কলকাতায় ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি

পটৌডি স্মারক বক্তৃতায় ওয়ালশ

ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি তাঁদের দিকে হাত নাড়লেন। গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে ফেললেন, ‘‘কলকাতা, আই লাভ ইউ। বার বার এখানকার ক্রিকেট প্রেমীদের ভালবাসা দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:২৩
Share:

আগমন: মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতা বিমানবন্দরে কোর্টনি ওয়ালশ।

বিমানবন্দরের গেট দিয়ে বেরনোর সময়েই লোকজনের ভিড় জমতে শুরু করে দিল। দীর্ঘকায় ক্যারিবিয়ান ফাস্ট বোলার যে এ শহরের ক্রিকেট ভক্তদেরও হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন।

Advertisement

ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি তাঁদের দিকে হাত নাড়লেন। গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে ফেললেন, ‘‘কলকাতা, আই লাভ ইউ। বার বার এখানকার ক্রিকেট প্রেমীদের ভালবাসা দেখে মুগ্ধ হয়েছি।’’ তিনি— কোর্টনি ওয়ালশ। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম পাঁচশো উইকেট নেওয়া বোলার। শেষ করেন ৫১৯ টেস্ট উইকেট এবং ২২৭ ওয়ান ডে শিকার নিয়ে। ফাস্ট বোলার হয়ে খেলেছেন সতেরো বছর ধরে। দু’ধরনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মিলিয়ে করেছেন চল্লিশ হাজার বল!

বিশ্ব ক্রিকেটের এমন এক মহীরুহ কলকাতায় এলেন ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ আয়োজিত টাইগার পটৌডি স্মারক বক্তৃতায় এ বছরের বক্তা হিসেবে। যৌথ আয়োজনে ‘দ্য বেঙ্গল ক্লাব’। ২০১২ সালে শুরু হওয়া টাইগার পটৌডি স্মারক বক্তৃতায় আগে এসেছেন ইমরান খান, গ্রেগ চ্যাপেল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, কপিল দেব-দের মতো তারকারা। ওয়ালশ প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান, যিনি এই বক্তৃতা দেবেন। ‘‘আমি সম্মানিত এখানে আসতে পেরে। টাইগার সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের এক জন,’’ বলে দিচ্ছেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি।

Advertisement

শ্রীলঙ্কার মাটিতে আসন্ন নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। বোলারদের নিয়ে আলাদা শিবিরও করছেন। শত ব্যস্ততার মধ্যেও এবিপি সংস্থার আমন্ত্রণে কলকাতায় এলেন। ক্রিকেট ভক্তরা তাঁকে মনে রেখেছেন নানা কারণে। কপিল দেবের ৪৩৪ উইকেটের বিশ্বরেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন তিনিই। সেই রেকর্ড ২০০৪ সালে ভেঙে দেন অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন।

‘দ্য টেলিগ্রাফ’ ও ‘দ্য বেঙ্গল ক্লাব’ আয়োজিত ‘পটৌডি স্মারক বক্তৃতা’ দিতে এলেন প্রাক্তন ফাস্ট বোলার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে বাইশটি টেস্টে অধিনায়কত্ব করা ওয়ালশ অবশ্য ক্রিকেট প্রেমীদের হৃদয়ে থেকে যাবেন মাঠে তাঁর ভদ্র ভাবমূর্তি ও স্পোর্টসম্যান-স্পিরিটের জন্য। ১৯৮৭ সালে ভারত-পাকিস্তানে আয়োজিত ক্রিকেট বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম পাকিস্তান ম্যাচ আজও লোকের মুখে মুখে রূপকথার মতো ঘোরে ওয়ালশের স্পোর্টসম্যান-স্পিরিটের জন্য। সেই ম্যাচ জিতলে শেষ চারে যাওয়ার দরজা খুলে যেতে পারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে। শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের দরকার ছিল ১৪ রান। ব্যাট করছিলেন আব্দুল কাদির। বোলার ছিলেন ওয়ালশ। শেষ বল করতে গিয়ে ওয়ালশ দেখেন নন-স্ট্রাইকার সেলিম জাফর ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। সহজেই সে দিন জাফরকে আউট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ম্যাচ জেতাতে পারতেন ওয়ালশ। কিন্তু ওয়ালশ তাঁকে ক্রিজে ফেরার সুযোগ দিয়ে ফের বল করতে যান। শেষ বলে রান নিয়ে পাকিস্তানকে জিতিয়ে সেমিফাইনালে পৌঁছে দেন কাদির। হেরে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু দুনিয়া জুড়ে ক্রিকেট প্রেমীদের হৃদয় জিতে নেন ওয়ালশ।

ইডেনে চারটি ওয়ান ডে খেলেছেন ওয়ালশ। তার মধ্যে নেহরু কাপ এবং সিএবি আয়োজিত হিরো কাপ রয়েছে। কলকাতায় এসে পুরনো সেই স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর। ওবেরয় গ্র্যান্ড হোটেলে ঢোকার মুখে বলে ফেললেন, ‘‘এখানেই তো আমরা থাকতাম কলকাতায় খেলতে এলে।’’ তার পরেই সংযোজন, ‘‘কলকাতার মানুষের ক্রিকেট নিয়ে অনুরাগ কখনও ভোলা যাবে না। রাতে মাঠ থেকে ফেরার সময়েও দেখেছি হোটেলের বাইরে মানুষের ভিড়। এই হোটেলেই এক বার আমার রুম ছিল রাস্তার দিকে। জানলা দিয়ে দেখেছিলাম, কত রাত পর্যন্ত রাস্তায় লোকে দাঁড়িয়ে ছিল ক্রিকেটারদের এক বার দেখবে বলে।’’ ইডেন মানে আরও একটা স্মৃতি ভেসে ওঠে তাঁর চোখের সামনে। ‘‘মাঠে কাগজ দিয়ে মশাল জ্বালানো। এখন তো গ্যালারিতে সে সব আর হয় না। সকলে দেখি মোবাইল টর্চ জ্বালায়।’’

ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন