Chris Gayle

১৪ বছরের বৈভব ভাঙতে পারে আমার ১৭৫ রানের রেকর্ড! বলে দিলেন ক্রিস গেল, অবসাদে চলে গিয়েছিলেন ‘ইউনিভার্স বস’

আইপিএলের মাঝে ব্যাগ গুছিয়ে দল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন ক্রিস গেল। প্রথম বার অঝোরে কেঁদেছিলেন তিনি। তবু এখনও আইপিএলে খেলার স্বপ্ন দেখেন ‘ইউনিভার্স বস’।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৩:৪৩
Share:

ক্রিস গেল। —ফাইল চিত্র।

মাঠ ও মাঠের বাইরে সব সময় সতীর্থদের সঙ্গে ঠাট্টা, ইয়ার্কি করতেই দেখা যায় ক্রিস গেলকে। জীবন উপভোগ করেন তিনি। সেই গেলই নাকি চলে গিয়েছিলেন অবসাদে। তা-ও আবার আইপিএল খেলতে এসে। কেরিয়ারের সেই কঠিন সময়ের কথা এত দিনে জানিয়েছেন গেল। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, আইপিএলে তাঁর করা ১৭৫ রানের রেকর্ড ভাঙতে পারে বৈভব সূর্যবংশী। শুভঙ্কর মিশ্রের এক পডকাস্টে নিজের দেশের ক্রিকেট নিয়েও মুখ খুলেছেন ‘ইউনিভার্স বস’।

Advertisement

আইপিএল কেরিয়ারের শেষ তিন বছর পঞ্জাব কিংসে খেলেছিলেন তিনি। ২০২১ সালে শেষ। তার পর আর ক্রোড়পতি লিগে দেখা যায়নি তাঁকে। পঞ্জাবের হয়ে শেষ বছরটা খুব খারাপ কেটেছিল তাঁর। গেল জানিয়েছেন, প্রীতি জ়িন্টার দল তাঁকে অসম্মান করেছিল। কেরিয়ারে কোনও দিন এতটা খারাপ অভিজ্ঞতা তাঁর হয়নি। গেল বলেন, “আমার আইপিএল কেরিয়ার শেষ হয়ে গিয়েছে। সেটা পঞ্জাবের জন্য। ওরা আমাকে অসম্মান করেছে। আমার মতো সিনিয়র এক জনকে বাচ্চা ছেলের মতো দেখত। ওরা আমার সঙ্গে কথাই বলত না। খেলার সুযোগ পেতাম না। জীবনে প্রথম বার অবসাদে চলে গিয়েছিলাম। ওই সময় টাকার কোনও গুরুত্ব আমার কাছে ছিল না। মানসিক শান্তি চাইছিলাম।” ২০২১ সালে কোভিডের মাঝে আইপিএল হয়েছিল। ফলে ক্রিকেটারদের অনেক সতর্কতা নিতে হত। খেলা বাদে বাকি সময় হোটেলেই কাটাতে হত। ফলে মানসিক ভাবে একটা চাপ ছিলই। গেল বলেন, “ওই সময় জৈবদুর্গের মধ্যে থাকতে হত। বেরাতে পারতাম না। মাথার মধ্যে অনেক কিছু চলত। ভিতরে ভিতরে ভেঙে পড়েছিলাম। মুম্বইয়ের সঙ্গে শেষ ম্যাচের পর আর থাকতে চাইছিলাম না। অনিলকে (তৎকালীন পঞ্জাব কোচ অনিল কুম্বলে) ডেকে বলেছিলাম, আমি এখান থেকে বেরাতে চাই। ওর সঙ্গে কথা বলার সময় কেঁদে ফেলেছিলাম। তখন লোকেশ রাহুল অধিনায়ক ছিল। ও আমাকে থাকতে বলেছিল। কিন্তু আমি ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম।” এখনও মনে কোথাও সেই দুঃখ রয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন গেল।

আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ৬৬ বলে ১৭৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন গেল। এখনও পর্যন্ত সেটা আইপিএলে এক ইনিংসে সর্বাধিক রান। গেলের মতে, সেই রেকর্ড যে কোনও দিন ভেঙে যেতে পারে। তাঁর মুখে উঠে এসেছে ১৪ বছরের বৈভবের নাম। গেল বলেন, “ওই রেকর্ড যে কোনও দিন ভাঙতে পারে। এখন দুর্দান্ত সব ব্যাটার। ১৪ বছরের একটা ছেলে এসেছে। বৈভব। কী অসাধারণ ব্যাট করে। কোনও ভয় নেই। ওর বয়সে তো আমি হাইস্কুলে ছিলাম। অনূর্ধ্ব-১৪ খেলতাম।” বৈভবের পাশাপাশি আরও চার জনের নাম করেছেন গেল। তাঁর মতে, এই চার জনেরও ক্ষমতা রয়েছে সেই রেকর্ড ভাঙার। তাঁরা হলেন, নিকোলাস পুরান, শুভমন গিল, যশস্বী জয়সওয়াল ও অভিষেক শর্মা।

Advertisement

আরও অনেক কিছু নিয়ে কথা বলেছেন গেল। সেই তালিকায় যেমন নিজের দেশের ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালবাসার কথা রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিরাট কোহলি ও এবি ডিভিলিয়ার্সের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ।

‘ওয়েস্ট ইন্ডিজ় হারলে আমিও হারি’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন দীর্ঘ দিন। কিন্তু এখনও ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের জার্সি গায়ে খেলতে ভালবাসেন। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অফ লেজেন্ডস-এ নিজের দেশে জার্সিতে দেখা যাবে গেলকে। তিনি বলেন, “ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের হয়ে খেলার থেকে গর্বের মুহূর্ত আমার কাছে কিছু নেই। অবসরের পরেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটের সঙ্গে জুড়ে আছি। দল হারলে আমিও হারি। দল জিতলে আমিও জিতি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ২৭ রানে অল আউট হয়ে গেলে মনে হয় আমিও ওই দলের সদস্য। এই অনুভূতি সারা জীবন থেকে যাবে।”

‘ইউনিভার্স বস’ নাম কে দিয়েছিল?

গেল জানিয়েছেন, তিনি নিজেই নিজেকে ওই নাম দিয়েছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের প্রাক্তন ক্রিকেটার বলেন, “আমাকে আগে ‘ওয়ার্ল্ড বস’ বলা হত। আমি ক্রিকেটে যা যা করেছি তা কেউ করেনি। আমি যে সাহস দেখিয়েছি তা কেউ দেখায়নি। তাই একটা সময় পর মনে হল ওয়ার্ল্ড-এর থেকে বড় কী? তখনই ইউনিভার্সের কথা মাথায় এল। নিজেকে ‘ইউনিভার্স বস’ বলা শুরু করলাম। আমার থেকে কেউ বড় নয়। আমিই সেরা।”

পানশালায় বসে ফোন পেয়েছিলেন বিজয় মাল্যের

২০১১ সালের আইপিএলের নিলামে প্রথমে দল পাননি গেল। পরে ডার্ক ন্যানেস চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু গেলকে পরিবর্ত হিসাবে নেয়। তবে তার নেপথ্যে রয়েছে এক মজার ঘটনা। গেল বলেন, “আমাকে যখন আরসিবি ফোন করে তখন আমি জামাইকার এক পানশালায় বসে। সেই সময় ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটে টালমাটাল অবস্থা। কিছু দিন আগে বিশ্বকাপে দলের ফল খারাপ হয়েছে। পরের দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ়ে আমাকে নেওয়া হয়নি। আমার হালকা চোটও ছিল। তাই ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েছিলাম। রিহ্যাব করছিলাম।” সেই সময় আরসিবির মালিক মাল্য ও তৎকালীন অধিনায়ক অনিল কুম্বলের ফোন পেয়েছিলেন গেল। তিনি বলেন, “সেই সময় ক্রিকেট খেলছিলাম না। মাল্য ও অনিল ফোন করে জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কি খেলার জন্য ফিট?’ আমি হ্যাঁ বললাম। তখন ওরা বলল, ‘কাল দূতাবাসে যাবে।’ পরের দিন শনিবার ছিল। বললাম, দূতাবাস বন্ধ থাকবে। ওরা বলল, ‘সেই চিন্তা করতে হবে না।’ দূতাবাসে গেলাম। ভিসা পেয়ে গেলাম। ভারতে চলে এলাম।”

প্রথম ম্যাচে ইডেন গার্ডেন্সে পুরনো দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে শতরান করেছিলেন গেল। পর পর দুই মরশুমে কমলা টুপি পেয়েছিলেন। সেই দু’বছর খেলা উপভোগ করেছিলেন গেল। তিনি বলেন, “যখন যোগ দিয়েছিলাম, আরসিবি পয়েন্ট তালিকায় সকলের শেষে ছিল। তাই আমার উপর চাপ ছিল না। মজা করে খেলেছিলাম। ফাইনালে উঠেছিলাম। চেন্নাইয়ের কাছে হেরেছিলাম। কিন্তু খুব মজা করেছিলাম সে বার। পরের বছরও উপভোগ করেছি।”

কোন বিশ্বকাপ জিতে বেশি আনন্দ পেয়েছেন?

২০১২ সালের বিশ্বকাপ জিতে বেশি আনন্দ পেয়েছিলেন গেল। সে বারই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তাঁরা। সেই বিশ্বকাপ জেতার নেপথ্যে আরও একটা কাহিনি রয়েছে। গেল বলেন, “সেই সময় বোর্ডের সঙ্গে গন্ডগোল চলছিল। তাই আমরা ক্রিকেটারেরা একটা দল হয়ে খেলেছিলাম। সকলকে জবাব দেওয়ার ছিল। সে বারই প্রথম গ্যাংনাম স্টাইলে নেচেছিলাম। তার আগে কেউ জানত না। আমিই ওই নাচ বিখ্যাত করেছি।”

প্রথম ব্যাটার হিসাবে সব ফরম্যাটে শতরান

প্রথম ব্যাটার হিসাবে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই শতরানের রেকর্ড রয়েছে গেলের। তিনি জানেন, কোনও রেকর্ডই অক্ষত থাকে না। কিন্তু এই রেকর্ড ক্রিকেটে অক্ষত থেকে যাবে। কারণ, তিনি প্রথম। সেই নজির কেউ ভাঙতে পারবে না।

আইপিএল ফাইনালে কাকে সমর্থন করেছিলেন?

গেল জানিয়েছেন, আরসিবি তাঁকে আমন্ত্রণ করেছিল। কিন্তু যে হেতু দু’টি দলই তাঁর পুরনো দল তাই বেঙ্গালুরুর জার্সি পরার পাশাপাশি পঞ্জাবের পাগড়িও পরে নিয়েছিলেন তিনি। তবে সেটা অনেকে ভাল ভাবে নেননি। গেল বলেন, “আরসিবির অনেকে বলেছিল, তুমি তো আমাদের সমর্থন করতে এসেছিলে। তা হলে পাগড়ি কেন পরলে? ওদের বলেছিলাম, আমি এ রকমই। আমি ইউনিভার্স বস। যে জিতবে তাকেই শুভেচ্ছা জানাব। আরসিবি যে ১৮ বছর পর জিতেছে তাতে খুব খুশি। বিরাট ট্রফি তুলেছে। সেটা খুব ভাল লেগেছে। ওর সঙ্গে কয়েকটা ফাইনাল খেলেছি। ডিভিলিয়ার্সও আমার মতোই খুশি হয়েছে।”

বিরাট ও ডিভিলিয়ার্সের সঙ্গে বন্ধুত্ব

দু’জনের সঙ্গেই খুব ভাল সম্পর্ক রয়েছে গেলের। খেলা ছাড়ার পরেও সেটা থেকে গিয়েছে। তবে বিরাটের দুই ফরম্যাট থেকে অবসর মেনে নিতে কষ্ট হয়েছে তাঁর। গেল বলেন, “বিরাট অনেক তাড়াতাড়ি অবসর নিয়ে নিল। জানি না কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ক্রিকেট ওর অভাব বোধ করবে। এখনও ওর মধ্যে অনেক ক্রিকেট বাকি। আমি ওর খেলা মিস্‌ করব।”

ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ক্রিকেটের হাল খারাপ কেন?

গেলের মতে পরিকাঠামোর অভাব। পাশাপাশি আইসিসি-কেও এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন তিনি। গেল বলেন, “আমাদের দেশেরে ক্রিকেটের পরিকাঠামো খারাপ। ক্রিকেটারদের দিকে আমরা নজর দিই না। ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার পরিকাঠামো ভাল। তাই ওদের ক্রিকেটের উন্নতি হচ্ছে। আমাদের দেশে কোনও পরিকাঠামোই নেই। তা হলে কী হবে? আর্থিক দিকটাও দেখতে হবে। আইসিসি-কে নজর দিতে হবে। টাকা দিতে হবে। তা হলে দেশের ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার কথা সকলে ভাববে না।”

প্রিয় ভারতীয় ক্রিকেটার সরফরাজ়

সরফরাজ় খানের হয়ে গলা ফাটিয়েছেন গেল। তাঁর মতে, ভারতের টেস্ট দলে খেলা উচিত সরফরাজ়ের। গেল বলেন, “ওর টেস্ট দলে জায়গা পাওয়া উচিত। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শতরান করেও বাদ পড়েছে। ওর একটা ভিডিয়ো দেখলাম। ওজন কমিয়েছে। তবে ওজনের জন্য ওর কোনও সমস্যা হত না। আমার মনে হয় ওর টেস্ট দলে খেলা উচিত। দুর্দান্ত ব্যাটার।”

ধোনির ২০২৬ সালের আইপিএল খেলা উচিত?

ধোনি নিজেও জানেন না কত দিন আইপিএলে খেলবেন। তবে গেলের মনে হয়, ধোনি যত দিন চাইবেন তত দিনই তাঁর খেলা উচিত। এত বছরে তিনি যে জায়গায় পৌঁছেছেন সেখানে ধোনির অবসর নিয়ে বাইরের কারও কথা বলা উচিত নয় বলেই মনে করেন তিনি।

সেরা আইপিএল একাদশ

ক্রিস গেল, বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, এবি ডিভিলিয়ার্স, লোকেশ রাহুল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, রবীন্দ্র জাডেজা, ডোয়েন ব্র্যাভো, সুনীল নারাইন, ভুবনেশ্বর কুমার ও জসপ্রীত বুমরাহ। রোহিত শর্মাকে রাখেননি গেল। তাঁর মতে, টপ অর্ডারে আর জায়গা নেই বলেই রোহিত বাদ পড়েছেন।

পছন্দের ফরম্যাট ও ক্রিকেট থেকে শিক্ষা

ছোট ফরম্যাটে একের পর এক বিধ্বংসী ইনিংসের পরেও গেলের পছন্দের ফরম্যাট টেস্ট ক্রিকেট। তিনি বলেন, “টেস্ট ক্রিকেট জীবনের শিক্ষা দেয়। খেলার বাইরেও মানসিক ভাবে তোমাকে তৈরি করে। আমাকেও ক্রিকেট মানসিক ভাবে শক্তিশালী করেছে। ক্রিকেট আমার জীবন। নতুনদের বলব, টেস্ট খেলো।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement