মুডি প্রার্থী, লক্ষ্মণ তবে কেন বিচারক

মিটিংয়ে বসার আগে পর্যন্ত কমিটির সদস্যদের মাথায় ব্যাপারটা ছিল না। কিন্তু মিটিংয়ে সম্ভবত সব কিছু ঠিকঠাক এগোয়নি। সম্ভাব্য নাম নিয়ে একমত হতে পারেনি সদস্যরা।

Advertisement

অশোক মলহোত্র

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৭ ০৫:২২
Share:

সানরাইজার্স হায়দরাবাদের এই জুটি নিয়ে এখন শুরু হয়েছে বিতর্ক।

সোমবার সন্ধ্যায় যখন শুনলাম, ভারতীয় কোচের নাম ঘোষণা পিছিয়ে গিয়েছে, রীতিমতো অবাকই হলাম। এত ঢাকঢোল পিটিয়ে তা হলে কেন বলা হয়েছিল, মিটিংয়ের পরেই নতুন কোচের নাম জানিয়ে দেওয়া হবে?

Advertisement

আমরা মোটামুটি সবাই জানি, কোচের দৌড়ে রবি শাস্ত্রী বাকিদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। অন্তত সোমবার মিটিং শুরু হওয়ার আগে পর্যন্ত ছিল। তা হলে কেন এত টালবাহানা? যা মনে হচ্ছে, মিটিংয়ে কোনও কারণে রবির নামটা নিয়ে কমিটির সদস্যরা একমত হয়নি। আরও একটা-দু’টো নাম চলে এসেছে। তাই ওরা এখন বিরাট কোহালির কোর্টে বলটা ঠেলে দিচ্ছে। বিরাটের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপার যদি কমিটির কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়েই থাকে, তা হলে আগে একটা ফোন করে তো ভারত অধিনায়কের মতটা জেনে নেওয়া যেত।

আর ফোনের কথা বলছি কেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময়ও তো কথা বলে নেওয়া যেতে পারত। কমিটির তিন সদস্য— সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ভিভিএস লক্ষ্ণণ, তো ওই সময় ইংল্যান্ডেই ছিল। তা ছাড়া ভারতীয় বোর্ডের সিইও দিন কয়েক আগে ক্যারিবিয়ানে ঘুরে এলেন। উনি নিশ্চয়ই প্রাকৃতিক শোভা দেখতে যাননি। বিরাটের কাছ থেকে কিছু জানার থাকলে তো আগেই জেনে নেওয়া যেত।

Advertisement

আমার মনে হয়, মিটিংয়ে বসার আগে পর্যন্ত কমিটির সদস্যদের মাথায় ব্যাপারটা ছিল না। কিন্তু মিটিংয়ে সম্ভবত সব কিছু ঠিকঠাক এগোয়নি। সম্ভাব্য নাম নিয়ে একমত হতে পারেনি সদস্যরা। হয়তো শাস্ত্রীর নামটা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে টম মুডি বা বীরেন্দ্র সহবাগের নামও তুলে দিয়েছিল কমিটির কেউ কেউ। ফলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। যার জন্য বল বিরাটের কোর্টে ঠেলে দেওয়া হল। হয়তো বা ইঙ্গিতে বিরাটকে বুঝিয়ে দেওয়া হল, অনিল কুম্বলের মতো কোনও ঘটনা ঘটলে এ বার তার দায় তোমাকেই নিতে হবে।

তবে কোচ বাছাইয়ের এই গোটা প্রক্রিয়াটা এ রকম হাস্যকর ভাবে না হলেই ভাল হতো। কেন সাংবাদিক সম্মেলন করে বলতে হবে, আমরা বিরাটের সঙ্গে এ বার কথা বলব। আরে, তা হলে একেবারে দু’দিন বাদেই মিটিংটা করলে হতো। ও ক্যারিবিয়ান থেকে ফেরার পরে। ইন্টারভিউ নেওয়ার পাশাপাশি বিরাটের সঙ্গে কথাও বলে নেওয়া যেত।

আরও পড়ুন: ওয়াটার পোলোয় জিতে সোনার মেয়ে পূজা

কোচ নিয়ে এই রমরমা আমাদের সময় অবশ্য ছিল না। তবে এখনকার ক্রিকেটে কোচের প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই আছে। টেকনিক্যাল ব্যাপারে ক্রিকেটারদের সাহায্য করা থাকে, স্ট্র্যাটেজি তৈরি করার ক্ষেত্রে তো থাকেই। ফলে কোচ নিয়ে যত তাড়াতাড়ি এই নাটকের নিষ্পত্তি করা যায়, তত ভাল। না হলে খেলার ওপর প্রভাব পড়তেই পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে ভারত কিন্তু আশা অনুযায়ী ফল করতে পারেনি। একটা ওয়ান ডে ম্যাচ, একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ হারতে হয়েছে। আফগানিস্তান যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ান ডে-তে হারায়, তাদের কাছে কেন আমরা একটা ম্যাচও হারব?

রবিবার টি-টোয়েন্টিটাও খুব বিশ্রী হারল ভারত। যে এভিন লিউইস ছেলেটা সেঞ্চুরি করল, সে কিন্তু আগে ভারতের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করেছে। তাকে নিয়ে কি কিছু হোমওয়ার্ক করা হয়েছিল? খেলা দেখে মনে হয়নি। সঞ্জয় বাঙ্গার এখন দায়িত্বে। কিন্তু ও মূলত ব্যাটিং কোচ। চিফ কোচ কিন্তু আমাদের খুব দ্রুত বেছে নিতে হবে। না হলে আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফরেও সমস্যা আছে।

আর একটা কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। এই যে কমিটিটা কোচ বাছাইয়ের দায়িত্বে আছে, তাদের সদস্যরা সবাই এক প্রজন্মের। কেন কমিটিতে সুনীল গাওস্কর বা কপিল দেবকে রাখা হবে না? পাশাপাশি কমিটির সদস্যদের নিয়ে স্বার্থ সংঘাতের প্রশ্নও এসে পড়ছে। কেউ কমেন্ট্রি করছে, কেউ আইপিলের টিমের সঙ্গে জড়িত। ফলে কোচ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্ক সামনে চলে আসতেই পারে।

একটা উদাহরণ দিই। যেমন ভিভিএস লক্ষ্মণ। ও তো সানরাইজার্স হায়দরাবাদ টিমের সঙ্গে যুক্ত। যে টিমের কোচ মুডি। লক্ষ্মণের তো মনে হতেই পারে, মুডি কেন নয়?

ভারতের কোচ বাছাইয়ের এই নাটক যেন পুরোপুরি প্রহসণে না বদলে যায়, সেটা কিন্তু দেখতে হবে বোর্ডকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন