আদালতের রায়ে বুক ফুলিয়ে ঘুরছেন শ্রীসন্তরা

মেয়ে আমার নাম গুগল করার আগে কলঙ্কমুক্ত হতে চেয়েছিলাম

পাটিয়ালা হাউস কোর্টে রায় ঘোষণা তখনও চলছে। আদালতের মধ্যেই স্বভাবসিদ্ধ কান্নায় ভেঙে পড়েন শান্তাকুমারন শ্রীসন্ত। কেরল পেসারের মতো অনায়াস নাটকীয় কান্নাকাটিতে অভ্যস্থ না হলেও ততক্ষণে চোখ ছলছল অঙ্কিত চহ্বণ আর অজিত চাণ্ডিলারও। কলঙ্কমুক্তির আনন্দে। আইপিএল স্পট ফিক্সিং মামলায় মকোকায় ধৃত বিয়াল্লিশ অভিযুক্তকে আদালত এ দিন বেকসুর খালাস দেওয়ার পর বেশ বুক ফুলিয়েই পাটিয়ালা হাউস কোর্ট চত্ত্বর ছাড়লেন রাজস্থান রয়্যালসের তিন ক্রিকেটার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৫ ০৩:৫৭
Share:

কোচিতে শ্রীসন্ত পরিবারে মিষ্টি বিতরণ।

পাটিয়ালা হাউস কোর্টে রায় ঘোষণা তখনও চলছে। আদালতের মধ্যেই স্বভাবসিদ্ধ কান্নায় ভেঙে পড়েন শান্তাকুমারন শ্রীসন্ত। কেরল পেসারের মতো অনায়াস নাটকীয় কান্নাকাটিতে অভ্যস্থ না হলেও ততক্ষণে চোখ ছলছল অঙ্কিত চহ্বণ আর অজিত চাণ্ডিলারও। কলঙ্কমুক্তির আনন্দে।
আইপিএল স্পট ফিক্সিং মামলায় মকোকায় ধৃত বিয়াল্লিশ অভিযুক্তকে আদালত এ দিন বেকসুর খালাস দেওয়ার পর বেশ বুক ফুলিয়েই পাটিয়ালা হাউস কোর্ট চত্ত্বর ছাড়লেন রাজস্থান রয়্যালসের তিন ক্রিকেটার। তিন জনেই বললেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্রিকেটে ফিরতে চান।
তবে আদালতের রায়ের পরেও আজীবন নির্বাসনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে না বলে ভারতীয় বোর্ড যে রকম কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তাতে শ্রীসন্তদের পক্ষে বাইশ গজে ফেরা কতদূর সম্ভব সেটা বড় প্রশ্ন। বোর্ডের নির্বাসনকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যাওয়ার একটা রাস্তা খোলা থাকছে। এ দিন তিন ক্রিকেটারের আইনজীবীই অবশ্য জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে সেই বিকল্প নিয়ে ভাবা হচ্ছে না। বরং, বোর্ড কর্তাদের মনোভাব ক্রমশ নরম হবে, এমনটাই প্রত্যাশা।
অজিত চাণ্ডিলা যেমন বলেছেন, ‘‘দারুণ স্বস্তি পেয়েছি। দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর পুরো আস্থা ছিল। আশা করি বোর্ড এ বার আমায় আবার ভারতের হয়ে খেলার অনুমতি দেবে।’’ বোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটিতে চাণ্ডিলার বিচার এখনও চলছে।
কালো শার্টে বুকে কৃষ্ণের ছবি আঁকা। ঝাঁকড়া চুল। বাঁ-হাতে ‘ভি’ দেখাতে দেখাতে আদালত প্রাঙ্গণেই শ্রীসন্ত আবার নাটকীয় ভাবে বললেন, ‘‘ক্রিকেট খেলার জন্যই জন্মেছি। গড়াপেটার অভিযোগ ওঠার পর থেকে আমার জাতীয় দলের জার্সি আর ক্রিকেট বুট পুজোর ঘরে রেখে দিয়েছিলাম। এ বার আবার ওগুলো পরব। প্রার্থনা করতাম, যাতে মেয়ে বড় হয়ে আমার নাম গুগল করার আগে আদালতে কলঙ্কমুক্ত হতে পারি। যাতে ও জানতে পারে ওর বাবা একজন ক্রিকেটার, কোনও সন্ত্রাসবাদী নয়।’’

Advertisement

গত ৯ মে বাবা হয়েছেন শ্রীসন্ত। যিনি আজ বাবা-মা ও স্ত্রীর সঙ্গে মেয়েকেও ধন্যবাদ দিলেন দুঃসময়ে পাশে থেকে শক্তি জোগানোর জন্য। মালায়লি পেসারের মা সাবিত্রী দেবী এবং বাবা শান্তাকুমারন গোটা মহল্লায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন। সাবিত্রী বলেন, ‘‘আর কোথাও খেলতে না পেয়ে বাড়ির উঠোনে ক্রিকেট খেলত শ্রী। দেখে কান্না পেত। তিহাড় জেল থেকে ফিরে ভয়ে কুঁকড়ে থাকত। তবে ওকে সব সময় বলতাম, সত্যিটা একদিন প্রমাণ হবেই। যাঁরা পাশে থেকেছেন, যাঁরা বিদ্রুপ করেছেন, সবাইকে ধন্যবাদ।’’ বাবা যোগ করেছেন, ‘‘ওর ভেতর এখনও অনেক ক্রিকেট বাকি। ও ফিরে আসবেই।’’ আর শ্রীসন্ত বলেছেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়ি প্র্যাকটিস শুরু করব। ভারতের জার্সিতে আবার খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে চাই। মনে হচ্ছে এখনই ছুটে জাতীয় স্টেডিয়ামে গিয়ে দৌড়নো শুরু করি।’’ হালফিল সিনেমায় অভিনয় করছেন। তবে শ্রীসন্তের বিশ্বাস, ফিটনেস ফিরে পেতে বোর্ডের সাহায্য পাবেন। বলেছেন, ‘‘অভিনয় করলেও আমি আগে ক্রিকেটার। আশা করি ফিটনেসে ফিরতে আমাকে বোর্ডের পরিকাঠামো আর সরঞ্জাম ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে। পুরো ফিট হয়ে আবার পুরনো ছন্দে আউটসুইঙ্গারগুলো করতে চাই।’’

ফরিদাবাদে টাকার মালায় বরণ চাণ্ডিলাকে।

Advertisement

২০১৩-র মে মাসে স্পট ফিক্সিং মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর তিহাড় জেলে তখন তিনি বন্দি। বিয়ে করার জন্য বিশেষ জামিন নিতে হয়েছিল অঙ্কিত চহ্বাণকে। আজ কলঙ্কমোচনের পর তাঁর মুম্বইয়ের বাড়িতে উৎসবের মেজাজ। আর দিল্লির আদালতে দাঁড়িয়ে ক্রিকেটার স্বীকার করেছেন, জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল ওটা। বলেছেন, ‘‘দু’টো বছর খুব কঠিন কেটেছে। ক্রিকেটারের কাছ থেকে ক্রিকেট কেড়ে নিলে কত কষ্ট হয় বোঝানো কঠিন। তিহাড় জেলে থাকতে হয়েছে। তবে জানতাম কোনও অপরাধ করিনি।’’ অঙ্কিত জানিয়েছেন নির্বাসনের কারণে ক্রিকেট জীবনের দু’টো বছর নষ্ট হলেও নির্বাসনের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়ে ভাবছেন না। বরং বলেছেন, ‘‘আশা করি এর পর বোর্ডও নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করবে। তবে যা-ই হোক, যত সময় লাগুক, ক্রিকেট মাঠে আবার ফিরে আসবই।’’

ছবি: পিটিআই

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন