Arunlal

বাগান করা থেকে বই পড়া... কী ভাবে সময় কাটাচ্ছে করোনা আতঙ্কে গৃহবন্দি বাংলার ক্রিকেটমহল

করোনা আতঙ্কের মধ্যে কী ভাবে সময় কাটছে বাংলার ক্রিকেটারদের? কী ভাবছে বঙ্গ ক্রিকেটমহল? খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডিজিটাল।

Advertisement

সৌরাংশু দেবনাথ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ১৪:০৮
Share:

করোনার জেরে বাড়িতেই বন্দী অরুণলাল, সম্বরণ, রণদেব, অনু্ষ্টুপ, শিবশঙ্কররা।

চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি প্রায় গোটা বিশ্ব। স্তব্ধ জীবনযাত্রা। থেমে গিয়েছে স্বাভাবিক জীবন। খেলার দুনিয়াতেও পড়েছে তারই প্রতিফলন। একের পর এক ইভেন্ট পিছিয়ে যাচ্ছে বা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অলিম্পিক্স, ইউরো কাপ, কোপা আমেরিকা হবে এক বছর পরে। আইপিএল নিয়েও অনিশ্চয়তা বাড়ছে ক্রমশ। এই আবহে ঘরবন্দি বাংলার ক্রিকেটাররাও। কে কী ভাবে কাটাচ্ছেন সময়, খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডিজিটাল।

Advertisement

অরুণ লাল: বাড়িতেই থাকছি। গল্প করছি, টিভি দেখছি, বাগান করছি। আমার বাগান করার শখ রয়েছে। সে দিকে মন দিচ্ছি। সাফাইও করছি। এখন তো বাড়িতে বাইরের কেউ আসছে না। বাইরের সাফাই, ভিতরের সাফাই সব করতে হচ্ছে। এক সপ্তাহের মতো ওষুধ আছে। এখন দরকার নেই। তার পর গিয়ে আনতে হবে। আমি একদমই বের হইনি। ফলে জানি না আশপাশের মানুষ এটা নিয়ে কতটা সতর্ক।

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়: এটা অস্বাভাবিক একটা অবস্থা। এটা এমন যুদ্ধ, যেখানে কি না উল্টোদিকে কে আছে তা দেখা যায় না। আমরা যখন মাঠে নেমে টিম নিয়ে খেলি যখন বিপক্ষে যে-ই থাক, দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এটা অজানা শত্রু। ফলে, ডাক্তাররা যা বলছেন, সেটা মেনে চলতেই হবে। একশো বছরে এমন পরিস্থিতি আসেনি। আমরাই বোধ হয় একমাত্র ‘ভাগ্যবান’, যাঁরা নোটবন্দি ও ঘরবন্দি, দুটোরই সাক্ষী রইলাম। মানুষকে, বিশেষ করে গরিব মানুষকে ভাল করে বোঝাতে হবে যে, ঘর থেকে বেরনো ঠিক হবে না। তাঁদের দায়িত্ব সমান ভাবে নিতে হবে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারকে। এই মারণরোগ থেকে সবাই একজোট হয়ে বেরিয়ে আসতে হবে।

Advertisement

আমি সময় কাটাতে বিভিন্ন ধরনের বই পড়ছি। অনেক দিন পর ‘টাইগার্স টেল’ ঝালিয়ে নিলাম। পটৌঢির আত্মজীবনী। ফাটাফাটি বই। প্রসন্নর ‘আর্ট অফ স্পিন’ পড়লাম। বিশ্বকাপ ফুটবল সংক্রান্ত বইও পড়লাম। বিবেকানন্দ রচনাবলী একটু পড়লাম আবার। কিছু পুরনো লেখা পড়লাম। লেক গার্ডেন্সে আমাদের কমপ্লেক্সে জায়গা আছে। সেখানে ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করছি। এখানে লোকজনের মধ্যে মারাত্মক সচেতনতা। কাজের লোকের আসা বন্ধ। গাড়ি ধোয়ার লোক আসতে পারছে না। এখানে কাঁচামাল পাশেই সাউথ সিটি মলে পাওয়া যাচ্ছে। একটাই দোকান খোলা আছে ওখানে। আমাদের মতো লোকের মুশকিল হল, সময় কাটে না। ঘরে বসে থাকা খুব কষ্টের। বনধ দেখেছি, বাবরি মসজিদ পর্ব দেখেছি আমরা। কিন্তু এটা একেবারে অন্য রকম। ওই যে বললাম, এখানে প্রতিপক্ষকে দেখতে পাচ্ছি না। সেটাই সবচেয়ে বড় অসুবিধা।

আরও পড়ুন: করোনা-যুদ্ধে সাহায্য আফ্রিদির, টুইটারে প্রশংসা হরভজনের​

আরও পড়ুন: দুঃস্থদের পাশে সৌরভ, ৫০ লক্ষ টাকার চাল বিতরণ করবেন মহারাজ​

রণদেব বসু: সময় আর কাটছে কোথায়? রঞ্জি ফাইনালের পর দুই-তিনদিন একটু বিশ্রামেই ছিলাম বাড়ির সবাইকে নিয়ে। লকডাউনের আগে আমার শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে থাকার জন্য মেয়ে আমেয়াকে নিয়ে স্ত্রী চলে গিয়েছে ভবানীপুরে। আমি চেতলায় রয়ে গিয়েছি বাবা-মার কাছে। দুই বাড়িতেই আমরা দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিয়েছি। তবে মেয়েকে বড্ড মিস করছি। এমনিতেই বাইরে থাকি, মেয়েকে পাশে পাই না। এখন শহরে থেকেও ‘এয়া’ নামে মেয়েকে ডাকতে পারছি না। কী আর করা যাবে!

সমস্যা হল, বাবা-মার ওষুধ ফুরিয়ে যাচ্ছে। পাড়ায় একটা ওষুধের দোকান খোলা আছে। কিন্তু, সেখানে সব সময় এত ভিড়, এত লম্বা লাইন যে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। একটু টেনশনেই রয়েছি। রেস্তোঁরা সব বন্ধ। আর খোলা থাকলেও ভরসা করতে পারতাম না। যেখানে ভাগাড়ের মাংস বিক্রি হয়, সেখানে ভরসা রাখার জায়গাও নেই। তাই বাড়িতে সবাই মিলে কাজ করছি। আমি যেমন প্রন বানাচ্ছি আজ। আগেই বাজার করে নিয়েছিলাম। চিকেন, মাটন, মাছ ফ্রিজে রাখা আছে। কিন্তু ৩১ মার্চ অবধি ভেবে তা করেছিলাম। এখন তো প্রধানমন্ত্রী আরও বেশি দিন ঘরে থাকতে বলেছেন। খাবার, ওষুধ, বাচ্চার ডায়াপার, সবই এই মাস পর্যন্ত স্টক করেছিলাম। জনতা কার্ফু থেকে ধরলে প্রায় ২৫ দিন আমাদের লকডাউন। তাই সবদিকেই সমস্যা। ব্যাঙ্কের কাজকর্ম আর একটা মুশকিলের দিক। ৮২ বছর বয়সি বাবাকে ব্যাঙ্কে গিয়ে পেনশনের টাকা তুলতে হয়। তাঁরা অনলাইন ব্যাঙ্কিং পারেন না। আমার বাবা-মা, মাসি-পিসিরা অনলাইনে কাজ সারতে পারবেন না। আবার সিরিয়াল বন্ধ এখন, ফলে মায়ের অসুবিধা বাড়ছে। দেখি, মায়ের মোবাইলে সিনেমা চালু করে দেব। হেডফোন লাগিয়ে সিনেমা দেখবেন সন্ধেবেলা। বাবার সেই সমস্যা নেই, খবর দেখেন।

আজ থেকে ভাবছি সিঁড়িতে ওঠা-নামা করব। এই কয়েক দিন কিছু করিনি। ক্যালোরি খরচই হচ্ছে না। ফলে খিদে নেই। ব্রেকফাস্ট খেলে লাঞ্চ খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না। যা খাচ্ছি, সেটা শরীরে জমা হচ্ছে। একবার ভবানীপুরে যেতে হবে আমাকে। গাড়ি নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে চাইছি না। কেউ যদি একবার ইট মেরে কাঁচ ভেঙে দেয়, তার পর বুঝিয়ে আর কী হবে! তাই সাড়ে তিন, সাড়ে তিন, সাত কিলোমিটার হেঁটেই যাব। আমারও ওয়ার্কআউট হবে।

অনুষ্টুপ মজুমদার: শুয়ে-বসে-ঘুমিয়ে মেয়ের সঙ্গে খেলে সময় কাটছে। বই পড়ছি। নারায়ণ স্যানালের ‘বিশ্বাসঘাতক’ পড়ছি এখন। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘মিতিনমাসি’ শেষ করলাম। নেটফ্লিক্সে সিনেমা দেখছি। ছেলে ঋষিকের সঙ্গে খেলছি। ক্লাস ওয়ান হল। খুব দুষ্টু। যা করছে বাড়িতে! মাঝে মাঝে মনে হয় অন্য জায়গায় থাকলেই ভাল হয়!

আমরা সবাই বাড়িতেই থাকছি। এখন এই প্রকোপ থেকে ভাল ভাবে সবাই বেরিয়ে আসুক, এটাই চাইছি। টিভি দেখলেই টেনশন বাড়ছে। আজকেও দেখলাম এক জনের ধরা পড়েছে। আমি এক সপ্তাহ ধরেই চন্দননগরে রয়েছি। এখানে দোকানপাট অল্প সময়ের জন্য খুলছে। যদি কিছু কেনার দরকার পড়ে, তখন বেরতে হবে। না বেরিয়ে তো উপায়ও নেই তখন!

শিবশঙ্কর পাল: বাড়িতে যা বাজার করা আছে, তাতে কিছু দিন চলবে। তার পর লাগবে। জিনিসের দাম যা বেড়ে গিয়েছে, তার কোনও ঠিকঠিকানা নেই। আমি নিজেই যাই বাজারে। কাল গিয়েছিলাম। তেল ছিল না, নিয়ে এলাম। পেঁয়াজ-লঙ্কা নিলাম। বললাম, দশ কিলো আলু দিতে। দোকানদার বলল, টেনশন নেবেন না, ঠিক পেয়ে যাবেন পরে। চাল নেওয়া আছে অবশ্য। তবে, বাবা-মার ওষুধ লাগবে। যেখানে চার পাতা ওষুধ লাগার কথা, সেখানে আছে হয়তো এক পাতা। এত লাইন পড়ছে যে, ভাল লাগে না।

আমার পায়রা ওড়ানোর শখ। প্রচুর পায়রা আছে। প্রায় তিনশোটার মতো। প্রত্যেককে চিনতে পারি। ওদেরকে ওড়াচ্ছি সকাল-বিকেল-দুপুর, যখন ইচ্ছা হচ্ছে। ওরা বেশি দূর যায় না। ছাদের উপরেই ঘুরতে থাকে। মেয়ে সাদরীকে নিয়েও খেলছি। ওর বয়স সাড়ে পাঁচ। আমার সঙ্গে বিকেলে ছাদে ট্রেনিং করে, আঁকতে বসে, ব্যাডমিন্টন খেলে। বাড়িতে কাজের লোক আসছে না। সবাই হাত লাগাচ্ছি।

এটা যে কী রোগ, সেটা তো কেউ জানত না। এখন সবাই পরিষ্কার থাকায় জোর দিচ্ছে। হাত-পা ধোয়া, সতর্ক থাকে। বেলেঘাটা অঞ্চলে দেখছি, অনেকে আড্ডা দেখছি। ছাদ থেকে দেখে খারাপ লাগছে। এটা যে মহামারি, সেটা লোকে এখনও বুঝতে পারছে না। পুলিশ খুব ভাল কাজ করছে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। না হলে হবে না। কিছু লোককে বেরতেই হচ্ছে জিনিস কেনার জন্য। কিন্তু, চার-পাঁচ জন মিলে আড্ডা মারা বন্ধ করতে হবে। আমরা যদি সতর্ক না থাকি তবে পুলিশ বা প্রশাসন কিছু করতে পারবে না। আমাদের থেকে ইউরোপের দেশগুলো চিকিৎসায় অনেক এগিয়ে। কিন্তু ওরা তার পরও তেমন কিছু করতে পারছে না। সেখানে আমাদের এত বড় দেশ, এত কোটি মানুষ, সেখানে এটা যদি একবার ছড়িয়ে পড়ে তবে বিপদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন