প্রস্তুতি ভাগীরথীতে। শুক্রবার বহরমপুরে।—নিজস্ব চিত্র।
ভাগীরথীর বুকে বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ ৮১ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতায় স্পেন ও তাইল্যান্ডের মোট চার জন প্রতিযোগী অংশ নেবেন। আগামী ২৭ অগস্ট জঙ্গিপুরের আহিরণ ঘাট থেকে বহরমপুর গোরাবাজার ঘাট পর্যন্ত ৮১ কিমির সঙ্গে জিয়াগঞ্জ সদরঘাট থেকে বহরমপুর গোরাবাজার ঘাট পর্যন্ত ১৯ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
আয়োজক মুর্শিদাবাদ সন্তরণ সংস্থার সহ-সভাপতি সুব্রতকুমার হালদার জানান, ৭৪ তম ওই সাঁতার প্রতিযোগিতার ৮১ ও ১৯ কিমিতে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ৭২ জন প্রতিযোগী অংশ নেবেন। তার মধ্যে ৮১ কিমিতে ১৮ জন এবং ১৯ কিমিতে পুরুষ বিভাগে ৪১ জন ও মহিলা বিভাগে ১৩ জন প্রতিযোগী রয়েছেন।
এ বছর ৮১ কিমিতে অংশ নেবেন স্পেনের তিনি জন প্রতিযোগী এবং ১৯ কিমিতে তাইল্যান্ডের এক জন প্রতিযোগী। ২০১৬ সালে প্রথম বার অংশ নিয়েই প্রথম হন স্পেনের জোস লুইস লারোসা। গত বার ৮১ কিলোমিটার পথ পার হতে তিনি সময় নেন ১০ ঘন্টা ৫৭ মিনিট ৪৫ সেকেন্ড। এ বছর তাঁর দেশের আরও দুজন সাঁতারু থাকছেন প্রতিযোগিতায়। সুব্রতবাবু জানান, স্পেন, তাইল্যান্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশের সাঁতারুরাও অংশ নেবেন। এছাড়াও রয়েছেন মহারাষ্ট্র, গুজরাত, কর্ণাটক, ত্রিপুরা, দিল্লি ও রাজ্যের বিভিন্ন সাঁতারু।
এলাকার যুবকদের সাঁতারে উৎসাহিত করতে বহরমপুরের মহারানি স্বর্ণময়ী সমিতি ১৯২৮ সালে ভরা বর্ষায় ভাগীরথীর বুকে সৈয়দাবাদ জলকল ঘাট থেকে কৃষ্ণনাথ কলেজ ঘাট পর্যন্ত দু’মাইল সাতাঁর প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বহরমপুরে সাঁতার প্রতিযোগিতার সেই শুরু। পরের বছর থেকে ওই প্রতিযোগিতার দূরত্ব বেড়ে তিন মাইল। কিন্তু ১৯৩২ সাল থেকে আচমকা ওই প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯৩৮ সালে বহরমপুরের ব্রহ্মপদ দত্তের ‘দত্ত ভবনে’ কয়েক জন যুবক একজোট হয়ে গড়ে তোলেন বহরমপুর সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন। ওই নতুন কমিটি ফের প্রতিযোগিতার সূচনা করে। কুঞ্জঘাটার জলকল থেকে কলেজ ঘাট পর্যন্ত ওই সাঁতার প্রতিযোগিতা শুরু হলেও ১৯৪১ সালে লালবাগ কোর্ট ঘাট থেকে কৃষ্ণনাথ কলেজ ঘাট পর্যন্ত সাত মাইলের প্রতিযোগিতা আয়োজন হয়।
১৯৪৪ সালে জিয়াগঞ্জ সদর ঘাট থেকে বহরমপুর কলেজ ঘাট পর্যন্ত ১৯ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতার সূচনা হয়। তারও পরে ১৯৬১ সাল থেকে জঙ্গিপুর সদর ঘাট থেকে গোরাবাজার ঘাট পর্যন্ত ৭৪ কিমি সাঁতার প্রতিযোগিতা আয়োজন করে বিশ্বের দীর্ঘতম সাঁতার প্রতিযোগিতায় নাম ওঠে। ১৯৬২ সালে সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন বেঙ্গল অ্যামেচার সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে হাত মেলানোর পরে সাঁতার প্রতিযোগিতার দূরত্ব বেড়ে ৮১ কিমি হয়। শুরুর দিন থেকে সাঁতার প্রতিযোগিতার দিন শহরের বিভিন্ন ঘাটে দর্শকদের ভিড়ও দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। তা এখনও বজায় রয়েছে।