India VS England Test Series

ভারতের মান বাঁচালেন বুমরাহ, ক্যাচ ফস্কানোর রোগ সারল না যশস্বীদের, প্রশ্ন উঠছে শুভমনের অধিনায়কত্ব নিয়েও

জসপ্রীত বুমরাহের ৫ উইকেটে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৬ রানের লিড পায় ভারত। তৃতীয় দিনের শেষে ভারতের রান ৯০/২। শুভমন গিলেরা এগিয়ে ৯৬ রানে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৫ ২২:৪৩
Share:

তৃপ্তির হাসি। হেডিংলেতে ৫ উইকেট নেওয়ার পর জসপ্রীত বুমরাহ। ছবি: রয়টার্স।

জসপ্রীত বুমরাহ না থাকলে যে কী হত সেটাই ঘুরপাক খাচ্ছে ভারতের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। তিনি ছাড়া ভারতের এই বোলিং নির্বিষ। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ ও মহম্মদ সিরাজ মিলে ৫ উইকেট নিলেন ঠিকই, কিন্তু সেগুলো বেশির ভাগই ভাগ্যের জোরে। বড় শট মারতে গিয়ে ফিরলেন ইংরেজ ব্যাটারেরা। বোলারের কৃতিত্ব তাতে কম। কিন্তু বুমরাহ দেখিয়ে দিলেন, কেন তিনি টেস্টে বিশ্বের সেরা বোলার। যখনই বল করতে এলেন, সুযোগ তৈরি করলেন।

Advertisement

তবে একটা বিষয়ের বদল হল না তৃতীয় দিনেও। ভারতের ফিল্ডিং। বিশেষ করে ক্যাচ ফস্কানোর রোগ। গোটা ইনিংসে ছ’টা ক্যাচ ফস্কাল ভারত। তার মধ্যে চারটেই যশস্বী জয়সওয়াল। একটা করে রবীন্দ্র জাডেজা ও ঋষভ পন্থ। তার খেসারতও দিতে হল। বেন ডাকেটের ক্যাচ দু’বার পড়ল। তিনি করলেন ৬২ রান। ওলি পোপের ক্যাচও দু’বার ছাড়লেন ভারতীয় ব্যাটারেরা। তিনি করলেন ১০৬ রান। শূন্য রানের মাথায় হ্যারি ব্রুককে আউট করেছিলেন বুমরাহ। কিন্তু নো বল করে ফেলেন তিনি। পরে আরও দু’বার তাঁর ক্যাচ পড়ে। সেই ব্রুক করলেন ৯৯ রান। অর্থাৎ, ভারতীয় ফিল্ডারেরা ক্যাচগুলো ধরতে পারলে ছবিটা অন্য রকম হত। প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬ রানের লিড পেয়েছে ভারত। সেটা ১০৬ রানও হতে পারত। গত পাঁচ বছরে টেস্টের এক ইনিংসে এত ক্যাচ ছাড়েনি ভারত।

বেশির ভাগ ক্যাচ পড়েছে উইকেটের পিছনে। এই টেস্টে ভারতের স্লিপ ফিল্ডার বদলে গিয়েছে। গত কয়েক বছরে সেখানে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা থাকতেন। পাশাপাশি অজিঙ্ক রাহানে, চেতেশ্বর পুজারাকেও দেখা যেত। সেখানে এই টেস্টে লোকেশ রাহুল, শুভমন গিল, সাই সুদর্শন, যশস্বীরা দাঁড়িয়ে। রোহিত, কোহলিদের স্লিপ ফিল্ডিংয়ের অভাব বোধ হচ্ছে। দ্রুত সেই অভাব মেটাতে না পারলে পরের টেস্টগুলোতে আরও সমস্যা হবে ভারতের। ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ।

Advertisement

ইংল্যান্ডে সাধারণত পেসারেরা সুবিধা পান। কিন্তু বুমরাহ বাদে ভারতের পেসারদের দেখে তা মনে হল না। প্রসিদ্ধ ২০ ওভারে ১২৮ রান দিলেন। ওভার প্রতি ৬.৪০ রান। সিরাজ ২৭ ওভারে দিলেন ১২২ রান। ওভার প্রতি ৪.৫০ রান। দুই প্রধান পেসার এত খারাপ বল করলে বুমরাহ একা কী করবেন? চোট সারিয়ে ফেরার পর তাঁকে দিয়ে টানা বল করানো হচ্ছে না। চার ওভার বা পাঁচ ওভারের স্পেল করছেন। তার মধ্যেই উইকেট নিচ্ছেন। কিন্তু বাকিরা যদি তাঁকে সাহায্য না করেন, তা হলে বুমরাহও কিছু করতে পারবেন না। অন্য প্রান্ত থেকে দেদার রান দিলেন বাকিরা। ফলে ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের উপর চাপ পড়ল না। বুমরাহ উইকেট নিলেও রানের গতি কমল না।

তার মধ্যেই আরও এক বার ৫ উইকেট নিলেন বুমরাহ। কেরিয়ারে ১৪ বার এই কীর্তি তাঁর। তার মধ্যে ১২ বার বিদেশের মাটিতে। একমাত্র কপিল দেবের এই নজির রয়েছে। তাঁর বলে চারটে ক্যাচ পড়ল। সেগুলো ধরতে পারলে অনেক আগে ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ হয়ে যেত। তবু শেষ পর্যন্ত সেই বুমরাহই ইংল্যান্ডের ইনিংস শেষ করলেন। ২৪.৪ ওভারে ৮৩ রানে ৫ উইকেট নিলেন তিনি।

তৃতীয় দিন ইংরেজ ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল খেললেন ব্রুক। ক্যাচ মিস্‌ কাজে লাগালেন। কিন্তু ৯৯ রানের মাথায় পুল মেরে শতরান করতে গিয়ে আউট হলেন তিনি। ইংল্যান্ডের নীচের সারির ব্যাটারেরাও রান করলেন। ছোট ছোট জুটি ভারতকে সমস্যায় ফেলল। প্রথম ইনিংসে ভারতের শেষ ৭ উইকেট পড়েছিল ৪১ রানে। সেখানে শেষ ৭ উইকেটে ইংল্যান্ড করল ২৪০ রান। সেটাই সমস্যায় ফেলল ভারতকে।

প্রশ্ন উঠল শুভমন গিলের অধিনায়কত্ব নিয়েও। চতুর্থ পেসার হিসাবে খেলছেন শার্দূল ঠাকুর। গোটা ইনিংসে মাত্র ৬ ওভার করলেন তিনি। শার্দূল বোলার-অলরাউন্ডার। অর্থাৎ, বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটটাও করতে পারেন তিনি। নতুন বলে উইকেট নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে শার্দূলের। প্রস্তুতি ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন। সেখানে শার্দূলকে বলই দিলেন না শুভমন। প্রসিদ্ধ, সিরাজ উইকেট না পেলেও তাঁদের দিয়ে বল করিয়ে গেলেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণ বোঝা গেল না। যদি চতুর্থ পেসারকে বলই দেবেন না, তা হলে শার্দূলের বদলে নীতীশ রেড্ডিকে খেলাতে পারতেন তিনি। তা হলে অন্তত এতজন অতিরিক্ত ব্যাটার পেত ভারত। শুভমনের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেন সুনীল গাওস্কর, দীনেশ কার্তিকেরাও। পরিকল্পনায় কি ভুল করে ফেললেন ভারতের নতুন টেস্ট অধিনায়ক?

৬ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে নেমে ব্যর্থ যশস্বী। তাঁর মাথায় হয়তো ঘুরছিল ফস্কানো সেই চারটে ক্যাচ। ব্রাইডন কার্সের বলে খোঁচা মেরে ফিরলেন তিনি। সকলের নজর ছিল তিন নম্বরে নামা সাই সুদর্শনের উপর। দ্বিতীয় ইনিংসে ভাল দেখাল তাঁকে। প্রথম ইনিংসে শূন্য রান মাথা থেকে সরিয়ে নামেন তিনি। যে ৪৮ বল খেলেন, আত্মবিশ্বাসী দেখায় তাঁকে। শট মারতে ভয় পাননি। ৩০ রান করেন। কিন্তু আবার সেই লোভে পড়ে আউট হলেন তিনি। বেন স্টোকস আবার তাঁর প্যাডে বল করেন। মিড উইকেটে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন তিনি।

তবে ভাল দেখাল ভারতের অপর ওপেনার লোকেশ রাহুলকে। প্রথম ইনিংসেও শুরুটা ভাল করেছিলেন। ৪২ রান করে অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে আউট হন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি মনস্থির করে নেমেছিলেন যে বাজে শট খেলবেন না। তবে মারার বল ছাড়েননি। ভারতের এই ব্যাটিং আক্রমণে সবচেয়ে অভিজ্ঞ তিনি। ভারতকে জিততে হলে তাঁকে ভাল খেলতে হবে। তৃতীয় দিনের নির্ধারিত সময়ের পর বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আর খেলা শুরু করা যায়নি। দিনের শেষে ভারতের রান ২ উইকেটে ৯০। রাহুল ৪৭ এবং শুভমন ৬ রানে অপরাজিত রয়েছেন। ইংল্যান্ডের থেকে ৯৬ রানে এগিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করবে ভারত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement