Sri Lanka cricket

Cricket Sri Lanka: বিপুল আর্থিক সাহায্য বোর্ডের, ক্রিকেটের হাত ধরে অন্য খেলা বাঁচছে শ্রীলঙ্কায়

শুধু ক্রিকেট দল নয়, কমনওয়েলথ গেমসে শ্রীলঙ্কার গোটা দলের খরচই বহন করছেন ক্রিকেট কর্তারা। না হলে এ বারের গেমস থেকে দূরেই থাকতে হত শ্রীলঙ্কাকে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২২ ১৪:০০
Share:

প্রতিবাদের আবহেই নির্বিঘ্নে ক্রিকেট চলছে শ্রীলঙ্কায়। ছবি: এএফপি

বেহাল অর্থনীতি। অস্থির রাজনীতি। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। বিক্ষুব্ধ জনতা। দিশেহারা সরকার।

Advertisement

জ্বালানি তেল নেই। বিদ্যুৎ নেই। পর্যাপ্ত খাদ্য নেই। মানুষের হাতে অর্থ নেই। সরকারের আশ্বাসও নেই।

কিন্তু আছে ক্রিকেট। ক্রিকেট আছে বলেই রয়েছে আশা। আছে মানুষের আনন্দ। আছে শান্তি। ক্রিকেটের জন্যই আসন্ন কমনওয়েলথ গেমসে থাকছে শ্রীলঙ্কা।

Advertisement

স্বাধীনতার পর এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখি কখনও হয়নি শ্রীলঙ্কা। অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা, বিক্ষোভ, প্রতিবাদ—এই সব থেকে নিরাপদ দূরত্বে একমাত্র ক্রিকেট। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সিরিজের পর পাকিস্তানের সঙ্গে সিরিজ খেলছেন দিমুথ করুণারত্নেরা। গণবিক্ষোভের আঁচ থেকে এক মাত্র মুক্ত ২২ গজ। অজানা আশঙ্কায় রাতের পর রাত কাটানো শ্রীলঙ্কাবাসীর স্বস্তি, শান্তি, সুখ সব কিছুই এখন ক্রিকেটকে ঘিরে। না হলে কয়েক দশকের ‘শত্রু’ অস্ট্রেলিয়া দলকে গলের গ্যালারি ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা জানায় না।

ক্রিকেটের সঙ্গেই দেশের বিভিন্ন খেলাধুলো ধীরে হলেও এগোচ্ছিল শ্রীলঙ্কায়। বার্মিংহ্যাম কমনওয়েলথ গেমসে দেশের ইতিহাসে সব থেকে বড় দল পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলেন শ্রীলঙ্কা অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা। সেই মতোই এগোচ্ছিল সব কিছু। কিন্তু হঠাৎ করেই বেঁকে বসে শ্রীলঙ্কা সরকার। মাস খানেক আগে অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, কমনওয়েলথ গেমসে দল পাঠানো সম্ভব নয়। রাজকোষ বাড়ন্ত। যে পরিস্থিতিতে খেলাধুলোই বিলাসিতা, সেই পরিস্থিতিতে লন্ডনে দল পাঠানোর প্রশ্নই ওঠে না। এ সব এখন ভুলে যাওয়াই ভাল।

শ্রীলঙ্কার ক্রীড়া মন্ত্রকের কর্তাদের নিদানে স্বপ্নভঙ্গ হতে বসেছিল ক্রীড়াবিদদের। যাঁরা এত দিন ধরে রক্ত জল করা পরিশ্রমে প্রস্তুতি সেরেছেন। পদকের স্বপ্ন আঁকড়ে শ্বাস নিয়েছেন। এ ভাবে তীরে এসে তরী ডুবতে পারে ভাবতেও পারেননি তাঁরা। দ্বীপরাষ্ট্রের প্রায় শ’খানেক ক্রীড়াবিদের স্বপ্ন যখন ভারত মহাসাগরে সলিল সমাধি হওয়ার উপক্রম, তখনই উদ্ধার কর্তার ভূমিকায় উদয় হয়েছে ক্রিকেট শ্রীলঙ্কা।

ক্রীড়াবিদদের স্বপ্নপূরণ করতে শ্রীলঙ্কা অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনকে ২২ মিলিয়ন শ্রীলঙ্কার টাকা (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৯ লক্ষ টাকা) দিয়েছে ক্রিকেট শ্রীলঙ্কা। শুধু তাই নয়, পদক জিততে পারেন এমন কয়েক জন অ্যাথলিটকে আলাদা ভাবেও সাহায্য করেছে ক্রিকেট শ্রীলঙ্কা। কমনওয়েলথ গেমসে যাতে যোগ্যতা অর্জনকারী সব ক্রীড়াবিদ অংশ নিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন ক্রিকেট কর্তারা। প্রয়োজনে আরও অর্থ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের সাহায্য পেয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ম্যাক্সওয়েল ডিসিলভা।

কমনওয়েলথ গেমস দলের শ্যেফ দ্য মিশন দামপত ফার্নান্ডো বলেছেন, ‘‘এক মাস আগে সরকার আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছিল। খেলাধুলোর কথা ভুলে যেতে বলেছিল। ক্রিকেট বোর্ড পাশে না দাঁড়ালে ১১৪ জন ক্রীড়াবিদের স্বপ্ন শেষ হয়ে যেত। ক্রিকেট বোর্ডের দেওয়া অর্থেই সব খরচ সামলানোর চেষ্টা করছি আমরা।’’ এই কঠিন সময়ে সরকারের পক্ষে দল পাঠানো যে সম্ভব নয়, তা-ও এক রকম মেনে নিয়েছেন তিনি। ফার্নান্ডো আরও বলেছেন, ‘‘আমাদের ছোট দেশ। সকলেই সকলকে চিনি। এমন সঙ্কটের সময়ে ক্রিকেট বোর্ডের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে।’’

ক্রিকেট বোর্ডের দেওয়া টাকাতেই শ্রীলঙ্কা সরকার কমনওয়েলথ গেমসে অংশগ্রহণকারীদের বিমানের টিকিটের ব্যবস্থা করেছে। ফার্নান্ডো আরও বলেছেন, ‘‘বিলাসিতা করার সুযোগ আমাদের নেই। এ বার খেলোয়াড়দের তিনটি করে টি-শার্ট, একটি করে ট্র্যাক শুট এবং একটি করে ব্যাগ দিতে পারছি। নতুন জুতো বা অন্য কিছু দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সীমিত অর্থের মধ্যেই ক্রীড়াবিদদের যতটা সম্ভব স্বাচ্ছন্দ্য দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা।’’

শ্রীলঙ্কার অলিম্পিক্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল ম্যাক্সওয়েল বলেছেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনুশীলনে আসা-যাওয়ার জন্য আমরা গাড়ি দিতে পারছি না। জ্বালানি তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এক দিন অ্যাম্বুল্যান্স করে বক্সারদের নিয়ে যেতে হয়েছে। অধিকাংশই রোজ সাইকেল চালিয়ে অনুশীলনে আসছে। কোচ-কর্তারাও কেউ গাড়ি ব্যবহার করছেন না। তবে এই সঙ্কটের মধ্যেও খেলোয়াড়রা নিজেদের অনুশীলনে ডুবিয়ে রেখেছে। যতটা সম্ভব প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওদের জেদ সত্যিই প্রশংসা করার মতো। আশা করছি এ বার আমাদের পদক সংখ্যা বাড়বে। আমাদের মতো ছোট দেশের কাছে কমনওয়েলথ গেমসের গুরুত্ব অনেক।’’

পলাতক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। পরের দিন অজানা সিংহলিদের। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের সুরাহার জন্যও এগিয়ে এসেছে ক্রিকেট শ্রীলঙ্কা। সদ্য সমাপ্ত অস্ট্রেলিয়া সিরিজের লভ্যাংশ থেকে প্রায় ২০ লক্ষ শ্রীলঙ্কার টাকা (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা) সরকারকে দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করার জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন