গৌতম গম্ভীর। —ফাইল চিত্র।
রাহুল দ্রাবিড়, চেতেশ্বর পুজারার পর এখনও পর্যন্ত টেস্টে নির্দিষ্ট তিন নম্বর ব্যাটার খুঁজে পায়নি ভারত। বিশেষ করে গৌতম গম্ভীরের জমানায় তো টেস্টের ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বর জায়গা ‘মিউজ়িক্যাল চেয়ার’-এ পরিণত হয়েছে। গম্ভীর কোচ হওয়ার পর ১৮ টেস্টে সাত জন ব্যাটার খেলেছেন তিন নম্বরে।
রাহুল দ্রাবিড়ের পর গম্ভীর যখন দায়িত্ব নেন তখন টেস্টে তিন নম্বরে খেলতেন শুভমন গিল। তিন নম্বরে সাতটি ম্যাচে ৩৩.৪২ গড়ে ৪০১ রান করেছেন তিনি। রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি অবসর নেওয়ার পর চার নম্বরে নেমে যান শুভমন। ফলে তিন নম্বর ফাঁকা হয়ে যায়। তার পরেই শুরু হয় ‘মিউজ়িক্যাল চেয়ার’।
শুভমনের পর থেকে ভারতের টেস্ট দলে তিন নম্বরে খেলেছেন সাই সুদর্শন, করুণ নায়ার, বিরাট কোহলি, দেবদত্ত পাড়িক্কল, লোকেশ রাহুল ও ওয়াশিংটন সুন্দর। সুদর্শন পাঁচ টেস্টে ৩০.৩৩ গড়ে ২৭৩ রান করেছেন। করুণ দু’টি টেস্টে ২৭.৭৫ গড়ে করেছেন ১১১ রান। বাকি প্রত্যেকে একটি করে টেস্ট খেলেছেন তিন নম্বরে। কোহলি ৩৫ গড়ে ৭০, পাড়িক্কল ১২.৫০ গড়ে ২৫, রাহুল ১২ গড়ে ২৪ ও ওয়াশিংটন ৩০ গড়ে ৬০ রান করেছেন। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, কেউ তিন নম্বরে থিতু হতে পারেননি। ফলে ভুগতে হয়েছে ভারতকে।
ইডেন টেস্টে ওয়াশিংটনকে তিন নম্বরে খেলানোয় গম্ভীরের সমালোচনা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। যেখানে এক জন বিশেষজ্ঞ ব্যাটার খেলানো উচিত, সেখানে কোন যুক্তি অলরাউন্ডার খেলাচ্ছেন গম্ভীর? কোচের অলরাউন্ডার প্রীতি সকলের জানা। দু’টি টেস্টেই চার জন করে অলরাউন্ডার খেলিয়েছেন তিনি। সেটা করতে গিয়ে ভুগছে ভারতের ব্যাটিং।
এক টেস্ট খেলিয়ে গুয়াহাটিতে আবার তিন নম্বরে খেলানো হয়েছে সুদর্শনকে। যদি তাঁকেই তিন নম্বরে খেলালেন তা হলে ইডেনে বসিয়ে রাখলেন কেন? গুয়াহাটিকে ওয়াশিংটনকে নামিয়ে দেওয়া হল আট নম্বরে। এক ধাক্কায় তিন থেকে আটে। গম্ভীরের এই পরিকল্পনা বুঝতে পারছেন না রবি শাস্ত্রী। তিনি বলেন, “এর কোনও মানে নেই। আমি বুঝতেই পারছি না কী পরিকল্পনায় এই সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ভাবতে বসলে কিছুই মাথায় আসছে না।” কয়েকটি যুক্তিও দিয়েছেন শাস্ত্রী। তিনি বলেন, “কলকাতায় চার জন স্পিনার খেলানো হল। তার মধ্যে এক স্পিনার মাত্র এক ওভার বল করল। সেখানে বিশেষজ্ঞ ব্যাটার খেলানো যেত। গুয়াহাটিতে আবার ওয়াশিংটনকে আট নম্বরে নামানো হল। তার থেকে ও ভাল ব্যাটার। ইডেনে তিন নম্বরে খেলালে গুয়াহাটিতে ওকে চার নম্বরে খেলানো যেত। তা হলেও এক জন বিশেষজ্ঞকে নেওয়া যেত। এ সব করতে গিয়ে ব্যাটিংয়ের ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে।”
টেস্টের ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পুরো ব্যাটিং নির্ভর করে তাঁর উপর। তিন নম্বর ব্যাটার রান করলে দলের সুবিধা। সেই কারণ দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটারকে সেখানে নামানো হয়। দ্রাবিড়, পুজারারা বছরের পর বছর ধরে এই কাজটা করেছেন। এখন সেটাই হচ্ছে না। তার ফল ভুগছেন গম্ভীর। ১৮ টেস্টে সাতটি জিতেছেন তিনি। হেরেছেন ন’টি। দু’টি টেস্ট ড্র হয়েছে। দেশের মাটিতে আট টেস্টের মধ্যে চারটি হেরেছেন তিনি। জিতেছেন চারটি টেস্ট। কোহলি-শাস্ত্রী জমানায় দেশের মাটিতে ৩১ টেস্টের মধ্যে মাত্র একটি হেরেছিল ভারত। গম্ভীর এর মধ্যেই তা ছাপিয়ে গিয়েছেন। গুয়াহাটিতে ভারত হারলে গম্ভীরের উপর চাপ কিন্তু আরও বাড়বে। সামলাতে পারবেন তো ভারতের কোচ!