গৌতম গম্ভীর। ছবি: পিটিআই।
ইডেন গার্ডেন্সের পিচের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে ক্রিকেটমহলে। ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্টের প্রথম দিন থেকেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে ইডেনের ২২ গজ। ভারত ৩০ রানে হারার পর সমালোচনা আরও তীব্র হয়েছে। ভারতীয় দলের কোচ গৌতম গম্ভীর অবশ্য সিএবির পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়ের প্রশংসা করেন ম্যাচ শেষ হওয়ার পরে। মঙ্গলবার ইডেনে ভারতীয় দলের অনুশীলনেও দেখা গিয়েছে তাঁদের হৃদ্যতার দৃশ্য। তবে অনুশীলনে গম্ভীরের বিপজ্জনক পদ্ধতি নতুন বিতর্কের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
রবিবার টেস্ট শেষ হলেও ভারতীয় দল কলকাতাতেই রয়েছে। দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে বুধবার দল নিয়ে গুয়াহাটি যাওয়ার কথা গম্ভীরের। সোমবার বিশ্রামের পর মঙ্গলবার ইডেনে অনুশীলন করেছেন সাই সুদর্শন, ধ্রুব জুরেল, আকাশ দীপেরা। এ দিন অবশ্য অনুশীলন বাধ্যতামূলক ছিল না। অধিকাংশই হোটেলে ছিলেন।
প্রথম টেস্টে হারের পর গম্ভীরের মুখে সুজনের প্রশংসা যে শুধু কথার কথা ছিল না, তার প্রমাণ পাওয়া গেল মঙ্গলবার। অনুশীলনের মাঝে সুজনের সঙ্গে বেশ কিছু্ক্ষণ হাসি মুখে কথা বলতে দেখা গিয়েছে গম্ভীরকে। পরস্পরকে জড়িয়েও ধরেছেন তাঁরা। সমাজমাধ্যমে সেই ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের পর গম্ভীর বলেছিলেন, তিনি যেমন পিচ চেয়েছিলেন, ইডেনে তেমন পিচই পেয়েছেন। সুজন যথেষ্ট সাহায্য করেছেন। হারের জন্য দলের খারাপ খেলাকে দায়ী করেছিলেন গম্ভীর। ক্রিকেটমহলের একাংশের চোখে ‘ভিলেন’ হয়ে যাওয়া সুজনের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন গম্ভীর।
অনুশীলনে সুদর্শন এবং জুরেলের দিকে বাড়তি নজর ছিল ভারতীয় দলের কোচের। এক পায়ে প্যাড পরিয়ে নেটে স্পিনারদের বিরুদ্ধে তাঁদের ব্যাট করান গম্ভীর। বাঁহাতি ব্যাটার সুদর্শনকে ব্যাট করান ডান পায়ের প্যাড না পরিয়ে। সে ভাবেই বাঁহাতি স্পিনার এবং অফ স্পিনারদের বিরুদ্ধে ব্যাট করেন সুদর্শন। স্পিন বল খেলার সময় তাঁর সামনের পা যাতে ঠিক জায়গায় যায়, তা নিশ্চিত করতে চাইছিলেন গম্ভীর। সুদর্শনকে অত্যন্ত সতর্ক হয়ে প্রতিটি বল খেলতে বাধ্য করেন গম্ভীর। ডানহাতি জুরেলের ক্ষেত্রেও ডান বাঁ পায়ের প্যাড খুলিয়ে দেন ভারতীয় দলের কোচ। তাঁকে রিভার্স সুইপ শট মারার অনুশীলন করান বেশ কিছুক্ষণ।
এই ধরনের অনুশীলন বেশ বিপজ্জনক। প্যাড ছাড়া ব্যাট করলে যে কোনও সময় চোট লাগার সম্ভাবনা থাকে। পায়ের হাড় ভাঙার ঝুঁকিও থাকে। আগে এ ভাবে অনুশীলনের চল থাকলেও আধুনিক ক্রিকেট কোচিংয়ে প্যাড না পরিয়ে ব্যাটিং অনুশীলন করানো হয় না। স্বভাবতই টেস্ট সিরিজ়ের মাঝে গম্ভীরের অনুশীলন করানোর পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নতুন বিতর্কের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
সুদর্শনের মধ্যে ব্যাকফুটে গিয়ে স্পিন বল খেলার প্রবণতা রয়েছে। সামনের পায়ে প্যাড না থাকলে, পিছনের পায়ে শট খেলা বা রক্ষণ করা কঠিন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের আগে গম্ভীর সম্ভবত তাঁর স্পিন খেলার প্রবণতা পরিবর্তন করতে চাইছেন। অন্য দিকে, জুরেলের রিভার্স সুইপ মারার দুর্বলতা হয়তো দূর করতে চাইছেন গম্ভীর।
দুই ক্রিকেটারের মধ্যে সুদর্শনকে নিয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন গম্ভীর। গুয়াহাটিতে শুভমন গিল খেলতে না পারলে প্রথম একাদশে ঢুকতে পারেন সুদর্শন। যদিও নেটে সুদর্শনকে দেখে খুব একটা খুশি হননি গম্ভীর। জোরে বোলারদের বল খেলতেও সমস্যায় পড়েন তিনি। আকাশের বেশ কয়েকটি বল তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক বা স্লিপে চলে গিয়েছে। নেট বোলারদের আউট সুইয়েও ঠিকমতো সামলাতে পারেননি সুদর্শন। এক সময় তাঁকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন গম্ভীর এবং ব্যাটিং কোচ শিতাংশু কোটাক।
ছ’জন ক্রিকেটারকে নিয়ে অনুশীলনে এসেছিলেন গম্ভীর। সিনিয়রদের মধ্যে ছিলেন শুধু রবীন্দ্র জাডেজা। তিনিও নেটে দীর্ঘ সময় ব্যাট করেছেন।