতলে তুমি। তবে আমি কিন্তু পরের বছর আবার ফেরত আসছি!

টুইটারে অনির্বাণ

টুর্নামেন্টে প্রথম রাউন্ড থেকেই ছন্দে ছিলেন এ বার। তৃতীয় রাউন্ড শেষই করেন দু’শটের লিডে থেকে। তবে গত বছরও দুই শটে এগিয়ে শেষ রাউন্ড শুরু করে হারতে হয়েছিল। সেটা মাথায় ছিল শিবশঙ্করের। বলছিলেন, ‘‘এই সপ্তাহটা অনেক ক’টা কঠিন শট খেলেছি। তবু শেষ রাউন্ডে চাপে ছিলাম। নিজেকে বলি এ বার যে ভাবেই হোক জিততেই হবে।’’ ও দিকে আবার চার শটে পিছিয়ে থাকা অনির্বাণ বার্ডির হ্যাটট্রিক করে দিনের শুরুটা তুলকালাম করেন। ষষ্ঠ হোল-এই শিবশঙ্করকে ধরে পেলেন তিনি। দু’জনেই সমান সমান চলছেন, অন্য দিকে উঠে আসছেন ওয়াংও। লড়াইটা ক্রমশ কঠিন হচ্ছিল শিবশঙ্করের। কিন্তু অষ্টম হোল-এ বার্ডি এবং নবম হোলে অনির্বাণের বোগি দু’শটে এগিয়ে দেয় তাঁকে। ব্যাক নাইনে বোগি দিয়ে শুরু করেও দু’টি বার্ডি শেষ পর্যন্ত জয় এনে দেয় এ দিন এক-আন্ডার ৭১ স্কোর করা শিবশঙ্করকে। শেষ রাউন্ডে তিন-আন্ডার ৬৯ করেও যাঁর নাগাল পেলেন না অনির্বাণ। বললেন, ‘‘শুরুটা আমি দারুণ করলেও মাঝে খেই হারিয়ে ফেলি। সঙ্গে মাঝারি দূরত্বের কয়েকটা পাট মিস করায় লড়াই থেকে ছিটকে গেলাম।’’ শিবশঙ্করের মোট স্কোর পনেরো-আন্ডার ২৭৩। অনির্বাণের ১৩-আন্ডার ২৭৫। একই স্কোর ওয়াংয়ের।

তবু শেষ পর্যন্ত যে কেল্লাফতে হয়েছে, বিশ্বাসই হচ্ছিল না শিবশঙ্করের। স্কোরটা শোনার পর কয়েক মুহূর্ত থতমত দাঁড়িয়ে থাকেন। ততক্ষণে পিছন থেকে ছুটে এসে তাঁকে কোলে তুলে নিয়েছেন ক্যাডি। কোল থেকে নেমে মুষ্টিবদ্ধ হাতটা ছুড়ে দেন আকাশে। এর পর ছুটতে শুরু করেন স্কোরিং এরিয়ার দিকে। তাঁর পিছনে ছোটে মিডিয়া, অনুরাগী আর আলোকচিত্রীদের ভিড়। যে ভিড়টা গত বছর অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল অনির্বাণকে অনুসরণ করায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন